হিন্দু ধর্মগুরু হত্যা: জেএমবির রমজানই ‘মূল খুনি’

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে হিন্দু ধর্মগুরু যজ্ঞেশ্বর রায়ের মূল খুনির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার দাবি করেছে পুলিশ।  

সাইফুল আলম বাবু পঞ্চগড়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2016, 06:37 AM
Updated : 28 Feb 2016, 07:03 AM

গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার জেএমবি সদস্যদের মধ্যে রমজান আলী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে যজ্ঞেশ্বরকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন।

শুক্রবার ডিআইজি হুমায়ুনই ধর্মগুরু হত্যায় অংশ নেওয়া পাঁচজনের মধ্যে তিনজনকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের কথা জানান।

এদের মধ্যে মূল খুনি, হত্যাকাণ্ডের আগে-পরে যার বাসায় অস্ত্র রাখা হয়েছিল এবং ঘটনাস্থলসহ আশপাশে নজরদারি করেছে, এমন ব্যক্তিও রয়েছেন বলে তখন তিনি বলেছিলেন।

ওই সময় পুলিশ গ্রেপ্তারদের নাম-পরিচয় না জানালেও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিকরা দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হন।

এরা হলেন উপজেলার সুন্দরদীঘি ইউনিয়নের কালীর ডাঙ্গা সোটাপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক হারেজ আলী (৩২) ও দণ্ডপাল ইউনিয়নের কালীগঞ্জ মসজিদপাড়া গ্রামের মৃত আবুল খায়েরের ছেলে রমজান আলী (২২), যাকে মূল খুনি বলছেন পুলিশ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির।

শনিবার আদালতে হাজির করার পর গ্রেপ্তার আরেকজনের নাম আলমগীর হোসেন (২৮) বলে জানা যায়।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি উপজেলার সোনাপোতা গ্রামে সন্তগৌড়িয় মঠের পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায়কে দুর্বৃত্তরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে।

ডিআইজি হুমায়ুন কবির টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রমজান আলী ঘটনার তিনদিন আগে হত্যায় ব্যবহারের অস্ত্রগুলো আলমগীরের বাসায় রাখে। ঘটনার আগেরদিন অস্ত্রগুলো হারেজের গোয়ালঘরে নিয়ে রাখা হয়। ওইদিন রমজানসহ আরেকজন হারেজের বাসায় রাতযাপন করে।

“ফজরের নামাজ পড়ে তারা অপারেশনে (ঘটনাস্থলে) যায়। প্রথমেই যে দুজন পুরোহিতের কাছে যায় তাদের মধ্যে রমজানই তাকে (পুরোহিতকে) চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে। সেই (রমজান) পুরোহিতের মূল খুনি।”

ডিআইজি জানান, যজ্ঞেশ্বরকে হত্যার পর খুনিরা একটি বাজারে অপেক্ষায় থাকা হারেজের কাছে অস্ত্রগুলো বুঝিয়ে দেয়।

“সে সময় তারা হারেজকে বলে, অন্য অপারেশনে যাওয়ার আগে তারা অস্ত্রগুলো নিয়ে যাবে,” বলেন হুময়ুন হবির।

রমজান, আলমগীর ও হারেজ দীর্ঘদিন ধরে জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে তিনি দাবি করেন।

যজ্ঞেশ্বর রায়

ঘটনার দিনই দেবীগঞ্জ থানায় তার নিহত যজ্ঞেশ্বরের বড়ভাই রবীন্দ্রনাথ হত্যা মামলা এবং এসআই মজিবর রহমান অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মামলা করেন। গ্রেপ্তার তিনজনকে দুই মামলায় ১৮ দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ।

রমজানের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন জানা গেছে, তিনি নীলফামারির ডোমার কলেজে স্নাতক (বিএ) প্রথম বর্ষের ছাত্র। সেখান থেকেই তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন। তিনি জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

রমজানের জেএমবি সম্পৃক্ততার বিষয়ে কিছু জানাতে না পারলেও তার বড়ভাই মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, পরিবারের বাধায় তার ভাই অনেকদিন ধরেই রাজনীতি থেকে দূরে।

তার দ্বারা এমন ঘটনা ঘটেনি বলে তার দাবি।

এদিকে রিমান্ডের আবেদনে হারেজের বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি আদালতে তুলে ধরা হলেও অন্য দুইজনের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি বলে পাবলিক প্রসিকিউটর আমিনুর রহমান জানিয়েছেন।

হারেজের বাড়ি থেকে উদ্ধার অস্ত্রগুলো দিয়েই জেএমবির সদস্যরা এই হত্যা ঘটিয়েছে দাবি করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আলমগীর মূলত ঘটনাস্থল ও আশপাশে নজরদারিতে ছিলেন।

“এই তথ্য ও শুক্রবার প্রেসব্রিফিংয়ে ডিআইজির ভাষ্য মেলালে তৃতীয় ব্যক্তি রমজানই যে পুরোহিতকে হত্যা করেছে সেটি স্পষ্ট হয়।”