স্কুলের শৌচাগার নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ

চুয়াডাঙ্গার পর এবার গাইবান্ধায়ও আরসিসি নির্মাণে লোহার বদলে বাঁশ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

তাজুল ইসলাম রেজা গাইবান্ধা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 April 2016, 06:31 AM
Updated : 11 April 2016, 02:15 PM

সদর উপজেলার মেঘডুমুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণ কাজের এ অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে জেলায় আরও ২৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই কাজে কী ব্যবহার হয়েছে তা তদন্তেরও দাবি উঠেছে।

এর আগে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্মাণাধীন একটি ভবনে রডের পরিবর্তে বাঁশের ফালি ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি তদন্ত করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফ বিল্লাহ বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে মেঘডুমুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শৌচাগার (ওয়াশ ব্লক) নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় আট লাখ ৫০ হাজার টাকা। গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ঠিকাদার আব্দুল খালেক নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পান।

“নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন ঢালাইয়ের কাজে দশ থেকে বার মিলিমিটার লোহার রড ব্যবহার করার কথা। কিন্তু রডের পরিবর্তে ঢালাই কাজে চিকন বাঁশ ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন।”

মেঘডুমুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার আমার কাছ থেকে একটি শ্রেণিকক্ষ খুলে নিয়েছিলেন মিস্ত্রিদের থাকার জন্য।

“তারা ছুটির দিনে ও রাতে কাজ করেন বেশি। সেই সুযোগে তারা কক্ষের বেঞ্চ ভেঙে পুরাতন লোহার ফ্রেমও ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহার করেছে।”

বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলে জানান বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শাহিন মিয়া।

গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই ঠিকাদার মেঘডুমুরসহ মোট আটটি বিদ্যালয়ের কাজ পেয়েছেন। কিন্তু চিকন বাঁশ ব্যবহারের কারণে তার আটটি বিদ্যালয়ের কাজই বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এমনকি তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত কমকর্তা সাইফুল ইসলামকে (নলকূপ মেকানিক) কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।  

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় রামচন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে আহবায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তদন্ত কমিটির আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, দরজা ও জানালার উপরের অংশে চিকন বাঁশ পাওয়া গেছে। তবে আর কোথাও চিকন বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে কিনা সেজন্য পুরো ছাদ ভেঙে দেখতে সুপারিশ করা হয়েছে।

কাজের তদারকি কমকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ছুটির দিনে কাজ করে নির্মাণ শ্রমিকরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

ঠিকাদার আব্দুল খালেক বলেন, তার অনুপস্থিতিতে নির্মাণ শ্রমিকরা এই কাজ করেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শৌচাগারের ছাদ ভাঙার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি ভাঙা হয়েছে। ভাংচুর করা শৌচাগারের একটি জানালা ও একটি দরজার উপরের অংশে লোহার রডের পরিবর্তে চিকন বাঁশ বেরিয়ে থাকতে দেখা গেছে।

মেঘডুমুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, এ ধরনের কাজ দিনে করার কথা থাকলেও চিকন বাঁশ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তারা রাতের অন্ধকারে ঢালাইয়ের কাজ করে। রাতে কাজ করার কারণে এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তা রামচন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানানো হয়।

তাদের উপস্থিতিতে গত শুক্রবার (৮ এপ্রিল) শৌচাগারের ঢালাইকরা একটি জানালা ও একটি দরজার উপরের অংশ ভাঙা হলে চিকন বাঁশ পাওয়া যায়।

এরপর উত্তেজিত লোকজন পিটুনি দেওয়ার চেষ্টা করলে ঠিকাদারের লোকজন ও মিস্ত্রিরা পালিয়ে যায়।

গাইবান্ধা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ বলেন, জেলায় ২৭৬টি বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক নির্মাণ কাজ নিয়ে গঠিত প্রকৌশলী ও ঠিকাদার সিন্ডিকেট প্রত্যেকটিতে এরকম দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছে। তাই প্রত্যেকটির অনিয়ম খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা দরকার।