এবার জয়পুরহাটে ‘রাজাকারপুত্ররা’ আ.লীগ প্রার্থী

মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধী শান্তি কমিটির দুই সদস্যের দুই পুত্র আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।

মোমেন মুনি জয়পুহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2016, 11:25 AM
Updated : 30 April 2016, 11:25 AM

তারা হলেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ৭১-এর ‘শান্তি ও প্রতিরক্ষা কমিটি’র সহ. সেক্রেটারি মৃত আজাহারুল ইসলাম তালুকদারের ছেলে বর্তমান চেয়ারম্যান আ ন ম শওকত হাবিব তালুকদার লজিক এবং একই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ‘শান্তি ও প্রতিরক্ষা কমিটি’র সদস্য মৃত মোহাম্মদ আলী ফকিরের ছেলে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস ফকির।

তারা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্য ও জেলা পরিষদ প্রশাসক সোলায়মান আলী ।

তাদের বাবা সেই সময় কী করেছে সেটা বিবেচ্য বিষয় নয় উল্লেখ করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা কী করছে সেই বিচারে তৃনমূলের সমর্থন থাকায় একটি গণতান্ত্রিক দল হিসাবে শওকত হাবিব তালুকদার লজিককে মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এবং আব্দুল কুদ্দুস ফকিরকে পুনট ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।”

প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনে অন্য কয়েকটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ‘রাজাকারপুত্ররা’ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনীকে সহায়তা দিতে এ দেশে ‘শান্তি ও প্রতিরক্ষা কমিটি’ গঠন করা হয়।

সে সময় বগুড়া জেলার ক্ষেতলাল থানার (বর্তমানে জয়পুরহাটের কালাই থানা ও উপজেলা) মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান শওকত হাবিব তালুকদার লজিকের বাবা মৃত আজাহারুল ইসলাম তালুকদার।

নথিতে দেখা যায়, যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি শান্তি ও প্রতিরক্ষা কমিটির সহ. সেক্রেটারির দায়িত্বও পালন করেন। ওই কমিটিরই অন্যতম সদস্য পদে ছিলেন আব্দুল কুদ্দুস ফকিরের বাবা পুনট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত মোহাম্মদ আলী ফকিরও।

আওয়ামী লীগের কাছে শান্তি কমিটির সদস্যদের এই দুই পুত্রকে মনোনয়ন না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে এলাকায় এর আগে সংবাদ সম্মেলন হয়। পরে এদের মনোনয়ন না দিতে গত ১৭ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দলের একটি অংশ আবেদনও করে।

আবেদনকারীরা জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীতাকারী কোনো রাজাকার ও তার সন্তানরা নৌকা প্রতীক পাবে না মর্মে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও মাত্রাই ও পুনট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ‘দুই রাজাকারপুত্র’ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ায় তারা হতাশ হয়েছেন।

অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীদ্বয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে দাবি করেন, ১৯৭১ সালে যারা চেয়ারম্যান ছিলেন কমবেশি তাদের প্রায় সবাইকেই পাকিস্তানের সেনা প্রশাসন জোর করে শান্তি ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করেন।

‘আর যারা তাদের কথা মত ওই কমিটিতে থাকতে অস্বীকার করেছিলেন তাদের এলাকায় নেমে আসে চরম নির্যাতন। তাই নিজেদের এলাকা পাক হানাদারদের অত্যাচার থেকে বাঁচাতে এই পথ বেছে নেন।’ 

বাবা শান্তি কমিটিতে থাকলেও রাজাকার ছিলেন না দাবি করে লজিক বলেন, “রাজাকার, আল বদর বা আল সামস্ এর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে স্বাধীনতা বিনষ্টের জন্য যুদ্ধ, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজসহ পাক হানাদারদের সহায়তা করেছিল। সেই সব রাজাকারদের বিচার আমরাও চাই।”

বাবার অপরাধে ছেলের শাস্তি হবে এটা কোন বিধানে আছে প্রশ্ন করে চেয়ারম্যান প্রার্থী লজিক জানান, তিনি ছাত্র জীবনে ১৯৯০ সাল থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি, তারপর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

“এ ছাড়া দলীয় কর্মকাণ্ড ও এলাকার নানা সমাজ সেবামূলক কাজের পুরষ্কার হিসাবে জনগণ আমাকে গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী করেছেন। এই ধারা অব্যাহত রাখতে দল আমাকে আবারও মনোনয়ন দান করেছে এবং জনগণ আমাকে আবারও বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন বলে বিশ্বাস করি।”

একই সুরে কথা বলেন পুনট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস ফকির।

তিনি বলেন, “কে রাজাকার, কে আল-বদর আর কে আল-সামস্ এর অর্থ আগে বোঝেন, সকল পিস কমিটির সদস্যই যে রাজাকার হবে তা কে বলেছে ? আমার বাবা সেই সময় পিস কমিটিতে ছিলেন বলে হানাদার বাহিনী এলাকায় কোনো ক্ষতি করেনি। সেই সময় পিস কমিটির সদস্য হওয়ার কারণে আমার ও লজিকের বাবা এই এলাকার অনেক মুক্তিযোদ্ধারও জীবন বাঁচিয়েছেন। এটা কীভাবে বিচার করবেন?

“জীবনের শুরু থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় এর আগেও একবার নির্বাচিত হয়েছি। সুতরাং এবারও জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগণের পাশে থাকব।”

এ ব্যাপারে জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদু মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, “আমি অসুস্থ, তাই ছুটিতে আছি।”