পাপমুক্তির বাসনায় লাঙ্গলবন্দে লাখো পুণ্যার্থী

যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে অষ্টমী স্নানে যোগ দিয়েছেন হিন্দু ধর্মের পুণ্যার্থীরা।

মজিবুল হক পলাশ, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 April 2016, 08:47 AM
Updated : 14 April 2016, 08:47 AM

বুধবার রাত ৩টা ৩৪ মিনিট ৩২ সেকেন্ডে স্নানের লগ্ন শুরু হয়। স্থায়ী হবে বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৪৭ মিনিট ৫ সেকেন্ড পর্যন্ত। 

তবে পুণ্য স্নানের মুখ্য সময় হচ্ছে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ২৯ মিনিট থেকে ৯টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত।

সকালে ফুল, বেলপাতা, ধান, দূর্বা, হরতকি, ডাব, আম্রপল্লবসহ মন্ত্র পাঠ করে স্নান করেছেন পুণ্যার্থীরা।

বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটানসহ অন্যান্য দেশ থেকে এখানে পুণ্যার্থীরা আসেন বলে আয়োজকরা জানান।

গতবছর পদদলিত হয়ে হতাহতের প্রেক্ষিতে এবার প্রশাসন নিরাপত্তায় ব্যাপক প্রস্তুতির নেওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে ব্যবস্থাপনার কয়েকটি বিষয়ে পুন্যার্থীদের অসন্তোষ থেকে গেছে।

স্নান উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা এফবিসিসিআই পরিচালক প্রবীর কুমার সাহা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গতবারের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেইজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

“ঘাটগুলোকে সংস্কার করা হয়েছে। রাজ ঘাট, গান্ধী ঘাট, অন্নপূর্ণা ঘাট, প্রেমতলাসহ ১৩টি ঘাটে স্নান হয়।”

এবারের স্নানে দেশ-বিদেশের ১০ লাখের বেশি পুণ্যার্থী অংশ নেওয়ার আশা করছেন প্রবীর সাহা।  

চট্টগ্রামের হালিশহর থেকে আসা মালতী রাণী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি এবার প্রথম স্নানে এসেছেন। স্নানের আয়োজনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, সেতুটি এখনও শেষ হয়নি। সড়কের মেরামত এখনও বাকি। এছাড়া মহিলাদের কাপড় বদলানোর জায়গা ছিল খুবই কম।

তবে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ভালো ছিল বলে মনে করেন তিনি।

দেবতা পরশুরাম তার বাবার আদেশে মাকে কুঠারের আঘাতে হত্যা করেন। মাতৃহত্যার পাপে তার হাতে কুঠারটি লেগে যায়।

পরে পাপ মোচনের জন্য পরশুরাম হিমালয় থেকে নিজ হাতের কুঠারটি লাঙ্গল বানিয়ে চষে পাহাড়-পবর্ত দিয়ে বর্তমান লাঙ্গলবন্দ এলাকায় এসে পৌঁছলে কুঠার হাত থেকে পড়ে যায় এবং এরপর ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করে পাপমুক্ত হন তিনি।

এরপর থেকে এই ব্রহ্মপুত্র নদের লাঙ্গলবন্দ তীর্থ স্থান হিসেবে পরিচিত পায়।

সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পাপ মোচনের বাসনায় ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করেন বলে জানান পূজারী রবীন্দ্র চন্দ্র।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মোখলেছুর রহমান জানান, স্নানের  নিরাপত্তায় পুলিশ ও আনসার সদস্য মিলে সাড়ে ১২শ মোতায়েন রয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

গত বছরের ২৭ মার্চ স্নানোৎসবে পদদলিত হয়ে ১১ পুণ্যার্থীর প্রাণহানি হয়। গুরুতর আহত হন আরও অন্তত ২০ জন।