ধর্মগুরু হত্যা: ‘গ্রেপ্তার দুজনের’ পরিচয় দিল পরিবার

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে ধর্মগুরু হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন জনের মধ্যে দুজনের বাড়ি একই উপজেলায় বলে দাবি করছে তাদের স্বজনরা।

পঞ্চগড় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2016, 02:45 PM
Updated : 26 Feb 2016, 03:02 PM

তবে পুলিশ তাদের পরিচয় প্রকাশ করছে না।

এরা হলেন দেবীগঞ্জের সুন্দরদীঘি ইউনিয়নের কালীরডাঙ্গা গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে ভ্যানচালক হারেজ আলী (৩২) এবং দণ্ডপাল ইউনিয়নের কালীগঞ্জ মসজিদপাড়া গ্রামের মৃত আবুল খায়েরের ছেলে রমজান আলী (২২)।

হারেজ আলীর বাড়ির গোয়াল ঘর থেকে বৃহস্পতিবার রাতে অস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তার স্ত্রী জমিরন (২৭)।

জমিরনের ভাষ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে পুলিশ তাদেরকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। পরে হারেজ ঘর থেকে বের হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাতকড়া পরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে।

এরপরই পুলিশ তাদের কাছ থেকে গোয়ালঘরের চাবি নিয়ে সেখানে ঢোকে। এ সময়ের মধ্যে তাকে শোয়ার ঘরের বাইরে বের হতে দেওয়া হয়নি বলে জানান জমিরন।

জমিরন বলেন, হত্যার দিন (রোববার) রাতে নীলফামারী থেকে র‌্যাবের একটি দল এসে হারেজকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরদিন তার চাচাত ভাই আব্দুস শহীদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়।

“আমি আমার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে জড়িত নন বলে জানান।”

হারেজের প্রতিবেশী রশিদুল ইসলাম বলেন, “পুলিশ আমাদেরকে উদ্ধার করা অস্ত্রগুলো দেখিয়েছে। এসময় আমি অস্ত্রের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে হারেজ আমাকে জানায় রাহুল নামে এক যুবক তাকে অস্ত্রগুলো দিয়েছে।”

র‌্যাবের ধরে নিয়ে আবার ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে পুলিশের তদারক দলের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীন মোহাম্মদ বলেন, “সেটি র‌্যাবের বিষয়। তারা কী করেছে সেটা আমাদের জানা নেই।”

স্থানীয়রা জানান, হারেজ প্রতিবেশীদের সঙ্গে তেমন মেলামেশা করতেন না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তার পরিবার একদিন আগে ঈদ করে।

এদিকে, রমজানের বড় ভাই মিজানুর রহমান (৩৫) বলেন, রমজানকে গত বুধবার রাতে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ছাতনাই কলোনির এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে আমরা শুনেছি।

“সে সেখানে কিছুদিন আগে বেড়াতে গিয়েছিল।”

মিজানুর বলেন, রমজান নীলফামারীর ডোমার কলেজে বিএ পড়ছে। সে এক সময় ইসলামী ছাত্রশিবির করলেও পরিবারের বাধায় বর্তমানে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়।

স্থানীয়রা জানান, রমজান খুব কম সময়ই বাড়িতে থাকতেন। বেশিরভাগ সময় কোথায় থাকতেরন তা পরিবারের লোকজনও জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারত না।

দেবীগঞ্জের সন্তগৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়ের হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সন্দেহভাজন তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ; এদের একজনকে বলা হচ্ছে ওই হত্যাকাণ্ডের ‘হোতা’।

পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবির শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানালেও তাদের পরিচয় প্রকাশ করেননি।

ডিআইজি বলেন, “ঘটনায় সরাসরি জড়িত পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনই এ বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হলো। এরা জেএমবির স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের নেতা। তাদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের হোতাও রয়েছে। বাকি দুই জনকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।”

গত ২১ ফেব্রুয়রি দেবীগঞ্জের সোনাপোতা গ্রামের সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তাদের গুলি ও বোমার বিস্ফোরণে আহত হন আরও দুইজন।

ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই রবীন্দ্রনাথ থানায় হত্যা মামলা করেন। অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে পুলিশ আরেকটি মামলা করে। দুটি মামলাতেই অজ্ঞাত পরিচয় তিনজনকে আসামি করা হয়।

মামলার পর খলিলুর রহমান ও বাবুল হোসেন নামে দুই জেএমবি সদস্য এবং জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক শিবির নেতা ও নাজমুস সাকিব নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে আটক করে পুলিশ।

অবশ্য পরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নাজমুস সাকিবের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।