সংক্রমণ আর মৃত্যুর তালিকা আরও দীর্ঘ করে কেটে গেল আরও বারো মাস, নতুন বছরেও মানব সমাজের সঙ্গে থাকছে করোনাভাইরাস।
Published : 31 Dec 2021, 10:12 PM
মহামারীর প্রথম বছর ২০২০ সাল মৃত্যুভয়কে করে তুলেছিল মানুষের জীবনসঙ্গী, বাধ্য করেছিল জীবনধারা পাল্টে নিতে। আর ইতিহাসের পাতায় ২০২১ সালে চিহ্নিত হবে ভাইরাসকে সঙ্গী করে বাঁচতে শেখার বছর হিসেবে।
এই দুঃসময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ এ বছর উদযাপন করেছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। মহামারীর ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর ইংগিত মিলছে অর্থনীতির সূচকে। দেড় বছর বন্ধ থাকার পর খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যদিও এর জের টানতে হবে আরও বহুদিন।
স্তিমিত রাজনীতির অঙ্গনে বছর জুড়ে আলোচনায় ছিল স্থানীয় নির্বাচনে সহিংসতা আর ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয় জয়কারের খবর।
কুয়েতে দণ্ডিত হওয়ায় এ বছর সাংসদ পদ হারিয়েছেন শহিদুল ইসলাম পাপুল। দুর্গাপূজার মধ্যে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস নতুন করে সতর্কবার্তা দিয়েছে। ই-কমার্স খাতের কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে এনেছে সুশাসনের ঘাটতির বিষয়টি।
তবে মহামারীর বাধা পেরিয়ে পদ্মাসেতু, মেট্রোরেলসহ কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে অনেকটা। ২০২২ সালে সেসব প্রকল্প খুলে দেওয়া হবে।
ক্রিকেটে ছেলেদের টানা ব্যর্থতা হতাশায় ডোবালেও বছরের শেষে এসে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে মেয়েরা জানাল, আশা বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
বিশ্বে ২০২১ সাল শুরু হয়েছিল করোনাভাইরাসের টিকার আশা নিয়ে; কিন্তু বছরের মাঝামাঝি এ ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে জীবনের ক্ষতি মহামারীর প্রথম বছরকেও ছাড়িয়ে যায়।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। বছর শেষে শনাক্ত রোগী ছাড়িয়ে যায় ৫ লাখ; এ ভাইরাস কেড়ে নেয় সাড়ে ৭ হাজার মানুষের প্রাণ।
২০২১ সালে আরও প্রায় ১১ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে কোভিডে; মৃতের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও প্রায় ২১ হাজার নাম, প্রিয়জনের কাছে তারা এখন কেবলই স্মৃতি।
বছরের মাঝামাঝি সময়ে টিকার সঙ্কট দেখা দিলেও শেষ ভাগে এসে স্কুলশিশুদের টিকার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার; ষাটোর্ধ্ব ও ফ্রন্টলাইনারদের কোভিড টিকার তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ দেওয়াও শুরু হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশের ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন, পূর্ণ ডোজ পেয়েছেন ২৫ শতাংশের বেশি নাগরিক।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে জুলাই মাসে দেশে এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল, অগাস্টে দৈনিক মৃত্যু পৌঁছেছিল রেকর্ড ২৬৪ জনে। সেই পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে বছরের শেষে এসে; দেড় বছর পর খুলে দেওয়া হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ আপাতত স্বস্তিতে থাকলেও বছরের শেষে এসে বিশ্বে ত্রাস ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাসের আরেক নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। ২০২২ তাই শুরু হচ্ছে ওমিক্রনের শঙ্কা নিয়েই।
এ বছর দুর্গাপূজার মধ্যে নজিরবিহীন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের সাক্ষী হয়েছে বাংলাদেশ। কুমিল্লায় একটি পূজামণ্ডপে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরআন দেখে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। হামলা, ভাংচুর চালানো হয় অন্তত আটটি মন্দিরে।
সোশাল মিডিয়ায় ওই ঘটনার ছবি-ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী ও রংপুরে আক্রান্ত হয় হিন্দুদের ঘরবাড়ি, উপাসনালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দাবি, দুর্গাপূজার মধ্যে তিন দিনেই ৭০টি পূজামণ্ডপে হামলা-ভাংচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হয়। ১৩ থেকে ২০ অক্টোবরের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নয়জন নিহত ও কমপক্ষে দুই শতাধিক আহত হন।
হামলা প্রতিরোধে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা উঠলেও পরে তৎপর হয়ে ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ। ৩৫ জেলায় ১৪২টি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় ১ হাজার ১৩৬ জনকে।
এরপর দুমাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কোনো মামলায় অভিযোগপত্র না দেওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে হিন্দু সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে।
দ্রুত বাড়তে থাকা দেশের ই-কমার্স খাত বড় ধাক্কা খেয়েছে ২০২১ সালে। প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে গ্রাহকের কাছ থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কেলেঙ্কারি বেরিয়ে আসার পর কয়েক ডজন মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছেন বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা।
বাজারমূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে পণ্য বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিচ্ছিল এসব কোম্পানি। সবকিছু হচ্ছিল সবার সামনেই।
কম দামে পণ্য কিনে পরে বেশি দামে বিক্রির আশায় এসব কোম্পানিতে লাখ লাখ টাকার অর্ডার করেন অনেকে। কিন্তু মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পণ্য বুঝে না পেয়ে কিংবা টাকা ফেরত না পেয়ে রাস্তায় নামেন তারা।
এসব ঘটনায় ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হয়। ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেল এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোছা. শামীমা নাসরিনকে ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে ই-অরেঞ্জের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) আমানউল্লাহকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
এ পরিস্থিতিতে ই-কমার্স খাতের সংস্কার ও সমন্বয়ের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তদারকির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাদের সুরক্ষায় উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি করে সরকার। অনিয়মে জড়িয়ে পড়া ২৮টি কোম্পানির নাম ওই কমিটিকে দেয় সরকারের তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা।
আলোচিত ই-কমার্স কোম্পানি ইভ্যালির অবসায়ন এবং তার আগে ইভ্যালির ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নিতে চার সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে হাই কোর্ট। তবে গ্রাহকের অর্থ পাওয়ার বিষয়ে কোনো নিশ্চিয়তা এখনও মেলেনি।
২০২০ সালের শেষভাগে শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর নতুন নেতৃত্বের অধীনে রাজপথে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। ২০২১ সালে আবার তাদের সহিংস মূর্তি দেখেছে বাংলাদেশ।
মার্চে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতায় বিক্ষোভে নামে হেফাজত কর্মীরা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জে তিন দিন ধরে তারা ব্যাপক তাণ্ডব চালায়।
হাটহাজারী থানা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, উপজেলা সদর ভূমি অফিসে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেল স্টেশন, জেলা পরিষদ কার্যালয়, ডাকবাংলোসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় আক্রমণ চালায় কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা। পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে নিহত হয় ডজনখানেক মানুষ।
সেসব ঘটনায় ১৫১টি মামলা হয়; তাতে তাতে ৩ হাজার ২৪৩ জনকে আসামি করা হয়। হেফাজত আমির জুনাইদ বাবুনগরীকেও আসামি করা হয় কয়েকটি মামায়। গ্রেপ্তার হন সংগঠনটির ডজনখানেক শীর্ষ পর্যায়ের নেতা।
নানা ঘটনায় বিতর্কের মুখে কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয় জুনাইদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে। হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগে ১৯ অগাস্ট তিনি মারা যান। এখন হেফাজতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারই মামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
২০২০ সালের নভেম্বরে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে আলোচনায় এসেছিলেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। সে সময় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হলেও তিনি বহাল তবিয়তেই ছিলেন। ২০২১ সালে নানা ঘটনায় প্রকাশ্যে আসে মামুনুলের স্বরূপ।
মার্চের শেষে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় হেফাজতি তাণ্ডবের পর উসকানিদাতা হিসেবে মামুনুলের নাম আসে; তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়।
এর মধ্যেই ৩ এপ্রিল সোনারগাঁওয়ের একটি রিসোর্টে জান্নাত আরা ঝর্ণা নামের এক নারীসহ আটক হন হেফাজতের এই নেতা। পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলে ঝর্ণাকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করেন মামুনুল। পরে হেফাজতকর্মীরা ওই রিসোর্টে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এবং তাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়।
রিসোর্টের ঘটনার ২৭ দিন পর ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় হাজির হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন ঝর্ণা। তার আগেই ১৮ এপ্রিল মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মার্চের ঘটনায় মামুনুল হক কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের ‘উসকানি দিয়ে মাঠে নামিয়েছিলেন’, তার উদ্দেশ্য ছিল ‘সরকার উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল’ করা।
তদন্তকারীরা বলছেন, মাদ্রাসা, এতিমখানা কিংবা রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশ থেকে পাঠানো দানের টাকা হেফাজত নেতারা কীভাবে ‘আত্মসাৎ করে নিজেদের বিলাসিতা ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে’ ব্যবহার করেছেন, সেসব তথ্য এখন মিলছে। কেবল মামুনুল হকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই গত এক বছরে ‘৬ কোটি টাকা’ লেনদেন হয়েছে।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচআর) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহকে ২৯ সেপ্টেম্বর লম্বাশিয়া ক্যাম্পে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর এলাকার সাবেক স্কুলশিক্ষক মুহিবুল্লাহ পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে ‘রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। তাকে হত্যার জন্য রোহিঙ্গাদের আরেকটি সংগঠন আরসার সদস্যদের দায়ী করে তার পরিবার। আর সরকারের তরফ থেকে বলা হয়, যারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চায় না, তারাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে ওই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও আলোচনায় আসে। স্বচ্ছ তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয় কূটনীতিবিদদের পক্ষ থেকে।
এক মাসের মাথায় কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরের এক মাদ্রাসায় হামলা চালিয়ে ছয়জনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় কথিত আরসা নেতা মোহাম্মদ হাসিমের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই নভেম্বরের শুরুতে ক্যাম্পে তার লাশ পাওয়া যায়।
তবে কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বছরের শেষ দিকে এসে অডিও কেলেঙ্কারিতে পদ হারাতে হয়েছে একজন প্রতিমন্ত্রী, একজন সিটি মেয়র এবং একজন পৌর মেয়রকে, যাদের সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীরকে দল থেকে বহিষ্কার করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তিনি ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এরপর দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের মধ্যে তাকে মেয়র পদ থেকেও বরখাস্ত করা হয়।
সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই জাতির পিতার ম্যুরাল স্থাপনের বিরোধিতা করে এক মন্তব্যের অডিও ফাঁস হলে গাড্ডায় পড়েন রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র মো. আব্বাস আলী।
পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে পৌর মেয়রের পদ থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
সর্বশেষ অডিও কেলেঙ্কারিতে বিদায় ঘণ্টা বাজে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের।
খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে ফেইসবুকে এক টকশোতে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের জন্য তিনি সমালোচনায় পড়েন। এরপর চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে তার এক ফোনালাপের অডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে অশালীন বক্তব্যের পাশাপাশি হুমকি দিতে শোনা যায়।
ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ৭ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন মুরাদ হাসান। জামালপুর আওয়ামী লীগের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয় স্থানীয় এই এমপিকে।
নানা নাটকীয়তার মধ্যে ৯ ডিসেম্বর রাতে কানাডার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন মুরাদ। কিন্তু কানাডায় কিংবা আরব আমিরাতে ঢুকতে না পেরে দুদিন পর তাকে ফের দেশে ফিরতে হয়। এরপর থেকে তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে রয়েছেন।
১৪ জুন রাতে ফেইসবুক পোস্টে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে রীতিমত বিস্ফোরণ ঘটান চিত্রনায়িকা পরীমনি। পরে সংবাদ সম্মেলনে এসে কাঁদতে কাঁদতে জানান, সেই ব্যক্তির নাম নাসির ইউ মাহমুদ।
উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। সেই ক্লাবেই ৮ জুন রাতে ‘ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার’ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন পরীমনি।
১৫ জুন সাভার থানায় তিনি মামলা করেন নাসির এবং ক্লাবের আরেক সদস্য তুহিন সিদ্দিকী অমির বিরুদ্ধে। তার পরপরই উত্তরা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। সে সময় ওই বাসা থেকে মদ ও ইয়াবা উদ্ধারের কথা জানানো হয়।
সেই মামলায় পুলিশ ইতোমধ্যে নাসির, অমিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা হয়েছে।
বোট ক্লাবের ঘটনা নিয়ে আলোচনা থিতিয়ে যাওয়ার আগেই ৪ অগাস্ট বনানীতে পরীমনির বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরদিন তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় মাদক আইনে মামলা হয়।
সেই মামলায় তাকে তিন দফা রিমান্ডে নেওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে হাই কোর্ট বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। পরে গত ৩১ অগাস্ট তার জামিনের আদেশ হয় বিচারিক আদালত থেকে। গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ছাড়া পান পরীমনি।
তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তার সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ ভিডিও ও ছবি ফেইসবুকে আসে। পরে ওই কর্মকর্তাকে অন্য বিভাগে বদলি করা হয়।
মাদকের ওই মামলায় পরীমনিসহ তিনজনকে আসামি করে ইতোমধ্যে অভিযোগপত্র দিয়েছে সিআইডি। মামলাটি এখন অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে।
করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মুশতাক আহমেদসহ কয়েকজনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তারের বিষয়টি ছিল ২০২০ সালের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। এ বছর তারা আবারও খবরের শিরোনাম হয়েছেন করুণ এক ঘটনার মধ্য দিয়ে।
দশ মাসে কয়েকবার আবেদন করেও জামিন পাননি ৫৩ বছর বয়সী মুশতাক। শেষ পর্যন্ত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে মৃত্যু হয় তার।
তার মৃত্যু ক্ষোভের জন্ম দেয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি নতুন করে জোরালো হয়। কারাগারে বন্দি অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনাকে ‘মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
সমালোচনার মধ্যে হাই কোর্টের দেওয়া জামিনে ৩ মার্চ মুক্তি পান কার্টুনিস্ট কিশোর, অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি হন হাসপাতালে। পরে বাসায় ফিরে ১০ মার্চ নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলার আবেদন করেন তিনি।
কিশোর সেখানে অভিযোগ করেন, গত বছরের ২ মে তাকে ধরে নেওয়ার পর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছিল। তিন দিন পর তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে থানায় নেওয়া হয়।
আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছিল। তদন্ত শেষে পিবিআইয়ের জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, হেফাজেত কিশোরকে শারীরিক নির্যাতনের কোনো ‘সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি’।
এদিকে ফেইসবুকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারের’অভিযোগে কিশোরদের বিরুদ্ধে গতবছর দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়েছে এ বছর। সেখানে মোট সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।
সরকারি ‘নথি চুরির চেষ্টার’ অভিযোগে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গ্রেপ্তারের বিষয়টি বছরের মাঝামাঝি সময়ে আলোচনার জন্ম দেয়।
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে গত ১৭ মে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক কর্মকর্তার কক্ষে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে ব্রিটিশ আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডিবিধির কয়েকটি ধারায় মামলা করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
রোজিনা ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। আর তার সহকর্মীরা অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘অনিয়ম-দুর্নীতি’ নিয়ে প্রতিবেদন করায় ব্রিটিশ আমলের আইন ব্যবহার করে ‘হয়রানি’ করা হচ্ছে তাকে।
ছয় দিন পর জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান সাংবাদিক রোজিনা। ‘সাহসী সাংবাদিকতার’ স্বীকৃতি হিসেবে নভেম্বরে তাকে ‘ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড’ দেয় নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংগঠন ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড।
চার বছর আগে ঢাকার বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের আলোচিত মামলার রায় হয়েছে এ বছর। গত ১১ নভেম্বর ওই রায়ে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছে আদালত।
ওই রায়ের চেয়েও বেশি আলোচনার জন্ম দেয় ঢাকার সপ্তম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারের মৌখিক পর্যবেক্ষণ।
ধর্ষণ প্রমাণে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ফরেনসিক পরীক্ষা করার বাধ্যবাধকতার যুক্তি দিয়ে ওই সময়ের পর মামলা না নিতে পুলিশকে মৌখিক নির্দেশনা দেন বিচারক, যদিও পরে লিখিত রায়ে বিষয়টি তিনি রাখেননি।
রায় ঘোষণার সময় পর্যবেক্ষণে তিনি বলেছিলেন, অভিযোগকারী তরুণী ‘স্বেচ্ছায়’ রেইনট্রি হোটেলে গিয়ে আসামির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন, সেখানে ‘ধর্ষণ ঘটেনি’। তদন্ত কর্মকর্তা ‘প্রভাবিত হয়ে’ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছেন।
বিচারকের ওই পর্যবেক্ষণ উচ্চ আদালতের নির্দেশনাই শুধু নয়, সংবিধানের লঙ্ঘন বলে মত দেন অধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা। এ নিয়ে রাজপথে বিক্ষোভও হয়।
বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রীও সরব হন। পরে বিচারক কামরুন্নাহারকে আদালতে না বসার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। ১৪ নভেম্বর ওই বিচারককে আদালত থেকে প্রত্যাহার করে আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করে সরকার।
তখন জানা যায়, স্থগিতাদেশ থাকার পরও অন্য এক ধর্ষণ মামলার এক আসামিকে জামিন দেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে আপিল বিভাগ তাকে গত বছর তলব করেছিল। গত ২২ নভেম্বর তিনি আপিল বিভাগে উপস্থিত হয়ে সেই ব্যাখ্যা দেন। শুনানি শেষে কামরুন্নাহারের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে বলা হয়, তিনি কোনো ধরনের ফৌজদারি বিষয় পরিচালনার ‘উপযুক্ত নন’।
এ বছর আরও দুটি আলোচিত মামলার রায় হয়েছে। এর একটিতে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাত ও পাচারের অভিযোগে বিদেশে অবস্থানরত সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালতে। এর আগে বাংলাদেশে আর কোনো প্রধান বিচারপতি দুর্নীতিতে দোষী সাব্যস্ত হননি।
আলোচিত আরেক মামলার রায়ে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত; পাঁচজনকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তারাও সবাই বুয়েটের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মী।
এ বছর ৮ জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাড়িয়ে দেয় পুরো বাংলাদেশকে। সেই ঘটনায় ৫২ জনের প্রাণহানি ঘটে, যাদের অনেকেই অপ্রাপ্তবয়স্ক।
সজীব গ্রুপের ওই কারখানায় সেজান জুস, নসিলার মত জনপ্রিয় পণ্য এবং সেমাই, চানাচুর, ক্যান্ডি এবং বিভিন্ন ধরনের বেভারেজ ও খাদ্যপণ্য তৈরি হত। অগ্নিকাণ্ডের পর সেখানে শিশু শ্রমের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কারখানার মালিক আবুল হাসেম, তার চার ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি দুটি সংস্থা শ্রম অধিদপ্তর এবং কলকারখানা এবং প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর যথাযথভাবে তদারক করলে এ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এড়ানো যেত।
এছাড়া গত ২৭ জুন সন্ধ্যায় মগবাজার ওয়্যারলেস গেইটে এক ভবনে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের একটি ঘটনা সাড়া ফেলে দেয়। বিস্ফোরণে রাখীনীড় নামের ওই তিনতলা ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। আশেপাশের এক ডজনেরও বেশি ভবনের প্রায় সব কাচ ভেঙে তীব্র বেগে ছিটকে পড়ে।
ভয়াবহ এই বিস্ফোরণে অন্তত ১২ জন নিহত হয়। রাস্তায় থাকা তিনটি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিহতদের মধ্যে এক বাসচালক ও যাত্রীও ছিলেন।
ফায়ার সার্ভিস ও তিতাস গ্যাসের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভবনে জমে থাকা গ্যাস থেকেই ওই বিস্ফোরণ ঘটে। তবে সেই গ্যাসের উৎস কী, সে বিষয়ে কোনো সংস্থাই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি।
এ বছর ৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ শহরের বিআইডব্লিউটিএ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এমএল সাবিত আল হাসান’ কয়লাঘাট এলাকায় কার্গো জাহাজ এসকেএল-৩ এর ধাক্কায় ডুবে গেলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয় শীতলক্ষ্যার তীরে।
লঞ্চের অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও নিখোঁজ হন বেশিরভাগ যাত্রী। পরে ৩৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনার তিন দিন পর ৩৪ জনকে হত্যার অভিযোগ এনে কার্গো জাহাজের চালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় মামলা করে বিআইডব্লিউটিএ। জাহাজ চালকসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর ৩ মে লকডাউনের মধ্যে নিয়ম না মেনে একটি স্পিডবোট শিমুলিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে কাঁঠালবাড়ী (পুরাতন ফেরিঘাট) ঘাটে যাওয়ার সময় শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে নোঙর করে রাখা বালুবোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। পরে ২৬ যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
বছরের শেষে এসে দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন এক অগ্নিকাণ্ডের সাক্ষী হয়েছে ঝালকাটির সুগন্ধা নদী; চলন্ত লঞ্চে পুড়ে অঙ্গার হয়েছে তিন ডজন প্রাণ।
২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরগুনায় যাওয়ার পথে রাত ৩টার দিকে আগুন ধরে যায় অভিযান-১০ লঞ্চে। রাতের কুয়াশা ঝেটিয়ে সুগন্ধা নদী আলোকিত করে তোলে সেই আগুন, প্রাণ বাঁচাতে নদীর শীতল পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন যাত্রীদের অনেকে।
কিন্তু উপরের দুই তলার বন্ধ কেবিনে যারা ঘুমাচ্ছিলেন, তাদের অনেকের আর বের হওয়ার সুযোগ হয়নি। সেই আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের সময় লেগেছে প্রায় তিন ঘণ্টা। ২৪ ডিসেম্বর দিনভর তল্লাশি চালিয়ে জানানো হয় ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর।
নৌপথের আরও একটি দুর্ঘটনা এবছর আলোচনার জন্ম দেয়। ২৭ অক্টোবর সকালে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া থেকে যানবাহন নিয়ে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘটে পৌঁছে পন্টুনে গাড়ি নামানোর সময় কাত হয়ে উল্টে যায় ফেরি শাহ আমানত।
কারও মৃত্যু না হলেও ফেরিতে থাকা ১৭টি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার ও আটটি মোটরসাইকেল ডুবে যায়। পরে সেগুলো উদ্ধার করা হয়। বেসরকারি ঠিকাদারের সহায়তা নিয়ে দুই সপ্তাহ পর ফেরিটিও সোজা করা হয়।
সড়কের নিরাপত্তাসহ যে নয় দফা দাবিতে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলন পুরো দেশকে অচল করে দিয়েছিল, সেই একই দাবিতে বাংলাদেশ ফের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেখল ২০২১ সালে।
নভেম্বরে ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহন মালিকদের চাপে সরকার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায়। এরপর বাসে আগের মত অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ২৪ নভেম্বর সড়কে সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সেই আন্দোলন আরও গতি পায়। পরদিন পথে পথে তাদের বিক্ষোভ-অবরোধে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
ওই পরিস্থিতিতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, ১ ডিসেম্বর থেকে বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য ‘হাফ’ ভাড়া চালু হবে। কিন্তু বেসরকারি বাস মালিকরা সাড়া না দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যায়।
২৯ নভেম্বর রাতে পূর্ব রামপুরায় বাসের চাপায় এক এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মৃত্যুর পর বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধরা। পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে পরিবহন মালিকরা শর্ত দিয়ে ঢাকার শিক্ষার্থীদের ‘হাফ’ ভাড়ার দাবি মানার ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। তাদের দাবি ছিল, কেবল ঢাকা মহানগরে নয়, ‘হাফ’ ভাড়া চালু করতে হবে সারা দেশে এবং সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টার বদলে তা হতে হবে ২৪ ঘণ্টার জন্য।
পরে ৫ ডিসেম্বরে সংবাদ সম্মেলন করে সব মহানগরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘হাফ ভাড়া’ নেওয়ার ঘোষণা দেন পরিবহন মালিকরা। তবে ঢাকার মতই সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাসে অর্ধেক ভাড়া দিতে পারবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বা সরকারি ছুটির দিনে অর্ধেক ভাড়া প্রযোজ্য হবে না। মহানগর ছাড়া দেশের অন্য কোনো জেলা বা উপজেলায় কিংবা দূর পাল্লার বাসে হাফ ভাড়া নেওয়া হবে না।
এ বছর রোজার মধ্যে ২৬ এপ্রিল রাতে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় মোশারাত জাহান মুনিয়া নামের এক কলেজছাত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। সেই রাতেই আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে মামলা করেন মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া।
সেখানে বলা হয়, ‘বিয়ের প্রলোভন’ দেখিয়ে সায়েম সোবহান আনভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন মুনিয়ার সঙ্গে। ওই বাসায় তার যাতায়াত ছিল। কিন্তু বিয়ে না করে তিনি উল্টো ‘হুমকি’ দিয়েছিলেন মুনিয়াকে।
তদন্ত শেষে ১৯ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। সেখানে বলা হয়, মুনিয়ার মৃত্যুর সঙ্গে আনভীরের কোনো ‘সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি’। পুলিশের ওই প্রতিবেদনে অনাস্থা (নারাজি) জানিয়ে তানিয়ার আবেদন খারিজ করে ঢাকার হাকিম আদালত আনভীরকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়।
এরপর ৬ সেপ্টেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ‘হত্যা ও ধর্ষণের’ অভিযোগ এনে মামলা করেন তানিয়া। সেখানে আনভীরের পাশাপাশি তার বাবা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, মা আফরোজা সোবহান, আনভীরের স্ত্রী সাবরিনা এবং শারমিন, সাইফা রহমান মিম, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা এবং ইব্রাহিম আহমেদ রিপনকে আসামি করা হয়।
আদালতের আদেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করছে।
একদল ছাত্রের চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এ বছর অনেকটা সময় উত্তাল ছিল সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার সময় গত ২৬ সেপ্টেম্বর ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে তিনটি প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে।
ওই কমিটি তদন্ত শেষে অভিযোগের ‘প্রমাণ পাওয়ার’ কথা জানিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে। শিক্ষার্থীরাও তাকে স্থায়ীভাবে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। এর মধ্যে ২৪ অক্টোবর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন সবার সামনে ‘বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টাও’ করেন।
দুদিন পর শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের স্থায়ী অপসারণের ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আশ্বাসে’ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে।
শেষ পর্যন্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে স্থায়ীভাবে অপসারণ না করে তিনটি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার ‘শাস্তি’ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
চট্টগ্রামের মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলার মোড় এবার ঘুরে গেছে পাঁচ বছর তদন্তের পর; তার স্বামী, পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারই এখন বাদী থেকে আসামি হয়ে গেছেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন তখনকার পুলিশ সুপার বাবুল। তার ঠিক আগেই চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন বাবুল আক্তার নিজেই। কয়েক মাস পর নানা নাটকীয়তার মধ্যে পুলিশের চাকরি ছাড়তে হয় তাকে।
পাঁচ বছর পর তদন্ত করে বাবুলকেই স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে পিবিআই। গত ১২ মে বাবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার আগে মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন জামাতা বাবুলকে আসামি করে মামলা করেন। আর বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই।
কিন্তু বাবুল আক্তার তাতে আপত্তি জানালে তা মঞ্জুর করে পিবিআইকে ‘অধিকতর তদন্তের’ নির্দেশ দেয় আদালত। একই ঘটনায় দুটি মামলার ভবিষ্যত এখন কীভাবে এগোবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্নে আলোচনা ছিল বছরজুড়ে।
২০২০ সালের ২৫ মার্চ মহামারীর শুরুতে আকস্মিকভাবে সাময়িক মুক্তি মেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার, যিনি দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের সাজা নিয়ে ২৫ মাস ধরে কারাগারে ছিলেন।পরিবারের আবেদনে সরকার ‘মানবিক বিবেচনায়’ সাজা স্থগিত করে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। শর্ত দেওয়া হয়, তাকে ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।
এবছর কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এবং অন্যান্য জটিলতায় তিন দফা হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় ৭৬ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে। তাকে বিদেশে নিতে পরিবারের দাবি নাকচ হয় কয়েকবার।
সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। পরে চিকিৎসকরা তার ‘পরিপাকতন্ত্রে’ রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসের কথা জানান।
এর মধ্যে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য আবারও আবেদন করা হয় খালেদা জিয়ার পরিবার-স্বজনদের পক্ষ থেকে। বিএনপির পক্ষ থেকে টানা আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারকে টলানো যায়নি।
সন্তানদের নিজের জিম্মায় পেতে বাংলাদেশি বাবার সঙ্গে জাপানি মায়ের আইনি লড়াই এ বছর আলোচনায় ছিল উচ্চ আদালতে।
জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে চলতি বছরের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।
মেয়েদের জিম্মা পেতে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নারী। তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলে বিচারক।
কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর হাই কোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সাথে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।
হাই কোর্টের সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালতে শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেয়।
দক্ষিণ জনপদের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে স্ল্যাব বসানো শেষে পিচ ঢালাই এবং অন্যান্য কাজ শুরু হয়েছে এ বছর। সব ঠিক থাকলে নতুন বছরের মাঝামাঝি সময়ে এ সেতু খুলে দেওয়া হবে যানবাহন চলাচলের জন্য। কিন্তু অন্য এক কারণে এ বছর বার বার আলোচনায় এসেছে পদ্মা সেতু।
২৩ জুলাই মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়ার কাছে পদ্মা সেতুর পিয়ারে ধাক্কা লেগে একটি ফেরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আহত হন অন্তত ২০ জন। এরপর ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত অন্তত পাঁচবার একই ধরনের ঘটনা ঘটে।
শুধুতে দুর্ঘটনা বলে ধরা হলেও বার বার একই ধরনের ঘটনা ঘটনায় সন্দেহের কথা বলতে শুরু করেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এর পেছনে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
প্রতিটি ঘটনায় ফেরির চালক ও কর্মীদের বরখাস্ত করা হয়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে তদন্তও করা হয়। শেষ পর্যন্ত শিমুলিয়া ও বাংলাবাজার ঘাটের মধ্যে ফেরি পারাপার বন্ধ রাখা হয়।
৩১ অগাস্ট ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে নৌ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “পদ্মা সেতু যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, এ ধরনের ধাক্কায় সেতুর কোনো ক্ষতি হবে না। ক্ষতি হবে আমাদের মনের। আজকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে বলছে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বিশ্বাসঘাতকতার জায়গায় চলে গেছে।”
প্রথম কোনো বাংলাদেশি সিনেমা হিসেবে চলতি বছরের কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল সিলেকশনে জায়গা করে নেয় নির্মাতা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের সিনেমা ‘রেহানা মরিয়ম নূর’, মূল চরিত্রে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনের অভিনয় হয় প্রশংসিত।
পরে ‘এশিয়া-প্যাসিফিক স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড’-এ দুই বিভাগে পুরস্কার জিতে নেয় বাংলাদেশের এ সিনেমা। নির্মাতা সাদ পান ‘জুরি গ্র্যান্ড প্রাইজ’। আর বাঁধন জিতে নেন সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার।
রেহানা মরিয়ম নূর নামে মেডিকেল কলেজের একজন সহকারী অধ্যাপকের জীবন সংগ্রামের গল্পে নির্মিত এ ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। অভিনয় করেছেন আফিয়া জাহিন জাইমা, কাজী সামি হাসান, আফিয়া তাবাসসুম বর্ন, ইয়াছির আল হক, সাবেরী আলমসহ আরও অনেকে।
কানে প্রদর্শনের পর ভ্যারাইটি, হলিউড রিপোর্টার, এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, স্ক্রিন ডেইলিসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে এসেছে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’; প্রকাশিত রিভিউয়ে নির্মাণ, গল্প ও অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য বিরল প্রাপ্তি।