২০২১: চিরবিদায়ের দীর্ঘ তালিকা

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে পার হল আরও একটি বছর; মৃত্যুর মিছিল এবারও ছিল দীর্ঘ। ২০২১ সালে রাজনীতি, চলচ্চিত্র, শিক্ষা, সাহিত্য, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেককে হারিয়েছে বাংলাদেশ। তাদের কেউ মারা গেছেন কোভিডে আক্রান্ত হয়ে, কারও প্রাণ গেছে অন্য জটিলতায়।

মাসুম বিল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2021, 09:21 AM
Updated : 31 Dec 2021, 09:58 AM
আয়শা খানম

বছরের দ্বিতীয় দিনই শোকের খবর আসে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়শা খানমের মৃত্যুতে। ক্যান্সারসহ নানা ধরনের জটিলতায় ভুগে ২ জানুয়ারি ঢাকার একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এই নারী নেত্রীর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সহসভাপতি আয়শা খানম ছিলেন বাষট্টির ছাত্রআন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক।

পাকিস্তান আমলে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের দাবিতে ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে পা রাখেন তিনি। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ঢাকায় শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করতে নামেন আয়শা খানম। ডামি রাইফেল হাতে ঢাকায় নারী শিক্ষার্থীদের মিছিলের যে ছবি আলোচিত হয়, সেখানে তিনিও ছিলেন।

ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বক্তৃতা দিয়েছিলেন আয়শা খানম৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজেকে যুক্ত করেন অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্যাতনের শিকার নারীদের পুনর্বাসন এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের সহায়তার কাজেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। আমৃত্যু তিনি ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি।

রাবেয়া খাতুন

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৩ জানুয়ারি চিরবিদায় নেন স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

অর্ধ শতাধিক উপন্যাসের রচয়িতা রাবেয়া খাতুন শিক্ষকতা করতেন, সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি বাংলা একাডেমির পর্ষদ সদস্য ছিলেন। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ১৯৯৩ সালে একুশে পদক এবং ২০১৭ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন।

গত শতকের পঞ্চাশের দশকে ছোট গল্প দিয়ে সাহিত্যের অঙ্গনে রাবেয়া খাতুনের বিচরণ ‍শুরু। ‘নিরাশ্রয়া’ তার প্রথম উপন্যাস।

তিনি কাজ করেছেন ইত্তেফাক, সিনেমা পত্রিকায়। তার নিজস্ব সম্পাদনায় পঞ্চাশ দশকে বের হত ‘অঙ্গনা’ নামের একটি মাসিক পত্রিকা। ঔপন্যাসিক রাবেয়া খাতুন বাংলাদেশের ভ্রমণসাহিত্যের অন্যতম লেখক।

রাবেয়া খাতুনের লেখা কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ‘মেঘের পর মেঘ’, ‘কখনও মেঘ কখনও বৃষ্টি’, ‘ধ্রুবতারা’। এছাড়া অসংখ্য নাটকও নির্মিত হয়েছে তার লেখা ধরে।

বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, ঢাকা লেডিজ ক্লাব, বিজনেস ও প্রফেশনাল উইমেন্স ক্লাব, বাংলাদেশ লেখক শিবির, বাংলাদেশ কথা শিল্পী সংসদ ও মহিলা সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।

মুজিবুর রহমান দিলু

মঞ্চ ও টেলিভিশনের অভিনেতা, সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলুর মৃত্যু হয় ১৮ জানুয়ারি। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল ৬৯ বছর বয়সী এই অভিনেতাকে। তার আর বাসায় ফেরা হয়নি ।

দিলুর অভিনয় শুরু মঞ্চ থেকে। ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। ১৯৭৬ সাল থেকে টেলিভিশনে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। বিটিভির কালজয়ী ধারাবাহিক নাটক সংশপ্তক এর মালু চরিত্রে অভিনয় মুজিবুর রহমান দিলুকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়।

মঞ্চে তিনি কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। ‘আমি গাধা বলছি’, ‘নানা রঙ্গের দিনগুলি’, ‘জনতার রঙ্গশালা’, ‘নীল পানিয়া’, ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘ওমা কী তামাশা’ তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক।

১৯৫২ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করা মুজিবুর রহমান দিলু পেশাগত জীবনে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। শিশুদের সংগঠন টুনটুনির সমন্বয়ক ছিলেন তিনি।

অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন নুরুল হক

নুরুল হক

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রথম নৌপ্রধান সাবেক নৌমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন নুরুল হক ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ জানুয়ারি মারা যান।

১৯৭২-৭৩ সালে নৌপ্রধানের দায়িত্ব পালন করা নুরুল হক দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

১৯৩৬ সালের ১২ জানুয়ারি ঢাকার জন্মগ্রহণ করেন নুরুল হক। যুক্তরাজ্যের ব্রিটানিয়া রয়্যাল নেভাল কলেজে পেশাগত প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৫৭ সালের ১ জানুয়ারি তিনি ব্রিটেন থেকে কমিশন পান।

ব্রিটেনের রয়্যাল নেভাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ১৯৫৮ সালে বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স এবং ১৯৬১ সালে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং স্পেশালাইজেশন কোর্স শেষ করেন নুরুল হক।

দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি বিভিন্ন জাহাজ ও ঘাঁটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তখনকার পাকিস্তান নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজে সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার অফিসার, ডেস্ট্রয়ার জাহাজে ইঞ্জিনিয়ার অফিসার, ঘাঁটির ইঞ্জিনিয়ার অফিসার এবং ট্রেইনিং স্কুলে স্টাফ অফিসার হিসেবে তিনি কাজ করেছেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম নৌবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন নুরুল হক। ১৯৭৩ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন।

এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান এবং পরে বাংলাদেশ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

জয়নুল হক সিকদার

বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প গোষ্ঠী সিকদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদার দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মার যান ১০ ফেব্রুয়ারি। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।

ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের গড়া সিকদার গ্রুপের ব্যবসা ছড়িয়ে আছে ব্যাংক ও বীমা, বিদ্যুৎ, ইকনোমিক জোন, এভিয়েশন, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মত নানা খাতে।

এর সহযোগী কোম্পানির মধ্যে রয়েছে পাওয়ার প্যাক পোর্টস, পাওয়ার প্যাক ইকনোমিক জোন, সিকদার ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পাওয়ার প্যাক হোল্ডিংস, সিকদার রিয়েল এস্টেট ও মাল্টিপ্লেক্স হোল্ডিংস। 

কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠান করেছেন জয়নুল হক সিকদার। ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ পোস্ট সিকদার গ্রুপেরই একটি প্রকাশনা।  

১৯৩০ সালের ১২ অগাস্ট আসামে জন্মগ্রহণ করেন জয়নুল হক সিকদার। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় পরিবারের সাথে তিনি বাংলাদেশে চলে আসেন।

দীর্ঘ সাত দশকের বেশি সময় ধরে তিনি দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন, পর্যটন, আর্থিক খাতসহ বিভিন্ন খঅতে যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, তাতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ কাজ করছেন।

শাহীন রেজা নূর। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন

শাহীন রেজা নূর

শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজুউদ্দীন হোসেনের ছেলে সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর ক্যান্সারের সাথে লড়ে মারা যান চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি।

ইত্তেফাকের সাবেক সাংবাদিক শাহীন রেজা নূর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ‘প্রজন্ম একাত্তর’ গড়ে তোলায় নেতৃত্ব দেন তিনি। জামায়াত নেতা আলী আহসান মো. মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনি সাক্ষী ছিলেন।

শাহীন রেজা নূর দীর্ঘদিন ধরেই কানাডায় বসবাস করছিলেন। সর্বশেষ তিনি ২০১৮ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন। যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবির আন্দোলনে থেকে শহীদ সন্তানদের নিয়ে গড়ে ওঠা সংগঠন ‘প্রজন্ম একাত্তর’র সভাপতি ছিলেন শাহীন রেজা নূর।

১৯৭৩ সালের নভেম্বর মাসে দৈনিক ইত্তেফাকের শিক্ষানবিশ সহ-সম্পাদক পদে যোগ দেন শাহীন। একটানা ১৬ বছর ইত্তেফাকে সাংবাদিকতা করার পর ১৯৮৮ সালে তিনি কানাডা যান। সেখানে মন্ট্রিয়ালে থেকে বাংলা সাপ্তাহিক প্রবাস বাংলা প্রকাশের সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের বার্তা বিভাগে অনুবাদক হিসেবে কিছুকাল কাজ করেছেন শাহীন রেজা নূর। জাতীয় রাজনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ের উপরও লেখালেখি করেছেন তিনি।

আলী হোসেন

‘কতো যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান’, ‘হলুদ বাঁটো মেহেন্দি বাঁটো’ সহ বহু জনপ্রিয় বাংলা গানের সুরকার সংগীত পরিচালক আলী হোসেন ১৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

আলী হোসেনের বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ কুমিল্লায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন আলী হোসেন। ১৯৬৬ সালে ‘ডাক বাবু’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার। তিনি মিউজিক কম্পোজার্স সোসাইটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন।

এটিএম শামসুজ্জামান

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের প্রবীণ অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার এটিএম শামসুজ্জামান মারা যান ২০ ফেব্রুয়ারি।

সেই ১৯৬০ এর দশক থেকে চার শতাধিক চলচ্চিত্রের বহু খল ও কমেডি চরিত্রকে অমর করে যাওয়া এই অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় তিনি ভুগছিলেন।

দীর্ঘ ছয় দশকের ক্যারিয়ারে অভিনয়ের জোরেই নিজের নামটিকে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পেরেছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। তবে তিনি ছিলেন একাধারে পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার। তার লেখা চিত্রনাট্যের সংখ্যা শতাধিক। অভিনয় করেছেন চার শতাধিক চলচ্চিত্রে।

এটিএম শামসুজ্জামানের জন্ম ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে। অভিনয়ের জন্য আজীবন সম্মাননার পাশাপাশি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এটিএম শামসুজ্জামান ২০১৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।

লাঠিয়াল, অশিক্ষিত, গোলাপী এখন ট্রেনে, পদ্মা মেঘনা যমুনা, স্বপ্নের নায়ক সিনেমার শামসুজ্জামান যেমন খল চরিত্রে ফ্রেমবন্দি হয়ে হয়েছেন, রামের সুমতি, ম্যাডাম ফুলি, যাদুর বাঁশি, চুড়িওয়ালায় তার কমেডি চরিত্রের কথাও মনে রেখেছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের দর্শকরা।

সৈয়দ আবুল মকসুদ

হঠাৎ করে শ্বাসকষ্টে ভুগে ২৩ ফেব্রুয়ারি চিরবিদায় নেন কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক, লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ।

বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া আবুল মকসুদ পরিচিত ছিলেন সমাজ, সংস্কৃতি ও রাজনীতির সমসাময়িক ঘটনাবলী নিয়ে সংবাদপত্রে লেখা কলাম এবং গবেষণামূলক প্রবন্ধের কারণে। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলায় জন্ম নেওয়া আবুল মকসুদের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৪ সালে, এম আনিসুজ্জামান সম্পাদিত সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকায়।

পরে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সমর্থিত সাপ্তাহিক 'জনতা'য় কাজ করেন কিছুদিন। ১৯৭১ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ বার্তা সংস্থায়। ২০০৮ সালের ২ মার্চ তিনি সেখানকার সম্পাদকীয় বিভাগের চাকরি ছেড়ে দেন।

১৯৮১ সালে তার কবিতার বই ‘বিকেলবেলা’ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘দারা শিকোহ ও অন্যান্য কবিতা’। মানবাধিকার, পরিবেশ, সমাজ ও প্রেম নিয়েও তিনি লিখেছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বুদ্ধদেব বসু, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মত প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবনী ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন আবুল মকসুদ।

আবুল মকসুদের লেখা বইয়ের সংখ্যা চল্লিশের বেশি। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

করোনাভাইরাস মুক্ত হলেও পরবর্তী বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ২৪ ফেব্রুয়ারি মারা যান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। ৮০ বছর বয়সি ইব্রাহিম খালেদ কচিকাঁচার মেলার একজন পরিচালক ছিলেন।

১৯৪১ সালে গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করা খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ পড়ালেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভূগোলে স্নাতকোত্তর করার পর তিনি আইবিএ থেকে এমবিএ করেন। ১৯৬৩ সালে যোগ দেন ব্যাংকিং পেশায়।

১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন ইব্রাহিম খালেদ। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারের পতনের কারণ অনুসন্ধানে সরকার যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল, তার নেতৃত্বে ছিলেন তিনি ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের দায়িত্ব ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সোনালী, অগ্রণী ও পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনিয়মের বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে বিভিন্ন সময়ে তিনি আলোচনায় এসেছেন।

এইচ টি ইমাম। ফাইল ছবি

এইচ টি ইমাম

কিডনি জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগে ৪ মার্চ প্রয়াত হন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। মাসখানেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের ৮২ বছর বয়সী এই সদস্য।

মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করা এইচ টি ইমাম ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

হোসেন তৌফিক ইমামের জন্ম ১৯৩৯ সালে, পরে তিনি এইচ টি ইমাম নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন। শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু হলেও পরে যোগ দেন সরকারি চাকরিতে।

১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের চাকরিতে থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিবও হন তিনি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে উপদেষ্টার দায়িত্ব দেন। প্রথমে তিনি জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১৪ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মুক্তিযোদ্ধা পরিচালনা বিষয়ে এইচ টি ইমামের রচিত কয়েকটি গ্রন্থকে বেশ গুরুত্ব দেন গ্রন্থ সমালোচকরা। এইচ টি ইমাম নিজে কখনও নির্বাচনে না দাঁড়ালেও তার ছেলে তানভীর ইমাম সিরাজগঞ্জের একটি আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।

মাহমুদ উস সামাদ

সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ১১ মার্চ। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের এই সহসভাপতির বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-৩ আসন (দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। পরের দুই নির্বাচনেও এ আসন থেকে নির্বাচিত হন এ আওয়ামী লীগ নেতা।

শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসা মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর বাড়ি ফেঞ্চুগঞ্জের নূরপুর গ্রামে।

ফাইল ছবি

মওদুদ আহমদ

কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে ১৬ মার্চ সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, প্রবীণ আইনজীবী মওদুদ আহমদ।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত চরিত্র ৮১ বছর বয়সি মওদুদ আহমদ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। জিয়াউর রহমানের সময়ে তিনি উপ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, পরে এইচ এম এরশাদের সময়ে উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন।

কবি জসীমউদ্দীনের জামাতা ব্যারিস্টার মওদুদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মপক্ষ সমর্থন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে প্রথম পোস্ট মাস্টার জেনারেল করা হয়।

পরে দেশের প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগ দেন মওদুদ। বিএনপি গঠনে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। জিয়া তাকে মন্ত্রী ও পরে উপপ্রধানমন্ত্রী করেছিলেন।

জিয়ার মৃত্যুর পর মওদুদ সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাত ধরেন। এরশাদের নয় বছরের শাসনামলে তিনি মন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন।

এরশাদ সরকারের পতনের পরও জাতীয় পার্টিতেই ছিলেন মওদুদ। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনি বিএনপিতে ফেরেন। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে তিনি আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত মওদুদ, আইন ও সমকালীন রাজনীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন। স্বায়ত্বশাসন থেকে স্বাধীনতা, বাংলাদেশ: শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ - প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশের রাজনীতি ও সামরিক শাসন, এ স্টাডি অব দ্য ডেমোক্রেটিক রেজিমস, কারাগারে কেমন ছিলাম, বাংলাদেশ: ইমার্জেন্সি অ্যান্ড আফটারম্যাথ ২০০৭-২০০৮ তার উল্লেখযোগ্য বই।

দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ

আতিকউল্লাহ খান মাসুদ

শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ২১ মার্চ মারা যান দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

আতিকউল্লাহ খান মাসুদ গ্লোব-জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তার সম্পাদনায় ১৯৯৩ সালে দৈনিক জনকণ্ঠ প্রকাশিত হয়।

এক সঙ্গে কয়েকটি জেলা থেকে পত্রিকাটি ছাপার ব্যবস্থা করায় প্রতিদিন সকালে দ্রুত সারা দেশে পৌঁছে যেত জনকণ্ঠ। বিষয়টি সে সময় বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে আলোড়ন তোলে, আতিকুল্লাহ খান মাসুদও আসেন আলোচনায়। অবশ্য পরে আর সে ব্যবস্থা থাকেনি।

১৯৫১ সালের ২৯ অগাস্ট মুন্সীগঞ্জ জেলার মেদিনী মণ্ডল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তরুণ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ২ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন।

স্বাধীনতার পর স্নাতক শেষ করে পুরোপুরি ব্যবসায় মনোনিবেশ করেন আতিকুল্লাহ খান মাসুদ। তার গড়ে তোলা গ্লোব-জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের ব্যবসা এখন ছড়িয়ে আছে নির্মাণ, আবাসন, কৃষি, প্রযুক্তি, ওষুধ, কেবল, মেটাল কমপ্লেক্স, প্রকাশনাসহ বিভিন্ন খাতে।     

নমিতা ঘোষ

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী নমিতা ঘোষ চিরবিদায় নেন ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর রাতে।

দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে সেরে উঠেছিলেন নমিতা ঘোষ; ফের নিয়মিত হয়েছিলেন গানে। কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ঢাকার একটি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। ৬৫ বছর বয়সে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

নমিতা ঘোষ মাত্র ১৪ বছর বয়সে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে প্রথম নারী শিল্পী হিসেবে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন করেছেন।

নমিতার মা জসোদা ঘোষ সে সময় রেডিওতে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন করতেন। ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা শুরু হলে ২৭ মার্চ বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে কেরাণীগঞ্জ হয়ে কুমিল্লা দিয়ে আখাউড়া সীমান্ত পার হন তারা।

আগরতলায় থাকতেই মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্রের কাজে যুক্ত হন নমিতা। পরে সেই প্রামাণ্যচিত্র যুদ্ধের সময় ভারতের বিভিন্ন সিনেমা হলে দেখানো হয়। পরে যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে।

হেফাজতে ইসলামের নেতা মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসকে সোমবার আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ । ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশের সভাপতি সাবেক সাংসদ মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩১ মার্চ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

হেফাজতে ইসলামের সাবেক নায়েবে আমির ওয়াক্কাসের বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তিনি কওমি মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) সিনিয়র সহসভাপতি ছিলেন।

এইচএম এরশাদের সময় ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে যশোর-৫ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মুফতি ওয়াক্কাস। পরে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে আবারও এমপি হন।

এরশাদ সরকারের পতনের পর ওয়াক্কাস জমিয়তে উলামায়ে ইসলামে যোগ দেন এবং ২০০১ সালে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন।

আসলামুল হক

স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ৪ এপ্রিল মারা যান ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আসলামুল হক। তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার সংসদে যান আসলামুল হক। একাদশ ও দ্বাদশ সংসদেরও এমপি ছিলেন তিনি।

আসলামুল হকের জন্ম ১৯৬১ সালে। সংসদের তথ্য অনুযায়ী আসলামুল হক বিবিএ পড়ছিলেন। ব্যবসায়ী আসলামুল হক মায়িশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা।

ইন্দ্রমোহন রাজবংশী। ছবি: সংগৃহীত

ইন্দ্রমোহন রাজবংশী

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭ এপ্রিল মারা যান বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা, লোকসংগীত শিল্পী ও গবেষক ইন্দ্রমোহন রাজবংশী।

সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ইন্দ্রমোহন রাজবংশীকে ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত করেছিল সরকার।

১৯৬৭ সালে ‘চেনা অচেনা’ চলচ্চিত্রের গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু করেন ইন্দ্রমোহন রাজবংশী।

তিনি ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালী, জারি, সারি, মুর্শিদি গান চর্চার পাশাপাশি লোকগান সংগ্রহ করে গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। সংগীত কলেজের লোকসঙ্গীত বিভাগের প্রধান হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করা এই শিল্পী বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা।

হাসান শাহরিয়ার

সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের সংক্রমণসহ নানা জটিলতায় ভুগে ১০ এপ্রিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসান শাহরিয়ার সর্বশেষ দৈনিক ইত্তেফাকে নির্বাহী সম্পাদক পদে ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

সিলেটের সুনামগঞ্জে জন্ম নেওয়া হাসান শাহরিয়ার উচ্চতর শিক্ষাজীবন শেষ করে সাংবাদিকতা শুরু করেন পাকিস্তানের ডন পত্রিকা দিয়ে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই তিনি দৈনিক ইত্তেফাকে যোগ দেন।

ইত্তেফাকের বাইরে নিউজউইক, আরব নিউজ, ডেকান হেরাল্ড পত্রিকার বাংলাদেশ সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

হাসান শাহরিয়ার তার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে বিভিন্ন সময়ে কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি, ওকাবের (ওভারসিজ করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সভাপতিসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

মিতা হক

বাংলাদেশের জনপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মিতা হক করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত জটিলতায় মারা যান চলতি বছরের ১১ এপ্রিল।

একুশে পদকজয়ী এই শিল্পীর স্বামী প্রয়াত অভিনেতা ও নির্দেশক খালেদ খান। খালেদ খান ও মিতা হক দম্পতির একমাত্র সন্তান ফারহিন খান জয়িতাও একজন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী।

১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন মিতা হক। চাচা রবীন্দ্র গবেষক ওয়াহিদুল হক, সনজীদা খাতুন ও উস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খানের কাছে তিনি গান শিখেছেন।

১৯৯০ সালে প্রকাশ হয় তার প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম ‘আমার মন মানে না’। এরপর বাংলাদেশ ও ভারত থেকে মোট ২৪টি অ্যালবাম প্রকাশ হয়।

তিনি সুরতীর্থ নামে তিনি একটি গানের স্কুল পরিচালনা করতেন। পাশাপাশি ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের রবীন্দ্র সংগীত বিভাগের প্রধান হিসেবেও কাজ করেছেন। রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন পরিষদের সহসভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন এ শিল্পী।

সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০২০ সালে মিতা হককে একুশে পদক দেয় সরকার। ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক পান তিনি।

মতিন খসরু

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৪ এপ্রিল মারা যান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিন খসরু কুমিল্লা-৫ আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য। ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ সরকারে তিনি আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

মৃত্যুর কিছুদিন আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন ৭১ বছর বয়সী এই আইনজীবী।

আইনপেশার পাশাপাশি রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন অনেক দিন।

মতিন খসরু আইনমন্ত্রী থাকাকালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ খোলা হয়।

এবারের একুশের বইমেলার সামগ্রিক তথ্য তুলে ধরে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

শামসুজ্জামান খান

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৪ এপ্রিল মারা যান বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। এর আগে দীর্ঘদিন একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

সাবেক শিক্ষক শামসুজ্জামান খান স্বাধীনতা পদক পদক ও একুশে পদকে ভূষিত। বাংলা একাডেমি পুরস্কারও রয়েছে তার ঝুলিতে।

অধ্যাপক শামসুজ্জামানের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৯ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার চারিগ্রামে। বিভিন্ন সময় মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজ, ঢাকা জগন্নাথ কলেজ, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্বিবিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্বিবিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন তিনি।

২০০৯ সালে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হন। এরপর তিন মেয়াদে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন। পরে তাকে একাডেমির সভাপতি করা হয়।

তিনি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। ইসলামী বিশ্বিবিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন।

লোকশিল্প গবেষক শামসুজ্জামানের রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা শিরোনামে ৬৪ খণ্ডে ৬৪ জেলার লোকজ সংস্কৃতির সংগ্রহশালা সম্পাদনা এবং ১১৪ খণ্ডে বাংলাদেশের ফোকলোর সংগ্রহমালা সম্পাদনা করেন তিনি।

জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে সোমবার শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী কবরী। ছবি: আব্দুল মান্নান

কবরী

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৭ এপ্রিল পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ ছেড়ে চিরবিদায় নেন কিংবদন্তী অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সাবেক সাংসদ সারাহ বেগম কবরী।

৭১ বছর বয়সী এ অভিনেত্রী দীর্ঘদিন ধরে কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তার ফুসফুসেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়।

গত শতকের ষাটের দশকে সেলুলয়েডের পর্দায় আবির্ভূত হয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে হিসেবে দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নেওয়া কবরী পরের অর্ধশতকে দুই শতাধিক সিনেমায় আলো ছড়িয়েছেন। শীর্ষ পাঁচ ঢাকাই নায়কের অভিষেক ঘটেছে তার হাত ধরেই।

১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্ম নেওয়া মিনা পাল মাত্র ১৪ বছর বয়সে নির্মাতা সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ চলচ্চিত্রে অভিষেকের মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠেন কবরী। তার সঙ্গে নায়করাজ রাজ্জাকের জুটির রসায়ন ঢাকাই ছবির ইতিহাসে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পায়।

‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’, ‘পরিচয়’, ‘অধিকার’, ‘বেঈমান’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘সোনালী আকাশ’, ‘অনির্বাণ’, ‘দীপ নেভে নাই’সহ অর্ধশতাধিক সিনেমার এই জুটিকে পরে ‘আমাদের সন্তান’ চলচ্চিত্রে বয়স্ক বাবা-মায়ের ভূমিকাতেও দর্শকরা দেখেছেন।

১৯৭৩ সালে ‘রংবাজ’ সিনেমায় দর্শক এক লাস্যময়ী কবরীকে আবিষ্কার করে। সেই চলচ্চিত্রের ‘সে যে কেন এল না, কিছু ভালো লাগে না’ গানটি এখনও বহু দর্শকের বুকে বাজে।

‘সাত ভাই চম্পা’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, কিংবা পরে ‘সুজন সখী’, ‘স্মৃতিটুকু থাক’, ‘সারেং বউ’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’সিনেমায় পর্দা মাতানো কবরীর ভাষায়, “জীবন হচ্ছে একটি চলচ্চিত্র।”

সেলুলয়েডের সেই রঙিন জীবন শেষে কবরীর পরের জীবন-চলচ্চিত্রও কম বর্ণময় ছিল না। রাজনীতিতে নেমে নবম জাতীয় সংসদে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ হয়েছিলেন তিনি।

২০০৬ সালে মুক্তি পায় কবরীর পরিচালার প্রথম চলচ্চিত্র ‘আয়না’। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক হিসেবেও যোগ দিয়েছিলেন।

২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামে দ্বিতীয় চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দিয়েছিলেন তিনি। সে কাজ আর তার শেষ হয়নি।

মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ ওয়াসীম

কবরীর মৃত্যুর রেশ না কাটতেই ১৮ এপ্রিল মারা যান সত্তর ও আশির দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ও প্রযোজক মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ ওয়াসীম।

দীর্ঘদিন ধরে কিডনি, ফুসফুস, উচ্চ রক্তচাপ ও চোখের জটিল সমস্যায় ভুগছিলেন এ অভিনেতা। তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

সত্তর ও আশির দশকজুড়ে ফোক ফ্যান্টাসি ও অ্যাকশন চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন ওয়াসিম; সেই সময়ে শীর্ষ নায়কের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি। তার অভিনীত দেড় শতাধিক চলচ্চিত্রের বেশিরভাগই সুপারহিট হয়।

১৯৭২ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরুর পর ১৯৭৪ সালে মহসিনের পরিচালনায় ‘রাতের পর দিন’ সিনেমার মাধ্যমে নায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটে ওয়াসীমের। প্রথম সিনেমাতেই দর্শকদের নজর কেড়ে কয়েক বছরের ব্যবধানেই ঢালিউডে নিজেকে শীর্ষস্থানে নিয়েছেন তিনি।

‘দ্য রেইন’, ‘ডাকু মনসুর’, ‘জিঘাংসা’, ‘কে আসল কে নকল’, ‘বাহাদুর’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘মানসী’, ‘দুই রাজকুমার’, ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’, ‘ইমান’, ‘রাতের পর দিন’, ‘আসামি হাজির’, ‘মিস ললিতা’, ‘রাজদুলারী’, ‘চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা’, ‘লুটেরা’, ‘লাল মেম সাহেব’, ‘বেদ্বীন’, ‘জীবন সাথী’, ‘রাজনন্দিনী’, ‘রাজমহল’, ‘বিনি সুতার মালা’, ‘বানজারান’ তার অভিনীত আলোচিত সিনেমা।

এস এম মহসীন

একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী, নাট্যশিক্ষক এস এম মহসীন করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা যান ১৮ এপ্রিল। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

চার দশকের বেশি সময় ধরে মঞ্চ ও টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এস এম মহসীন। অভিনয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের ২০২০ সালে একুশে পদক প্রদান করে সরকার। দীর্ঘদিন তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্য বিভাগ অনুষদের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। জাতীয় থিয়েটারের প্রথম প্রকল্প পরিচালক হিসাবে যুক্ত ছিলেন।

অনিমেষ আইচের পরিচালনায় ‘গরম ভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প’ নাটকের অভিনয় করে বোদ্ধামহলে প্রশংসিত হয়েছেন এ প্রবীণ অভিনয়শিল্পী। এটি ছাড়াও ‘মহর আলী’, ‘সাকিন সারিসুরিসহ বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘কবর’, ‘সুবচন নির্বাসনে’সহ বেশ কয়েকটি মঞ্চনাটকে তিনি কাজ করেছেন।

কামাল জিয়াউল ইসলাম

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক সভাপতি কামাল জিয়াউল ইসলাম মারা যান ৩ মে। দেশের বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের মূল কারিগর কে জেড ইসলাম নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন।

নির্মাণ ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান কে জেড ইসলামের বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

১৯৮১-৮২ মৌসুমে সেই সময়ের বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড বা বিসিসিবির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন কে জেড ইসলাম। ১৯৮৩ থেকে ১‌৯৮৭ পর্যন্ত ছিলেন বোর্ডের সভাপতি।   

তার সময়েই ১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখে বাংলাদেশ। ক্রীড়াক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০১ সালে পান জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার।

অনুপ ভট্টাচার্য

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও সুরকার অনুপ ভট্টাচার্য ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৬ মে।

ফুসফুসের জটিলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে ভুগছেন অনুপ ভট্টাচার্য। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।

১৯৪৪ সালের ১৪ জুলাই সিলেটের জকিগঞ্জে জন্ম নেওয়া এই শিল্পী ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বেতারে সংগীতের ক্যারিয়ার শুরু করেন। সে সময় তিনি নিয়মিত রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন।

একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যুক্ত হওয়ার পর অনুপ ভট্টাচার্য ভারতেও বিভিন্ন এলাকায় গান পরিবেশন করেন।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’ ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘নোঙর তোলো তোলোসহ বেশকটি সমবেত গানে কণ্ঠ দেন অনুপ ভট্টাচার্য।

রফিকুল ইসলামের গাওয়া ‘বৈশাখী মেঘের কাছে’ ও মিতালী মুখার্জির কণ্ঠে ‘সুখ পাখি রে’ গানটিসহ বহু গানের সুরকার অনুপ ভট্টাচার্য।

অধ্যাপক জিল্লুর আর খান

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. জিল্লুর আর খান ফ্লোরিডার ওরল্যান্ডোতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চলতি বছরের ২২ মে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের রোজবুশ ইমেরিটাস অধ্যাপক ছিলেন অধ্যাপক ড. জিল্লুর আর খান। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।

বিশ্বের একসময়ের সর্বোচ্চ ভবন ‘শিকাগো টাওয়ার’ এর স্থপতি এফআর খানের ভাই জিল্লুর আর খান শিক্ষকতা এবং মৌলিক লেখালেখির জন্যে বহু পুরস্কার পেয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে তার কমপক্ষে ৫০টি গবেষণা-প্রবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে। তার লেখা ১২টি গ্রন্থ সমাদৃত হয়েছে।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী এ বছর ২৫ মে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার রসুলপুর গ্রামে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর জন্ম। ১৯৭০ সালে বুয়েট থেকে স্নাতক করে দেশ ও বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করেছেন।

তিনি বাংলা একাডেমি এবং ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ার্সের ফেলো ছিলেন। ২০০৭-২০১৫ মেয়াদে জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি এবং সর্বশেষ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন হাবীবুল্লাহ সিরাজী। ২০১৮ সালে তাকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব দেয় সরকার।

তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৩২টি। এছাড়া তিনি দুটি উপন্যাস, দুটি প্রবন্ধ, একটি স্মৃতিকথা এবং ১০টির মতো ছড়াগ্রন্থ রচনা করেছেন।

হাবীবুল্লাহ সিরাজীর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে দাও বৃক্ষ দাও দিন, মোমশিল্পের ক্ষয়ক্ষতি, হাওয়া কলে জোড়া গাড়ি, নোনা জলে বুনো সংসার, স্বপ্নহীনতার পক্ষে, পোশাক বদলের পালা, বিপ্লব বসত করে ঘরে, ছিন্নভিন্ন অপরাহ্ন, সারিবদ্ধ জ্যোৎস্না, মিথ্যে তুমি দশ পিঁপড়ে, আমি জেনারেল ইত্যাদি।

সার্কের সাবেক মহাসচিব কিউএএমএ রহিম

বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগে ৩১ মে মারা যান দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) সাবেক মহাসচিব রাষ্ট্রদূত কিউ এ এম এ রহিম।

বুয়েটের শিক্ষকতা ছেড়ে ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন কূটনীতিক রহিম। স্বাধীনতার পর তিনি টোকিওতে বাংলাদেশ মিশনের পদে আসেন।

১৯৯৩ সাল থেকে প্রায় পাঁচ বছর পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাই কমিশনার ছিলেন তিনি। এরপর অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার হন এই কূটনীতিক। ২০০২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সার্কের সপ্তম মহাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন কিউ এ এম এ রহিম।

মহিউদ্দিন আহমেদ

দেশে বই প্রকাশে ‘বিরল অবদান’ রাখা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড- ইউপিএল এর প্রতিষ্ঠাতা মহিউদ্দিন আহমেদ ২১ জুন মারা যান।

প্রায় ২০ বছর ধরে পারকিনসন্সে ভোগা মহিউদ্দিন আহমেদ কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে উঠেছিলেন। পরে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। ৭৭ বছর বয়সে সেখানেই তিনি মারা যান।

১৯৪৪ সালে ফেনীর পরশুরামে জন্মগ্রহণ করেন মহিউদ্দিন আহমেদ। পাকিস্তান টাইমসে শিক্ষানবিশ সাংবাদিক হিসেবে তার কর্মজীবনের শুরু। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের (ওইউপি) পাকিস্তান শাখার সম্পাদক ছিলেন তিনি।

১৯৭২ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন মহিউদ্দিন আহমেদ। দুই বছর ওইউপি ঢাকা শাখার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে ওইউপির ঢাকা কার্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে তিনি নিজের প্রকাশনা সংস্থা ‘ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করেন।

মহিউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে ১৯৮১ সাল থেকে মোট ১৬ বার ‘জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্র’ পুরস্কার লাভ করে ইউপিএল। ১৯৯১ সালে তিনি স্বর্ণপদকে ভূষিত হন।

২০১২ সালে মহিউদ্দিন আহমেদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশ করেন। বাংলা ভাষার পাশাপাশি ভারত (পেঙ্গুইন) ও পাকিস্তানে (ওইউপি) ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় বইটি প্রকাশের ব্যবস্থা করেন তিনি।

প্রকাশনার পাশাপাশি মহিউদ্দিন আহমেদ লেখালেখিও করেছেন। ইউপিএল থেকে প্রকাশিত সমকালীন গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধের সংকলন সম্পাদনা করেছেন তিনি।

ফজল-এ-খোদা

‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানের গীতিকার ফজল-এ-খোদা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৪ জুলাই।

বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক ফজল-এ-খোদা দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতার সঙ্গে ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

১৯৬৩ সালে বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ফজল-এ-খোদা। তার লেখা ও আব্দুল জব্বারের গাওয়া ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি একাত্তরে স্বাধীনতাকামী বাংলার মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল।

এছাড়া ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না’, ‘কলসি কাঁধে ঘাটে যায় কোন রূপসী’, বাসন্তী রং শাড়ী পড়ে কোন রমণী চলে যায়’, আমি প্রদীপের মতো রাত জেগে জেগে’, ‘প্রেমের এক নাম জীবন’, ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো, পথের ধুলোয় লুটোবে’র মতো শ্রোতাপ্রিয় গান লিখে গেছেন তিনি। 

গান লেখার পাশাপাশি ছড়াকার, সংগঠক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন ফজল-এ-খোদা। শিশু কিশোর সংগঠন শাপলা শালুকের আসরের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। সত্তর দশকে তিনি শিশু কিশোরদের মাসিক পত্রিকা ‘শাপলা শালুক’ সম্পাদনা করেন।

তার লেখা ১০টি ছড়াগ্রন্থ, ৫টির কবিতার গ্রন্থসহ তার মোট ৩৩টি বই প্রকাশিত হয়েছে।

মুবিনুল হায়দার চৌধুরী।

মুবিনুল হায়দার চৌধুরী

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ৭ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

গত মার্চে বাথরুমে পড়ে গেলে তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়; দুই হাত, দুই পা আংশিক অবশ হয়ে পড়ে। হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগেও আক্রান্ত ছিলেন তিনি।

৮৭ বছর বয়সী মুবিনুল হায়দার ছিলেন অকৃতদার। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজে দান করা হয়।

১৯৩৫ সালে চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া মুবিনুল হায়দারের বেড়ে ওঠা ভারতের কলকাতায়। একসময় ভারতের কমিউনিস্ট দল সোশালিস্ট ইউনিটি সেন্টারে (এসইউসিআই) যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি দেশে ফেরেন।

মতাদর্শিক দ্বন্দ্বে জাসদ ভেঙে বাসদ গঠনের ক্ষেত্রে মূল কারিগর মনে করা হয় স্বাধীনতার পর ভারত থেকে শিবদাস ঘোষের দর্শন নিয়ে আসা মুবিনুল হায়দারকে। এরপর সেই বাসদ কয়েক ভাগে ভাগ হলে তিনি একটি অংশের নেতৃত্বে ছিলেন।

অরুণ দাশগুপ্ত

কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত এ বছর ১০ জুলাই চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে নিজের বাড়িতে মারা যান।

দৈনিক আজাদীর সহযোগী সম্পাদক অরুণ দাশগুপ্ত দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। অকৃতদার অরুণ দাশগুপ্তের বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

অরুণ দাশগুপ্তের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি। কলকাতায় পড়ালেখা শেষ করে শ্রমিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। লোকসেবক পত্রিকায় তার সাংবাদিকতার শুরু হয়। বাংলাদেশে ফিরে আসার পর শিক্ষকতাও করেছেন কিছুদিন।

১৯৭৩ সালে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন অরুণ সেনগুপ্ত। তখন থেকেই তিনি পত্রিকার সাহিত্য পাতা সম্পাদনা করতেন। এক সময় তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘দাদামনি’ হিসেবে।

অরুণ দাশগুপ্ত সাংবাদিকতার পাশাপাশি দীর্ঘসময় ধরে কবিতা এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন। তার রচিত দুটি গ্রন্থ হল ‘রবীন্দ্রনাথের ঋতুর গান ও অন্যান্য’ এবং ‘যুগপথিক কবি নবীন চন্দ্র সেন’।

সায়মন ড্রিং

একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর নিধনযজ্ঞের খবর যিনি সবার আগে পৌঁছে দিয়েছিলেন বিশ্বের কাছে, সেই ব্রিটিশ সাংবাদিক, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু সায়মন ড্রিং মারা যান এ বছর ১৬ জুলাই। রোমানিয়ার একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় তার হার্ট অ্যাটাক হয়।

রয়টার্স, টেলিগ্রাফ ও বিবিসির হয়ে সাইমন ড্রিং দীর্ঘদিন কাজ করেছে বৈদেশিক সংবাদদাতা, টেলিভিশন উপস্থাপক এবং তথ্যচিত্র নির্মাতা হিসেবে। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

চলতি শতকের গোড়ায় বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি টেরেস্ট্রিয়াল টেলিভিশন স্টেশন একুশে টেলিভিশনের যাত্রা শুরুর সময় সাইমন ড্রিংয়ের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়, তার হাত ধরে এ দেশে টেলিভিশন সাংবাদিকতা নতুন মাত্রা পায়।

১৯৪৫ সালের ১১ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের নরফোকে জন্ম নেওয়া সায়মন ড্রিং সাংবাদিকতা শুরু করেন ১৮ বছর বয়স থেকে। দেখেছেন ২২টি যুদ্ধ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লব। যুদ্ধক্ষেত্রের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আহতও হয়েছেন একাধিকবার।

১৯৭১ সালের ২৫মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যখন গণহত্যা শুরু করে, যুক্তরাজ্যের ডেইলি টেলিগ্রাফের সাংবাদিক সায়মন ড্রিং তখন ছিলেন ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ।

পাকিস্তানিদের নির্দেশে দেশ না ছেড়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকাসহ ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ঘুরে দেখেন। ৩০ মার্চ ডেইলি টেলিগ্রাফে প্রকাশিত হয় তার প্রতিবেদন ‘ট্যাংকস ক্রাশ রিভল্ট ইন পাকিস্তান’। সেটাই ছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ইংরেজি ভাষায় পাকিস্তানি গণহত্যার প্রথম বিবরণ।

একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানো এই ব্রিটিশ সাংবাদিককে ২০১২ সালে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননায় ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার।

অধ্যাপক আবদুল মতীন

অধ্যাপক আবদুল মতীন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এমিরেটাস অধ্যাপক আবদুল মতীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এ বছরের ১৬ জুলাই।

অধ্যাপক আবদুল মতীনের বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তার স্ত্রী অধ্যাপক হাসিনা মতীন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।

১৯৩৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানার ধিতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল মতীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে লেখাপড়া করে সেখানেই শিক্ষকতায় যোগ দেন।

অ্যান আউটলাইন অব ফিলোসফি, যুক্তির আলোকে, প্রতীকী যুক্তিবিদ্যা, দর্শন সাহিত্য ও সংস্কৃতিসহ বেশকিছু মৌলিক গবেষণা গ্রন্থ এবং অনুবাদ গ্রন্থ রয়েছে অধ্যাপক মতীনের। ‘দুই পৃথিবী’ নামে তার একটি কবিতার বইও তিনি লিখেছেন।

ফিলোসফি অ্যান্ড প্রোগ্রেসসহ কয়েকটি জার্নালের সম্পাদনা করা মতীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর মানববিদ্যা ও গোবিন্দ দেব গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক এবং দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন।

এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী

বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ জুলাই মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

১৯৪৫ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা জন্মগ্রহণ করেন এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী । ১৯৭০ সালে এএসপি হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন তিনি। ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২০০০ সালের ৭ জুন পর্যন্ত আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পুলিশ বাহিনী থেকে অবসরের পর তিনি পানি সম্পদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী।

ফকির আলমগীর (ফাইল ছবি)

ফকির আলমগীর

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ জুলাই মারা যান একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিল্পীর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

ষাটের দশক থেকে গণসংগীতের সঙ্গে যুক্ত ফকির আলমগীর ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও গণশিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য হিসেব ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে শামিল হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে।

স্বাধীনতার পর পাশ্চাত্য সংগীতের সঙ্গে দেশজ সুরের মেলবন্ধন ঘটিয়ে বাংলা পপ গানের বিকাশে ভূমিকা রাখেন ৭১ বছর বয়সী এ শিল্পী। সংগীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য সরকার ১৯৯৯ সালে ফকির আলমগীরকে একুশে পদক দেয়।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার কণ্ঠের বেশ কয়েকটি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে ‘ও সখিনা’ গানটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।

এছাড়া ‘মন তুই দেখলি না রে’, ‘ কালো কালো মানুষের দেশে’, মায়ের একধার দুধের দাম’, ’মন আমার দেহ ঘড়ি’, ‘আহারে কাল্লু মাতব্বর’, ‘ও জুলেখা’, ‘ঘর করলাম না রে আমি’, ‘সান্তাহার জংশনে দেখা’,  ‘বনমালী তুমি’সহ তার গাওয়া বহু গান আশি ও নব্বইয়ের দশকেও দারুণ জনপ্রিয় ছিল।

তিনি ছিলেন সাংস্কৃতিক সংগঠন ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠাতা, গণসংগীত চর্চার আরেক সংগঠন গণসংগীত শিল্পী পরিষদের সাবেক সভাপতি।

‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান’, ‘গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান’, ‘আমার কথা’, ‘যারা আছেন হৃদয় পটে’সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ হয়েছে তার।

কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ

আলী আশরাফ

ডায়াবেটিস, পিত্তথলির সংক্রমণের পাশাপাশি বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগে ৩০ জুলাই গত হন কুমিল্লার সংসদ সদস্য সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক আলী আশরাফ।

কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ ছিলেন সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। এ নিয়ে পঞ্চমবার তিনি জাতীয় সংসদে কুমিল্লার ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক এবং কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা এই রাজনীতিক ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ছিলেন।

অধ্যাপক গাজী সালেহ উদ্দিন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. গাজী সালেহ উদ্দিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭ অগাস্ট মারা যান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী সালেহ উদ্দীনের বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব এবং শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন। তিনি ছিলেন রাঙামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক।

খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি গাজী সালেহ উদ্দিন ছিলেন শহীদ পরিবারের সন্তান। অবসরের পর তিনি পাহাড়তলীতে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য ‘নৈতিক স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

জুনাইদ বাবুনগরী

সাম্প্রতিক সময়ে নানা ঘটনায় আলোচনায় থাকা ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় আমির জুনাইদ বাবুনগরী হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগে ১৯ অগাস্ট মারা যান।

কওমি মাদ্রাসার একটি বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এবং চট্টগ্রামের নূরানী তালীমুল কুরআন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব তিনি পালন করছিলেন। এছাড়া নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুতাওয়াল্লী এবং মাসিক মুখপত্র দাওয়াতুল হকের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তিনি।

শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক ‘অরাজনৈতিক’ সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়, যাতে ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও যুক্ত হয়। আহমদ শফীর মৃত্যুর পর আমির হন বাবুনগরী।

তবে বিরোধীরা হেফাজতে ইসলামকে ‘ভুল পথে’ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন বাবুনগরীর বিরুদ্ধে। শফীর সময়ের শেষ দিকে সরকারের সঙ্গে হেফাজতের যে সখ্য দেখা যাচ্ছিল, বাবুনগরী দায়িত্ব নেওয়ার পর সেখানে তৈরি হয় দূরত্ব।

আহমদ শফীর মৃত্যু ‘স্বাভাবিকভাবে হয়নি’ দাবি করে তার শ্যালকের করা মামলাতেও আসামি ছিলেন জুনাইদ বাবুনগরী। পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বাবুনগরীসহ ৪৩ জনের ‘দায়’ পাওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

বাবুনগরী অবশ্য ওই তদন্ত প্রতিবেদনকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যায়িত করে বলেছিলেন, আহমদ শফীর ‘স্বাভাবিক’ মৃত্যু হয়েছে।

মুস্তাহিদুর রহমান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০ অগাস্ট মারা যান।

মুস্তাহিদুর রহমানের বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই সাবেক শিক্ষক ওই বিভাগের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০০৪ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। পরে অধ্যাপক হিসেবে অর্থনীতি বিভাগ থেকে অবসর নেন।

বিচারপতি আমির হোসেন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি আমির হোসেন মারা যান এ বছর ২৪ অগাস্ট।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

১৯৫৭ সালের ৩০ নভেম্বর কিশোরগঞ্জের নিকলীতে জন্মগ্রহণ করেন আমির হোসেন। ১৯৮৪ সালে বিচার বিভাগে মুন্সেফ (সহকারী জজ) হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ২০০৯ সালে হন জেলা ও দায়রা জজ। ২০১৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে তিনি হাই কোর্টে নিয়োগ পান। দুই বছর পর তাকে স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর বিচারপতি আমির হোসেনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

বুলবুল চৌধুরী

ক্যান্সারে আক্রান্ত একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী মারা যান ২৮ অগাস্ট। লেখালেখির বাইরে পেশাগত জীবনে বুলবুল চৌধুরী সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। কাজ করেছেন দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন দৈনিকে।

বর্ষীয়ান এই কথাসাহিত্যিকের উপন্যাসগুলোর তালিকায় আছে ‘অপরূপ বিল ঝিল নদী’, ‘কহকামিনী’, ‘তিয়াসের লেখন’, ‘অচিনে আঁচড়ি’, ‘মরম বাখানি’, ‘এই ঘরে লক্ষ্মী থাকে’, ‘ইতু বৌদির ঘর’ ও ‘দখিনা বাও’।

তার আত্মজৈবনিক দু’টি গ্রন্থের নাম ‘জীবনের আঁকিবুঁকি’ ও ‘অতলের কথকতা’। ‘গাঁওগেরামের গল্পগাথা’, ‘নেজাম ডাকাতের পালা’, ‘ভালো ভূত’ আর ‘প্রাচীন গীতিকার গল্প’ নামক কিশোর গ্রন্থের রচয়িতাও তিনি।

সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিতে তিনি হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, জসীমউদ্দীন স্মৃতি পুরস্কার, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ব্র্যাক ব্যাংক সমকাল সাহিত্য পুরস্কারও পেয়েছেন।

শেখ আবদুল হাকিম

শেখ আবদুল হাকিম

জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক শেখ আবদুল হাকিম এ বছর ২৮ অগাস্ট মারা যান। ৭৪ বছর বয়সী এই লেখক ব্রংকাইটিসে ভুগছিলেন।

সেবা প্রকাশনীর কাজী আনোয়ার হোসেনের হাত দিয়ে যে মাসুদ রানার যাত্রা শুরু, ‘ঘোস্ট রাইটার’ হিসেবে এই সিরিজের আড়াইশ বই শেখ আবদুল হাকিমের লেখা।

মাসুদ রানা সিরিজের বইয়ের স্বত্ব দাবি করে আইনি লড়াইয়ের কারণে গত বছর আলোচনায় আসেন শেখ আবদুল হাকিম। হাই কোর্ট এক রায়ে সিদ্ধান্ত দেয় ওই সিরিজের আড়াইশ বইয়ের স্বত্ব আবদুল হাকিমের।

তার লেখা গোয়েন্দা কাহিনী ও অনূদিত বইগুলোও রোমাঞ্চপ্রিয় পাঠকদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।

ডা. লুৎফুল আনোয়ার কাদেরী

দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগে ২৯ অগাস্ট চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে মারা যান দেশের খ্যাতনামা নিউরোসার্জন অধ্যাপক ডা. লুৎফুল আনোয়ার কাদেরী (এল এ কাদেরী)। তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউ সার্জারি বিভাগের প্রথম বিভাগীয় প্রধান ডা. কাদেরী দেশের দ্বিতীয় নিউরোসার্জন। তিনি দুইবার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ছিলেন। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতি, সোসাইটি অব নিউরোসার্জন বাংলাদেশ, সিনিয়র ডকটরস ক্লাব, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতালের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন বিভিন্ন সময়ে।

একাত্তর সালে যুক্তরাজ্যে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলেন ডা. কাদেরী। ১৯৯০ সালের এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ডা. শামসুল আলম খান মিলন নিহত হওয়ার পর চট্টগ্রামে চিকিৎসক সমাজ ডা. কাদেরীর নেতৃত্বে রাজপথে প্রতিবাদে নেমেছিল।

বশীর আলহেলাল

লেখক ও গবেষক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং সাবেক পরিচালক বশীর আলহেলাল বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগে ৩১ অগাস্ট মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।

বশীর আলহেলালের প্রথম গল্পের বই ‘স্বপ্নের কুশীলব’। তার অন্যান্য গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘প্রথম কৃষ্ণচূড়া’, ‘আনারসের হাসি’, ‘বিপরীত মানুষ’, ‘ক্ষুধার দেশের রাজা’, ‘গল্পসমগ্র-প্রথম খণ্ড’।

এছাড়া ‘কালো ইলিশ’, ‘ঘৃতকুমারী’, ‘শেষ পানপাত্র’, ‘নূরজাহানদের মধুমাস’, ‘শিশিরের দেশে অভিযান’ ও ‘যে পথে বুলবুলিরা যায়’ তার লেখা উপন্যাস।

বশীর আলহেলালের জন্ম ১৯৩৬ সালের ৬ জানুয়ারি। ১৯৫৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় পড়াশোনা শেষ করে তিনি পত্রিকায়ও কাজ শুরু করেন। ১৯৬৮ সালে ঢাকায় আসার পর ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ এর নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ  গ্রহণ করেন এই লেখক।

১৯৬৯ সালের শুরুতে সহ-অধ্যক্ষ হিসেবে বাংলা একাডেমিতে নিযুক্ত হন। বাংলা একাডেমিতে প্রায় ২৪ বছরের কর্মজীবন কাটিয়ে ১৯৯৩ সালে পরিচালক হিসেবে তিনি অবসর নেন।

হাসিবুর রহমান স্বপন

সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসিবুর রহমান স্বপন কোভিড পরবর্তী জটিলতা নিয়ে তুরস্কের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ সেপ্টেম্বর মারা যান।

শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বপন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।

স্বপন ১৯৫৪ সালের ১৬ জুন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার দ্বারিয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করা এই রাজনীতিবিদ এক সময় জাতীয় পার্টি করলেও পরে বিএনপি হয়ে আওয়ামী লীগে আসেন। সংসদে তিনি সিরাজগঞ্জের ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনবার।  

নাদির শাহ

দীর্ঘদিন ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগে ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান সাবেক ক্রিকেটার ও বাংলাদেশে আইসিসির সাবেক প্যানেল আম্পায়ার নাদির শাহ। তার বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর।

খেলোয়াড়ী জীবনে নাদির শাহ ছিলেন লেগ স্পিনার। সঙ্গে ব্যাটিংও খারাপ করতেন না। ঢাকা লিগে দুই দশকের বেশি সময় খেলেছেন আবাহনী, মোহামেডান, বিমান, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, সূর্যতরুণ, আজাদ বয়েজ, ধানমন্ডি ও কলাবাগান ক্লাবের হয়ে।

পরে আম্পায়ারিং শুরু করে একসময় হয়ে ওঠেন দেশের এক নম্বর আম্পায়ার। ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করে ২০০৬ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আম্পায়ারিংয়ে অভিষেক হয় তার।

সব মিলিয়ে ৪০টি ওয়ানডে ও ৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ তিনি পরিচালনা করেন মাঠে দাঁড়িয়ে। টিভি আম্পায়ার হিসেবে কাজ করেন ৬ টেস্ট ও ২৩ ওয়ানডেতে। এছাড়াও ৭৩টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ও ১২৭টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে আম্পায়ারিং করেন তিনি।

অধ্যাপক সৈয়দ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ

ময়মনসিংহের ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান

৮০ বছর বয়সী সাবেক এই শিক্ষক নিউমোনিয়া ও বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন।  

অধ্যাপক সৈয়দ গিয়াসউদ্দিন আহমেদে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এর আগে প্রায় ৪০ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ও লোকপ্রশাসন বিভাগে শিক্ষকতা করেন তিনি।

ফরহাদ খান

ক্যান্সারের অসুস্থতার মধ্যেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১ অক্টোবর হাসপাতালে মারা যান লেখক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ খান।

বাংলা একাডেমির সাবেক পরিচালক ফরহাদ খানের বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। প্রবন্ধ সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৯ সালে ‘সাহিত্যিক মোহম্মদ বরকতুল্লাহ প্রবন্ধ সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছিলেন তিনি।

ফরহাদ খানের প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে প্রতীচ্য পুরাণ, বাংলা শব্দের উৎস অভিধান, চিত্র ও বিচিত্র, হারিয়ে যাওয়া হরফের কাহিনী, শব্দের চালচিত্র, নীল বিদ্রোহ, বাঙালির বিবিধ বিলাস। বাংলা একাডেমি ছোটদের অভিধানসহ কয়েকটি বইয়ের সম্পাদনার কাজেও তিনি যুক্ত ছিলেন।

তার কর্মজীবনের একটি অংশ কেটেছে বেতারের সঙ্গে। ১৯৬৫ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত বেতারে সংবাদ অনুবাদ ও পাঠক হিসেবে তিনি কাজ করেন। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বেতারের 'উত্তরণ' ও 'সংবাদ বিচিত্রা'র সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। পরে জার্মানির ডয়েচে ভেলের বেতার বিভাগে তিন বছর কাজ করেছেন ফরহাদ খান।

জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু

কোভিড জটিলতায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ অক্টোবর মারা যান জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

সাবেক সংসদ সদস্য বাবলু এইচ এম এরশাদের সরকারে উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র বাবলু বাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত শতকের ৮০ এর দশকের শুরুতে ডাকসুর জিএস থাকা অবস্থায় সামরিক শাসক এরশাদের দলে যোগ দিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন তিনি।

তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের উপদেষ্টা করেছিলেন সামরিক আইন প্রশাসক এরশাদ। পরে শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। বাবলুকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এবং পরে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী করা হয়েছিল।

১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বাবলু। পরে ২০১৪ সালে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এরশাদের নির্দেশে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।

অধ্যাপক এ এম হারুন-অর-রশীদ

বাংলাদেশে তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো যার লেখনীতে সহজবোধ্য হয়ে ধরা দিয়েছিল, সেই অধ্যাপক এ এম হারুন-অর-রশীদ মারা যান ৯ অক্টোবর।

একুশে ও স্বাধীনতা পদকে ভূষিত অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপক বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করা এম হারুন-অর-রশীদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোস সেন্টারের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

দেশ-বিদেশের বহু নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই অধ্যাপকের সঙ্গে নোবেলজয়ী পদার্থ বিজ্ঞানী আবদুস সালামের সখ্য ছিল, একসঙ্গে গবেষণাও করেছেন তারা। অধ্যাপক হারুন একমাত্র বাংলাদেশি যিনি পরপর তিন বার নোবেল পুরস্কার মনোনয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

বিজ্ঞানের উপর লেখা অধ্যাপক হারুনের বইগুলো দেশে বিজ্ঞান চর্চায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ওপর ইংরেজি ও বাংলায় পঞ্চাশটিরও বেশি বই লিখেছেন তিনি। ২০০৬ সালে তিনি ইউজিসি অধ্যাপক হয়েছিলেন।

রফিকুল হক 'দাদু ভাই'

‘দাদু ভাই’ হিসেবে পরিচিত শিশু সাহিত্যিক, ছড়াকার, শিশু সংগঠক, নাট্যকার ও সাংবাদিক রফিকুল হক মারা যান ১০ অক্টোবর।

সত্তরের দশকে গড়া শিশু কিশোরদের সংগঠন ‘চাঁদের হাটের’ প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক রফিকুল হক। তার আগে তার পরিকল্পনায় এবং তার তত্ত্বাবধানে দৈনিক পূর্বদেশে ‘চাঁদের হাট’ নামে ছোটদের একটি পাতা বের হত। তখন থেকে তিনি ‘দাদু ভাই’ নামে পরিচিতি পান।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর দেশে ফিরে আসা উপলক্ষে দৈনিক ‘পূর্বদেশ’পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় তার ‘ঘরে ফিরা আইসো বন্ধু’ শিরোনামে কবিতা বেশ আলোচিত হয়।

রফিকুল হক দাদুভাই বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, চন্দ্রাবতী একাডেমি পুরস্কার, নিখিল ভারত শিশুসাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

ইনামুল হক

হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর ১১ অক্টোবর মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক ইনামুল হক।

দীর্ঘকাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা এই অধ্যাপক নটর ডেম কলেজে পড়াকালীন ‘ভাড়াটে চাই’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন।

১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। এই দলের হয়ে তিনি মঞ্চে প্রথম অভিনয় করেন আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’ নাটকে।

মঞ্চনাটকের পাশাপাশি টিভি নাটকে অভিনয় ও নাট্যকার হিসেবেও দেখা গেছে ইনামুল হককে। তার স্ত্রী অভিনেত্রী লাকী ইনাম বর্তমানে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান।

মাহমুদ সাজ্জাদ

করোনাভাইরাস পরবর্তী জটিলতায় ভুগে ২৪ অক্টোর প্রয়াত হন মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রের অভিনেতা মাহমুদ সাজ্জাদ।

পরিচালক জহির রায়হানের ‘সংসার’, খান আতাউর রহমানের ‘ঝড়ের পাখি’, ‘আপন পর’’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন সাজ্জাদ।

কলেজ জীবন থেকেই মঞ্চনাটকে যুক্ত ছিলেন। নিয়মিত অভিনয় করেছেন টিভি নাটকেও। তার অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘সকাল সন্ধ্যা’।

আব্দুল বাসেত মজুমদার

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি প্রবীণ আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার মেরুদণ্ডের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগে ২৭ অক্টোবর মারা যান। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর এই সদস্যের বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

২০০১-০২ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করার আগে ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বাসেত মজুমদার।

বাংলাদেশে আইনজীবীদের তদারককারী কর্তৃপক্ষ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যানের পদেও তিনি দুই মেয়াদে ছিলেন।

অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় আইনপেশায় নিয়োজিত বাসেত মজুমদার এক দিকে দুস্থ আইনজীবীদের জন্য একটি ট্রাস্ট ফান্ড করেছিলেন, অন্যদিকে বহু মানুষকে বিনা পারিশ্রমিকে আইনি সহায়তা দেওয়ায় পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘গরিবের আইনজীবী’ হিসেবে।

হাসান আজিজুল হক। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

হাসান আজিজুল হক

বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগে ১৫ নভেম্বর প্রয়াত হন গত শতকের ষাটের দশকে বাংলা কথাসাহিত্যের বাঁক বদলের রূপকারদের একজন হাসান আজিজুল হক।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে তিন দশক অধ্যাপনার পর ২০০৪ সালে তিনি অবসরে গিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মানসূচক ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

একুশে পদকে ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত এই গদ্যশিল্পীর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আনন্দ পুরস্কারও ছিল তার মুকুটে।

‘সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য’, ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’, ‘জীবন ঘষে আগুন’র মতো গ্রন্থের গল্পগুলো বোদ্ধা পাঠকের মনযোগ কেড়ে নেয়। এগুলো ছাড়াও হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- নামহীন গোত্রহীন, পাতালে হাসপাতালে, আমরা অপেক্ষা করছি, রোদে যাবো, রাঢ়বঙ্গের গল্প।

বাংলা ছোট গল্পের ‘রাজপুত্র’ খ্যাতি পাওয়ার পর উপন্যাসে হাতে দেন হাসান আজিজুল হক। তার লেখা উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে বৃত্তায়ন, আগুনপাখি, সাবিত্রী উপাখ্যান। প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- চালচিত্রের খুঁটিনাটি, একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা, কথাসাহিত্যের কথকতা, অপ্রকাশের ভার, অতলের আধি, সক্রেটিস, কথা লেখা কথা, লোকযাত্রা অআধুনিকতা সংস্কৃতি।

চন্দর কোথায়’র মতো ভাষান্তরিত নাটকের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য লালঘোড়া আমি, ফুটবল থেকে সাবধানের মতো গল্পও এসেছে তার লেখনীতে।

আফজল খান

কুমিল্লার প্রভাবশালী রাজনীতিক আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজল খান মারা যান ১৬ নভেম্বর। অ্যাডভোকেট আফজল খান জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন; কুমিল্লা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

১৯৬৫ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রসংসদে ছাত্রলীগের হয়ে ভিপি নির্বাচিত এই রাজনীতিক ১৯৬৬–এর ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন।

আফজল খান ১৯৭৩ সালে কুমিল্লা পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কুমিল্লা শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

একাব্বর হোসেন

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেন ১৬ নভেম্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একাব্বর চারবার সংসদে টাঙ্গাইল-৭ আসনের ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত একাব্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক ১৯৯০ সালে মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন।

ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পর্যন্ত বাংলাদেশের বন্ধুর পথ পরিক্রমার অগ্নিসাক্ষী, জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম মারা যান ৩০ নভেম্বর।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন। স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত এই শিক্ষক, গবেষকের বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।

তিনিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম নজরুল অধ্যাপক এবং নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পরিচালক।

ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেওয়া রফিকুল ইসলাম সেই সময়ের দুর্লভ আলোকচিত্র ধারণ করেছেন নিজের ক্যামেরায়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর হাতে হয়েছেন নির্যাতিত। বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের এই প্রত্যক্ষ সাক্ষী সেইসব ইতিহাস গ্রন্থিত করে গেছেন তার লেখায়।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রথম গ্রন্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাসের প্রথম গ্রন্থটিসহ প্রায় ৩০টি বই তার হাত দিয়েই পেয়েছে বাংলাদেশ।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য রফিকুল ইসলাম ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসেরও উপাচার্য ছিলেন। ২০১৮ সালে সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক করে নেয়।

শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী

মুশতারী শফী

মুক্তিযুদ্ধের শব্দসৈনিক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির আন্দোলনের অন্যতম নেতা শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ২০ ডিসেম্বর। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর; শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি।

১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া মুশতারী শফী ছিলেন চট্টগ্রামসহ সারাদেশের প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। চট্টগ্রামের প্রায় সব নাগরিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন সক্রিয়।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে চট্টগ্রাম মহানগরীর এনায়েত বাজারে মুশতারী শফীর বাড়িতেই কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক আলোচনা হয়েছিল। শব্দসৈনিক বেলাল মোহাম্মদের সঙ্গে বেতারকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন ডা. মোহাম্মদ শফী ও তার স্ত্রী মুশতারী। একাত্তরের শুরুর সময় থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, সেবা ও অর্থায়নসহ নানা কাজে যুক্ত ছিলেন তারা।

মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র বাসায় রাখায় ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল ডা. মোহাম্মদ শফী এবং মুশতারীর ভাই এহসানুল হক আনসারীকে স্থানীয় রাজাকাররা ধরে নিয়ে যার। পরে তাদের হত্যা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। এরপর ভারতে গিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দ সৈনিক হিসেবে কাজ করেন মুশতারী শফী।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গত শতকের ৯০ এর দশকে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করলে তাতে সক্রিয় হন মুশতারী শফী। জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পরও আন্দোলন এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখেন তিনি।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে প্রায় এক দশক আগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনেও অনুপ্রেরণাদানকারী হিসেবে ছিলেন মুশতারী শফী। তিনি মহিলা পরিষদে যুক্ত ছিলেন এবং সর্বশেষ উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতি ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য ২০১৬ সালে মুশতারী শফীকে ফেলোশিপ দেয় বাংলা একাডেমি। ২০২০ সালে তিনি বেগম রোকেয়া পদক পান।