রামুতে রাতে গরু লুট, সকালে মিলল হাত-পা বাঁধা যুবকের লাশ

গরু চুরি ঠেকাতে ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করা হলেও পুলিশ পৌঁছাতে দেরি করেছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2023, 12:31 PM
Updated : 11 Jan 2023, 12:31 PM

কক্সবাজারের রামুতে ডাকাতদলের গরু লুটের পর সকালে ঘটনাস্থলের পাশের সবজি ক্ষেত থেকে এক যুবকের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

রামু থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী জানান, বুধবার সকাল ৭টার দিকে উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর এলাকার এক সবজি ক্ষেতে এক যুবকের মৃতদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। 

নিহত মীর কাশেম (৩২) ওই এলাকার মৃত নিয়ামত আলীর ছেলে।

তবে গ্রামবাসীর দাবি, গরু লুট করতে আসা ডাকাতরা পিটিয়ে হত্যা করেছে এ যুবককে। 

এ ছাড়া গরু চুরি ঠেকাতে ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করা হলেও পুলিশ পৌঁছাতে দেরি করেছে বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।

অফিসেরচর এলাকার বাসিন্দা ও লুট হওয়া গরুর মালিক মোহাম্মদ আলী বলেন, মঙ্গলবার মধ্যরাত ৩টার দিকে সংঘবদ্ধ ডাকাতদল তার গোয়াল ঘরে থাকা সাতটি গরু নিয়ে যায়।

রাতে তার মেয়ে গোয়ালঘর খালি দেখতে পেলে পরিবারের সদস্যরা গরুর সন্ধানে ছুটোছুটি শুরু করে। পরে প্রধান সড়কে গিয়ে দেখতে পায় ডাকাতদল গরুগুলো গাড়িতে তোলার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, তার স্বজনরা লুট করা গরুগুলো ডাকাতদলের কবল থেকে কেড়ে নেওয়ারও চেষ্টা চালায়। এ সময় ডাকাতদল তার মেয়ের জামাতা ফারুককে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পান তিনি।

"ঘটনার পর থেকে আমার ভাতিজা মীর কাশেম নিখোঁজ ছিল। সকালে স্থানীয়রা মীর কাশেমের মৃতদেহ পার্শ্ববর্তী সবজি ক্ষেতে দেখতে পান।

“ধারণা করা হচ্ছে, রাতে ডাকাতির সময় দেখে ফেলায় ডাকাতরা মীর কাশেমকে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যার পর হাত-পা-মুখ বেঁধে সেখানে ফেলে গেছে।"

মোহাম্মদ আলী জানান, মীর কাশেমের দু'হাত পেছনে, মুখ, চোখ, এবং পা জোড়া বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে।

ডাকাতদের মারধরের শিকার ফারুক বলেন, গরুগুলো গাড়িতে তোলার সময় বাধা দিলে দু’জন ডাকাত তাকে মারধর শুরু করে। পরে তাকে বেঁধে ফেলার চেষ্টা চালায়। 

“এক পর্যায়ে আমি এক ডাকাতকে আটকে রাখলে আরও চারজন এসে মারধর শুরু করে। পরে আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে সেটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পাই।”

“এ সময় স্বজনরা এগিয়ে গেলে ডাকাতরা গাড়িতে দুটি বড় আকারের গরু নিয়ে সটকে পড়ে”, বলেন এ যুবক।

গৃহকর্তার ছেলে তারেক ও মেয়ে শামীমা আকতার অভিযোগ করে বলেন, রাতে ডাকাতি চলাকালে ৯৯৯ ফোন নম্বরে কল করে পুলিশের সহায়তা চাওয়া হয়। কিন্তু থানা থেকে ঘটনাস্থল মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বের হলেও পুলিশ পৌঁছে এক ঘণ্টারও বেশি পরে।

"দেরিতে আসার পরও ঘটনাস্থলে আসা পুলিশের এক কর্মকর্তা স্বজনদের ৯৯৯ এ কল করায় আমাদের বকাঝকা করেন।”

পরে সকাল ১০টায় থানায় যোগাযোগ করতে বলেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। তবে ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম তারা জানাতে পারেননি।


স্থানীয় ইউপি সদস্য জাফর আলম বলেন, নিহত মীর কাশেম মানসিক ভারসাম্যহীন। সে অপরিচিত লোকজন দেখলে চিল্লাচিল্লি করে।

"ধারণা করা হচ্ছে, রাতে গরু ডাকাতির সময় মীর কাশেম দেখে ফেলে। এ ছাড়া অপরিচিত লোকজনকে দেখার ঘটনা গভীর রাতে হওয়ায় সে হয়তো চিৎকার দিতে চেয়েছিলো। আর ধরা পড়ার আতঙ্কে ডাকাতরা তাকে মারধর এবং হাত-পা-মুখ বেধে হত্যা করেছে," বলেন এ জনপ্রতিনিধি।

সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া রামু থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী বলেন, পুলিশ মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।

রামু থানার ওসি মো. আনোয়ারুল হোসাইন বলেন, “যার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি। গরু ডাকাতি হয়েছে রাতে, আর তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে সকালে।

"তবে দুইটি বিষয় বিবেচনা রেখেই পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে,” বলেন ওসি।

দেরিতে ঘটনাস্থলে পৌছানোর বিষয়ে আনোয়ারুল বলেন, “৯৯৯ নম্বরে ফোন কল পাওয়ার পরপরই গরু লুট ঠেকাতে তৎপরতা শুরু করে পুলিশ।” 

আর পুলিশের সদস্যদের কাউকে বকাঝকা করার বিষয়টি সত্য নয় দাবি করে ওসি বলেছেন, “রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের পোশাকের সঙ্গে ক্যামেরা সংযুক্ত ছিল।”

তিনি জানান, দুই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।