খরস্রোতা ইছামতি কেবলই স্মৃতি

পাবনা শহরের বুক চিরে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্রোতা নদী ইছামতি এখন শুধুই স্মৃতি।

সৈকত আফরোজ আসাদ পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 March 2016, 10:25 AM
Updated : 14 March 2016, 10:25 AM

এক সময়ের আশীর্বাদ ইছামতি দখল আর দূষণে এখন আবর্জনার ভাগাড়; পরিণত হয়েছে দুর্ভোগের আরেক নামে। আন্তর্জাতিক নদী দিবসে ইছামতিকে পুনরুজ্জীবিত করে আগের খরস্রোতা রূপে ফিরে পাওয়ার দাবি পাবনাবাসীর।

১৬০৮ সালে বাংলার সুবেদার ইসলাম খাঁর শাসনামলে সৈন্য পরিচালনার সুবিধার্থে পদ্মা ও যমুনা নদীর সংযোগ স্থাপনে একটি খাল খনন করা হয়। এই খালই পরে ইছামতি নাম ধারণ করে।

এ নদীকে ঘিরেই গড়ে ওঠে পাবনা শহর। আর এই ইছামতি দিয়েই কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ী থেকে শাহজাদপুরের কাচারি বাড়িতে যেতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

পাবনা পৌর এলাকার প্রায় আট কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিল নদীর বিস্তার, প্রস্থ ছিল ৯০ থেকে ২০০ ফুট। অব্যাহত দখলে নদীর প্রস্থ কমে এখন দাঁড়িয়েছে ২৫/৩০ ফুটে। সংস্কারের অভাবে অধিকাংশ এলাকা ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে।

প্রভাবশালীরা উৎসমুখ ভরাট করে ফেলায় এ নদী হয়ে পড়েছে প্রাণহীন বদ্ধ খাল। অনেক স্থানেই নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে পাকা স্থাপনা। বদ্ধ জলাশয়ের দূষিত আর নোংরা পানি পরিণত হয়েছে মশার প্রজনন কেন্দ্রে।

ইছামতি বাঁচাও আন্দোলনের নেতা ফারুক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাবনা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের প্রমত্তা ইছামতি আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামেও প্রশাসনের টনক নড়েনি।

পাবনা ড্রামা সার্কেলের সাধারণ সম্পাদক রাসেল রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নদীটি খনন করে দুই পাশে হাঁটার রাস্তা করে দেওয়ার জন্য পাবনাবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও কর্তৃপক্ষের নজর নাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, কতিপয় প্রভাবশালী ইছামতির দুই পাশ দখল করে স্থায়ী ইমারত তৈরি করেছে।

পাবনার বিশিষ্ট কবি ও কথা সাহিত্যিক মুরশাদ সুবহানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পাবনার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাবেই ইছামতির এই অবস্থা। এদের আন্তরিকতা থাকলে অনেক আগেই নদীটি সচল হতো।

নদী গবেষক হাবিবুর রহমান স্বপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইছামতির দখল আর দূষণ নিয়ে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম ও লেখালেখি হয়েছে।কিন্তু বাস্তবে এর কোনো পরিবর্তন হয়নি।

খননের নামে কয়েকবার বরাদ্দ এনে বিভিন্ন সংস্থা হরিলুট করেছে এবং উচ্ছেদের নামে কয়েকবার পাবনাবাসীকে ধোকা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এ ব্যাপারে পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী পরিচালক (ভূমি ও রাজস্ব) মোশাররফ হোসেন বলেন, “নদীটি পৌরসভার মধ্যে থাকায় আমরা সেখানে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই না। বিষয়টি মূলত পৌরসভাই দেখবে।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী খননের কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও জানান তিনি।

পাবনা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তাবিবুর রহমান বলেন, ইছামতি নদী পুনর্খনন ও দুই পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের একটি প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছিল। তবে কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় চলতি বছর প্রকল্পটি আরও আধুনিকায়ন করে জমা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

বরাদ্দ পেলেই জেলা প্রশাসনের সহায়তায় দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদীটি রক্ষণাবেক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।