তিন সংস্করণ মিলিয়ে এই বছর ২০টি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জয়ের হিসেবে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় সফলতম বছর (২০১৮ সালে ছিল ২১ জয়)। তবে জয়ের এই হিসাব পরিসংখ্যানের বুদবুদ মাত্র। বাস্তবতায় বছরটি ছিল ব্যর্থতায় ঠাসা, হতাশায় ভরা।
বছরের শুরু ছিল দারুণ আশা জাগানিয়া। জানুয়ারিতে দেশের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। মূল ক্রিকেটারদের অনেককে ছেড়ে আসা দলের বিপক্ষে জয় ছিল প্রত্যাশিতই। তবে মাঠে নেমে প্রত্যাশা পূরণ করাটাও জরুরি। তিন ম্যাচেই সহজ জয়ে ব্যবধানটা বুঝিয়ে দেন তামিম ইকবালরা।
জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় পাওয়া আইসিসির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এই সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন সাকিব আল হাসান। পরে ম্যান অব দা সিরিজও হন তিনি।
তবে দলের সুসময় ফুরিয়ে যায় দ্রুতই। টেস্ট সিরিজে খর্বশক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছেই বাংলাদেশ হয় হোয়াইটওয়াশড। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে কিছু বাড়তি পয়েন্ট পাওয়ার আশা তাতে গুঁড়িয়ে যায়।
সেই হারের ধরনগুলোই ছিল বেশি হতাশার। চট্টগ্রাম টেস্টে ক্যারিবিয়ানরা জিতে যায় শেষ ইনিংসে ৩৯৫ রান ও শেষ দিনে ২৮৫ রানের চ্যালেঞ্জ উতরে। অভিষেকেই অসাধারণ ডাবল সেঞ্চুরিতে ইতিহাস গড়েন কাইল মেয়ার্স। বাংলাদেশ হতাশায় পোড়ে একের পর এক ক্যাচ হাতছাড়া করে।
পরের টেস্টে মিরপুরে প্রথম ইনিংসে বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ায় দারুণ বোলিংয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রান তাড়ায় জয়ের আশা মুখ থুবড়ে পড়ে অনভিজ্ঞ জোমেল ওয়ারিক্যান আর খণ্ডকালীন বোলার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের স্পিনে।
তখন থেকেই দুঃসময়ের চক্রে পড়া বাংলাদেশের ক্রিকেটে গোটা বছরে স্বস্তির হাওয়া বয়েছে সামান্য কিছুদিন। জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ে সফর, অগাস্টে দেশের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ, সেপ্টেম্বরে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। এই তো। এই তিন সিরিজের আগে-পরে কেবলই ব্যর্থতা।
সবচেয়ে দুর্দশা যথারীতি ছিল টেস্ট ক্রিকেটে, ২১ বছরের পথচলায় যেখানে কখনোই দৃঢ় পায়ে খুব একটা ছুটতে পারেনি বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের পর আবার টেস্ট ছিল এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা সফরে। সেখানে প্রথম টেস্ট ড্র করতে পারলেও পরেরটিতে হারতে হয় বড় ব্যবধানে। অভিষেকেই ১১ উইকেট নিয়ে বাঁহাতি স্পিনার প্রাভিন জয়াবিক্রমা বিধ্বস্ত করেন বাঁহাতি স্পিনারের দেশ বাংলাদেশকে।
অবশেষে টেস্ট জয় ধরা দেয় জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ে সফরে। সেখানেও এক পর্যায়ে বিপর্যয়ে ছিল দল। দেড় বছর পর টেস্ট খেলতে নামা মাহমুদউল্লাহ আট নম্বরে নেমে ১৫০ রানের অসাধারণ ইনিংসে উদ্ধার করেন দলকে।
ওই ম্যাচের মাঝপথেই মাহমুদউল্লাহ ড্রেসিং রুমে দলকে জানান টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার কথা। টেস্টের শেষ দিনে মাঠে নামার সময় সতীর্থরা ‘গার্ড অব অনার’ দেন তাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই অবসরের ঘোষণা দিতে পারেন তিনি বছরের শেষ দিকে এসে।
জিম্বাবুয়ে সফরের পর বাংলাদেশ আর দুটি টেস্ট খেলে পাকিস্তানের বিপক্ষে নভেম্বর-ডিসেম্বরে। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে যাত্রা শুরু হয় এই সিরিজ দিয়ে। যথারীতি হতাশা সঙ্গী এখানেও।
প্রথম টেস্টে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ হারে বড় ব্যবধানে। দ্বিতীয় টেস্টের হারটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বিব্রতকর হারগুলির একটি। প্রকৃতির বাধায় যে ম্যাচে খেলা হয়নি আড়াই দিনের বেশি, সেই ম্যাচে হেরে যাওয়ার কঠিন কাজটিও করে ফেলে বাংলাদেশ। মাত্র চতুর্থ টেস্ট খেলতে নামা অফ স্পিনার সাজিদ খান ১২ উইকেট নিয়ে ধসিয়ে দেন স্বাগতিকদের ব্যাটিং।
সব মিলিয়ে ৭ টেস্টের ৫টিতে হার, ৩টিতেই বিশাল ব্যবধানে। জয় ও ড্র স্রেফ একটি করে।
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে বছরজুড়ে উজ্জ্বল ছিলেন একমাত্র লিটন কুমার দাস। এটিকে বলা যায় টেস্ট ক্রিকেটে তার ছিল ‘ব্রেক থ্রু’ বছর। ক্যারিয়ারে আগের ৫ বছর মিলিয়ে ২০ টেস্টে ছিল স্রেফ ৫ ফিফটি। এই বছর ৭ টেস্টেই করেন ১ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটি। ৪৯.৫০ গড়ে ৫৯৪ রান করে বছরে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানও তিনিই।
অধিনায়ক মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্ত দুটি করে সেঞ্চুরি করলেও ধারাবাহিক হতে পারেননি কেউ। বোলিংয়ে সেরা পারফরমার তাইজুল ইসলাম। বছরে ৬ টেস্ট খেলে তার প্রাপ্তি ৩০ উইকেট।
ভালো-মন্দের ওয়ানডে
তিন সংস্করণের মধ্যে ৫০ ওভারের ক্রিকেটেই বাংলাদেশ সবচেয়ে ধারাবাহিক এবং সেই ধারা ছিল এই বছরও। ম্যাচ যদিও খুব বেশি ছিল না এবার। স্রেফ ১২ ওয়ানডে হয়েছে গোটা বছরে। তাতে জয় এসেছে ৮টিতে, হার ৪টি।
খুব বেশি কঠিন পরীক্ষায় অবশ্য পড়তে হয়নি দলকে। নিয়মিত ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে এই বছরই যাত্রা শুরু হয় তামিম ইকবালের। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করা সেই সিরিজের কথা বলা হয়েছে আগেই।
ওয়ানডেতে কঠিন চ্যালেঞ্জ বলতে ছিল নিউ জিল্যান্ড সিরিজ। সেখানে বরাবরের মতোই ব্যর্থ বাংলাদেশ হারে তিন ম্যাচই।
এরপর মে মাসে দেশের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ধরা দেয় সিরিজ জয়। যদিও প্রত্যাশিত হোয়াইটওয়াশ সাফল্য মেলেনি। পরে জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ে সফরে অনুমিতভাবেই জয় আসে তিন ম্যাচে।
বছরের ১২ ম্যাচই ছিল আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের অংশ। তাতে ৮০ পয়েন্ট নিয়ে এখন দুইয়ে আছে বাংলাদেশ এবং আগামী বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করার পথেও এগিয়ে গেছে অনেকটা। আগামী বছর যদিও অপেক্ষায় আছে কঠিন কিছু সিরিজ।
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে সর্বোচ্চ রান অধিনায়ক তামিমের, ১২ ইনিংসে ১ সেঞ্চুরি ও ৪ ফিফটিতে ৩৮.৬৬ গড়ে ৪৬৪ রান। তবে মুশফিকুর রহিম ৪০৯ রান করেন ৯ ইনিংস খেলেই, ৫৮.১৪ গড়ে।
১০ ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়ে বোলিংয়ে সেরা মুস্তাফিজুর রহমান, সাকিবের শিকার ৯ ম্যাচে ১৭টি।
বছরের সবচেয়ে আলোচিত অধ্যায় ছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেই। শুধু বিশ্বকাপের বছর বলেই নয়, ঘটনার ঘনঘটাও ছিল এই সংস্করণে। বছরের শেষ ৬ মাসে অনেক টি-টোয়েন্টি খেলে বাংলাদেশ। সেখানে আগে না পাওয়া সাফল্য যেমন ধরা দিয়েছে, তেমনি ব্যর্থতার ধারায় আশার সমাধিও হয়েছে।
বছরের শুরুতে নিউ জিল্যান্ড সফরে তিনটি ম্যাচেই হারতে হয় বাজেভাবে। বিশেষ করে শেষটিতে, বৃষ্টিতে ১০ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে অলআউট হওয়া ছিল চরম বিব্রতকর অভিজ্ঞতা।
পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ছিল জিম্বাবুয়েতে, জুলাইয়ে। সেখানে একটি ম্যাচ হারলেও সিরিজ জিতে ফেরে বাংলাদেশ। এরপর অগাস্ট ও সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের মাঠে দুটি সিরিজ।
ওই দুই সিরিজের বেশ কিছু জায়গায় ছিল মিল। দুই সিরিজেই ছিল পাঁচটি করে ম্যাচ, উইকেট ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য বিভীষিকাময়, প্রতিপক্ষ দুই সিরিজেই ছিল অনেক খর্বশক্তির এবং দুটিতেই প্রাপ্তি ছিল সিরিজ জয়।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানের সিরিজ জয় যে কোনো সংস্করণ মিলিয়েই তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়।
নিউ জিল্যান্ড বাংলাদেশে আসে তাদের বিশ্বকাপ দলের একজনকেও না নিয়ে। ৩-২ ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশ স্বাদ পায় প্রথমবারের মতো কিউইদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের।
টানা তিন সিরিজ জয়ে বিশ্বকাপ নিয়ে প্রত্যাশা স্পর্শ করে আকাশ। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই বাস্তবতার জমিনে মুখ থুবড়ে পড়তে হয় স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে।
পরে স্বাগতিক ওমান ও শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউ গিনিকে হারিয়ে পরের ধাপে পা রাখতে পারে দল। কিন্তু সুপার টুয়েলভ-এ হেরে যায় তারা পাঁচ ম্যাচের সবকটিতে। তাতে বিশ্বকাপের মূল পর্বে বাংলাদেশের ১৪ বছরের জয়-খরা দীর্ঘায়িত হয় আরও।
এখানে প্রথম তিন ম্যাচের দুটিতেই অবশ্য জয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশ। তবে শেষ পর্যন্ত হেরে যায় শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৪ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭৩ রানে গুটিয়ে গিয়ে শেষটা হয় চরম বাজে।
বিশ্বকাপের পর দেশের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেও আসেনি জয়। এখানেও তিন ম্যাচে হার সবকটিতে।
সব মিলিয়ে বছরে ২৭ ম্যাচ খেলে ১১ জয়, ১৬ হার, বিশ্বকাপের চরম ব্যর্থতা-এটুকুই বলে দিচ্ছে, এই বছরে কেমন ছিল টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশ।
ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স বছরজুড়ে উল্লেখ করার মতো নয় একজনেরও। বোলিংয়ে দলের সফলতম মুস্তাফিজ, ২০ ম্যাচে উইকেট ২৮টি। তবে দেশে ১১ ম্যাচে যেখানে ওভারপ্রতি পাঁচের কম রান দিয়ে শিকার ১৭টি, সেখানে দেশের বাইরে ৯ ম্যাচে স্রেফ তার ১১ শিকার প্রভারপ্রতি প্রায় সাড়ে ৯ করে রান দিয়ে!
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে একজনের কথা অবশ্য আলাদা করে না বললেই নয়। চোটাঘাত, ফর্মহীনতা ও হতাশার অধ্যায় পেছনে ফেলে এবার নতুন রূপে ফেরেন তাসকিন আহমেদ। দারুণ ফিট হয়ে, স্কিলে আরও শাণিত হয়ে এবং দারুণ আগ্রাসন ও ধারাবাহিকতা নিয়ে ফিরে বছরজুড়ে পারফর্ম করেন তিন সংস্করণেই। বছরের সেরা পারফরমার হয়তো তিনিই।
২০১৯ সালে সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ হওয়ার পর আচমকাই টেস্ট নেতৃত্ব পেয়ে মুমিনুল পড়েছিলেন যেন অনেকটা অথৈ সাগরে। এই বছর তাকে একটু ধাতস্ত মনে হয়েছে। পায়ের নিচে জমিন খুঁজে পাচ্ছেন বলেও মনে হয়েছে। নেতৃত্ব ব্যাপারটি যে তার সহজাত নয়, সেই ব্যাপারটিও স্পষ্ট হয়েছে বারবার। পরিস্থিতি অনুযায়ী সাড়া দিতে না পারা ও সৃষ্টিশীলতার অভাব ফুটে উঠেছে অনেক সময়ই। অবশ্য সাকিব-তামিমের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের অনেকটা সময় না পাওয়ায় অধিনায়ক মুমিনুলের কাজ কঠিন হয়েছে বটে।
নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে প্রথম বছরে আপাতত পাশ মার্কই পাচ্ছেন তামিম। যদিও তার কঠিন পরীক্ষা সামনে এবং নেতৃত্বে আলাদা ধরন কিংবা নিজস্বতার ছাপ এই বছর রাখতে পেরেছেন বলে মনে হয়নি।
টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর জন্য বছরটি ছিল উত্থান-পতনে ভরা। কখনও তাকে মনে হয়েছে দাপুটে, কখনও নিরুপায়। কখনও মনে হয়েছে, কর্তৃত্ব তার যথেষ্টই আছে, কখনও অসহায়। ব্যাট হাতে তার পারফরম্যান্সে যেমন ছিল জোয়ার-ভাটা, তেমনি অধিনায়ক হিসেবেও।
তবে শেষ পর্যন্ত বিচার করতে হবে বিশ্বকাপ দিয়েই এবং সেখানে তিনি ব্যর্থই। স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ার ধাক্কা তো ছিলই, পাপুয়া নিউ গিনিকে হারিয়ে সুপার টুয়েলভ-এ পা রাখার পর সংবাদ সম্মেলনে বিস্ফোরক কথা বলেও তিনি আলোচনার জন্ম দেন প্রবল। সেই বিতর্কের আগুনে দগ্ধ হয় দলের আশাও। মাঠের বাইরের আঁচ থেকে তিনি আড়াল করতে পারেননি দলকে। দলের ভগ্ন মনোবল ও নতজানু মানসিকতা তিনি পারেননি জাগিয়ে তুলতে।
নির্বাচন, বিতর্ক ও অন্যান্য
বিসিবির নির্বাচনের বছর ছিল এটি। খুব বেশি উত্তেজনা বা নাটকীয়তা অবশ্য ছড়ায়নি। অনুমিতভাবেই টানা তৃতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন নাজমুল হাসান। আগের দুই বারের মতো এবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বসেন তিনি দেশের ক্রিকেটের শীর্ষ কর্তার আসনে। সরকারের মনোনয়নে একবারসহ তার মোট চতুর্থ মেয়াদের দায়িত্ব এবার।
বিসিবি পরিচালকদের মধ্যে কয়েকটি নতুন মুখ থাকলেও আগের প্রভাবশালী কর্তারা সবাই রয়ে যান। নির্বাচনে হেরে যান সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ ও দেশের খ্যাতিমান ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব নাজমুল আবেদীন।
বিসিবি সভাপতি বছরজুড়ে আলোচিত ছিলেন বরাবরের মতোই তার বিতর্কিত সব মন্তব্যের জন্য। দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থার প্রধান হলেও বিশ্বকাপে তিনিই সূত্রপাত ঘটান মাঠের বাইরের বিতর্কের। স্কটল্যান্ডের কাছে পরাজয়ের পরদিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি কাঠগড়ায় তোলেন সিনিয়র ক্রিকেটারদের। সেটির সূত্র ধরেই পরে মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিমের নানা মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে। এসব থেকেই সৃষ্টি হওয়া সমালোচনার প্রবল হাওয়া নাড়িয়ে দেয় দলের পারফরম্যান্স।
মাঠের বাইরে অবকাঠামোর উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু হয়নি এবছরও। জাতীয় দল বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে সুযোগ-সুবিধা ও সামগ্রিক চিত্র যথারীতি নাজুক। ‘এ’ দলের কার্যক্রম ছিল না বললেই চলে। ঘরোয়া ক্রিকেটে উইকেট, সুযোগ-সুবিধা, মানের উন্নতি তেমন কিছু হয়নি। আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা সেই আশ্বাসের পর্যায়েই আছে।
মাঠের বাইরে টেবিলের খেলায়ও জুত করতে পারেনি বিসিবি। ২০২৪ থেকে ২০৩১ পর্যন্ত চক্রে আইসিসির একাগাদা ইভেন্টের মধ্যে কেবল ২০৩১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ, সেটিও ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে।
ছেলেদের ক্রিকেটে হতাশার বছরে সুখবর আসে মেয়েদের ক্রিকেটে। দীর্ঘ বিরতির পর মাঠে নেমে মেয়েরা সিরিজ জিতে নেয় জিম্বাবুয়ে সফরে। এরপর ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও শুরুটা দারুণ করে পাকিস্তানকে হারিয়ে। পরে কোভিড পরিস্থিতির কারণে বাছাই বাতিল হলে র্যাঙ্কিংয়ের ভিত্তিতে বাংলাদেশের মেয়েরা ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে প্রথমবারের মতো।
কোভিড বিরতির পর আইসিসির সব শীর্ষ দেশের মেয়েদের ব্যস্ততা অনেক থাকলেও বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য খুব বেশি ম্যাচের ব্যবস্থা করতে পারেনি বিসিবি।