পঞ্চগড়ের সদ্যবিলুপ্ত গারাতি ছিটমহলের অধিবাসীরা বাংলাদেশি পরিচয়ে প্রথম বিজয়-উৎসব পালন করলেন।
Published : 16 Dec 2015, 08:47 PM
৪৫তম বিজয় দিবসে বুধবার দুপুরে শতকণ্ঠে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে গারাতির মফিজার রহমান কলেজ মাঠে শুরু হয় এ উৎসব।
বেলা আড়াইটায় রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যার নেতৃত্বে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। তাতে কণ্ঠ মেলান মাঠে উপস্থিত বিলুপ্ত ছিটের বাসিন্দারা।
সরেজমিনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এ প্রতিনিধি দেখেন, বাংলাদেশি হিসেবে প্রথম এ বিজয় উৎসব উপলক্ষে সাজ সাজ রব গারাতিতে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ নতুন পোশাক পরে হাজির হয়েছেন মাঠে।
জাতীয় পতাকা ও নানা রঙের বর্ণিল পতাকায় কলেজ মাঠ ও আশপাশের এলাকা সাজানো হয়েছে। গোটা এলাকায় বিরাজ করছে উৎসব মুখর পরিবেশ।
৬৮ বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন এই বাঙালিদের দেশের মূল ধারার সঙ্গে একাত্ম করার উদ্যোগ হিসেবে সরকারিভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। সহযোগিতা করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গ্রামীণফোন ও চ্যানেল আই।
অনুষ্ঠানে হাজির হন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, পঞ্চগড়-১ আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম সুজন প্রমুখ।
নতুন পরিচয়ে প্রথম বিজয় দিবস পালনের অনুভূতির কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন গারাতির শালবাগান গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা বছির উদ্দীন (৭০)।
বছির উদ্দীন বলেন, “অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীনের পর থেকে দুর্বিসহ জীবন কাটিয়েছি। ছিটমহলের বাসিন্দা হওয়ায় মিথ্যা পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তুলেছি। ৪৪ বছর পর আজ প্রাণভরে ‘আমার সোনার বাংলা’ গাইলাম।”
অনুষ্ঠানে আসা বোদা উপজেলার বিলুপ্ত পুটিমারি ছিটমহলের হবিবর রহমান (৪৫) বলেন, “ছিটমহল থাকার সময়ও আমরা বাংলাদেশের সব জাতীয় দিবস পালন করেছি। নিজেদের আমরা মনেপ্রাণে বাংলাদেশিই ভাবতাম। তবে এবারই প্রথম বাংলাদেশি পরিচয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করতে পেরে গর্ববোধ করছি।”
পঞ্চগড় ও নীলফামারী নাগরিক অধিকার সমন্বয় কমিটির সভাপতি মফিজার রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতি বছরই আমরা এমন ঢাকঢোল পিটিয়ে নানা উৎসব পালন করতে চাই। চিৎকার করে বলতে চাই ‘আমরা বাংলাদেশি’।”