এমপি খোকার সামনে সরকারি কর্মকর্তাদের ‘মারধর’

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারু শিল্প জাদুঘর ফাউন্ডেশনে জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার উপস্থিতিতে দুই কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2016, 03:04 PM
Updated : 10 Jan 2016, 03:04 PM

এমপি খোকা রোববার দুপুরে এ ঘটনার সময় ফাউন্ডেশন চত্বরে আগামী ১৪ জানুয়ারি শুরু হতে যাওয়া মাসব্যাপী লোকজ ও কারু শিল্প মেলা আয়োজনের সব কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবি রবীন্দ্র গোপ বলেছেন, কোনো বাধায় মেলা বন্ধ হবে না।

এমপি খোকা মেলা আয়োজন বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি চলে আসার সময় পেছনে এক যুবকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। তিনি ওই যুবককে চড়-থাপ্পড় দিয়ে তাড়িয়ে দেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর ফাউন্ডেশনে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান স্থানীয় এমপি খোকা ও তার লোকজন।

এসময় তাকে অভ্যর্থনা জানাতে জাদুঘরের ডিসপ্লে কর্মকর্তা একেএম আজাদ সরকার ও সিনিয়র গাইড লেকচারার মোজাম্মেল হক ছুটে যান। এক পর্যায়ে এমপি খোকা তাদের ওপর উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং তার ক্যাডার বাহিনী ওই দুই কর্মকর্তাকে মারধর করে।  

ডিসপ্লে কর্মকর্তা আজাদ বলেন, “আমি ও সিনিয়র গাইড লেকচারার মোজাম্মেল হক মেলার সাজ-সজ্জার কাজ করছিলাম। এমপি মহোদয়ের আগমনের খবরে আমরা তাকে অভ্যর্থনা জানাতে যাই। এসময় তিনি মেলা কীভাবে হচ্ছে জানতে চাইলে বলি, পরিচালক মহোদয় জানেন এবং তিনি বিধি মোতাবেক করছেন।

“এতে এমপি মহোদয় উত্তেজিত হয়ে মেলার আয়োজন সম্পর্কে তাকে না জানানোর অভিযোগ তুলে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এসময় হঠাৎ তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন যুবক আমাদেরকে কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে শুরু করে।”

পরে সহকর্মীরা তাদেরকে উদ্ধার করে এবং এমপি খোকা তার লোকজনসহ ফাউন্ডেশন চত্বর ত্যাগ করেন।

জাদুঘরের পরিচালক রবীন্দ্র গোপ বলেন, “জাদুঘরের বার্ষিক বাজেট সংক্রান্ত বিষয়ে আমি ও ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি ডাইরেক্টর অর্থ মন্ত্রণালয়ে ছিলাম। এসময় খবর পাই, আমার দুই কর্মকর্তাকে মারধর করেছেন এমপি খোকার লোকজন।”

তিনি জানান, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে জানিয়েছেন।

এমপি খোকার মেলা বন্ধ রাখার নির্দেশের বিষয়ে জাদুঘরের পরিচালক বলেন, “কারও হুমকি-ধামকিতে মেলা বন্ধ হবে না।”

তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের একমাত্র লোক ও কারু শিল্পের জাতীয় মেলা। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা চারু ও কারু শিল্পীরা তাদের পণ্য নিয়ে ফাউন্ডেশনে এসেছেন।

এমপি খোকা বলেন, “দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে জাদুঘর প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাই। কিন্তু সেখানে কর্তৃপক্ষ কোনো আয়োজন করেনি। এমনকি জাদুঘরের কোনো কর্মকর্তাও ছিল না।”

বক্তব্য রাখার মাইকও লাগানো হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “এ দেখে আমি কর্মকর্তার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করি। চলে আসার সময় পেছনে এক যুবকের সঙ্গে জাদুঘরের এক স্টাফের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়।

“পরে ছুটে গিয়ে ওই যুবককে চড়-থাপ্পড় দিয়ে তাড়িয়ে দেই।”

ওই যুবককে চেনেন না বলেও তিনি দাবি করেন।

জাদুঘরের পরিচালক আলোচনা না করেই মেলার আয়োজন করছেন- অভিযোগ করে এমপি খোকা বলেন, “তিনি একাই সব কিছু করছেন। তিনি কীভাবে লাখ লাখ টাকা খরচ করছেন? ওই বাজেটের টাকা কোথায় ব্যয় করছেন? এসব কিছু আমাদের জানানো হয় না।”

মেলার উদ্বোধন করার কথা রয়েছে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের।