২০২০: রেমিটেন্সের উল্টো পিঠে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা

যাদের পাঠানো অর্থে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত হচ্ছে মজবুত, সেই প্রবাসী শ্রমিকদের কষ্ট প্রকট হয়ে ফুটে উঠল বিদায়ী বছরে করোনাভাইরাস মহামারীতে।

মাসুম বিল্লাহগোলাম মুজতবা ধ্রুব ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2020, 05:03 AM
Updated : 27 Dec 2020, 05:03 AM

বছরের শুরুতে বিভিন্ন দেশে মহামারীর প্রাদুর্ভাবে দলে দলে ফিরতে শুরু করেছিলেন এই প্রবাসী শ্রমিকরা, দেশে ফেরার পর কোয়ারেন্টিনের শর্ত মানতে গিয়ে অসন্তোষ জন্মেছিল তাদের মধ্যে।

এরপর কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে বিমান না পেয়ে নিদারুণ ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয় তাদের; নামতে হয় বিক্ষোভে; ঠিক সময়ে যেতে না পেরে চাকরিটিও হারিয়ে বসেন অনেকে।

এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিশোরী উম্মে কুলসুমের লাশ হয়ে ফেরার ঘটনা প্রবাসে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি নতুন করে সামনে আনে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা কোটি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স। দেশের জিডিপিতে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

মহামারীর মধ্যেও সব ধারণা ভুল প্রমাণ করে রেমিটেন্সে একের পর এক রেকর্ড বাংলাদেশের রিজার্ভকেও নিয়েছে অনন্য উচ্চতায়। তবে তার উল্টো দিকেই ছিল সেই রেমিটারদের আশা ভঙ্গের গল্প।

মহামারীকালে প্রবাস থেকে মায়ের কোলে ফেরা; যদিও উদ্বেগ ছিল পুনরায় ফিরে যাওয়া নিয়ে।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন (৪৫) তারই উদাহরণ।

মহামারীর ঠিক আগে মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মালয়েশিয়া থেকে ছুটি নিয়ে দেশে এসেছিলেন হোটেলের কর্মচারী আনোয়ার। আর ফিরতে না পেরে এখন কাটাচ্ছেন বেকার জীবন।

আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যদি একেবারে দেশে চলে আসব চিন্তা করতাম, তাহলে সব কিছু গুছিয়ে কিছু টাকা সাথে নিয়ে আসতে পারতাম। এখন যা এনেছিলাম, মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে প্রায় সবই শেষ।”

মালয়েশিয়ায় চাকরি থাকাকালে প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা দেশে পাঠাতেন তিনি, তাতে স্বচ্ছন্দেই চলত পরিবার।

“এখন আয়ের কোনো পথ নেই বলে চরম আর্থিক সঙ্কটে আছি। না পারছি ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে, আর না পারছি কাউকে সেই কথা বলতে। আমাদের ভবিষ্যত এখন অনিশ্চিত।”

কুয়েতে আর যাওয়া হবে কি না, তা জানা নেই বলে সেদেশে নিজের যা কিছু ছিল তাই নিয়ে ফিরে আসেন এই বাংলাদেশি।

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, ১ এপ্রিল থেকে ৩০ নভেম্বর নাগাদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নানা কারণে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮ জন কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৮৪ জন পুরুষ এবং ৩৯ হাজার ২৭৪ জন নারী কর্মী।

ফেরার এই মিছিল শুরু হয় বছরের শুরুতে, ফেব্রুয়ারিতে ইতালিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিলে সেদেশ থেকে দলে বাংলাদেশিরা ফিরতে থাকেন।

দেশে সংক্রমণ এড়াতে ইতালিফেরতদের প্রথমে বিমানবন্দরের কছে হজ ক্যাম্প ও গাজীপুরে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেখানকার ব্যবস্থাপনায় অসন্তুষ্ট হয়ে বিক্ষোভে নামলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের শ্লেষাত্মক সমালোচনা শুনতে হয়েছিল প্রবাসী কর্মীদের।

বছরের শুরুতে দেশে ফেরার পর হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়েছিল ইতালি ফেরত বেশ কয়েকজন।

মার্চে বিমান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। স্থবির হয়ে পড়া বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন দেশে কাজ হারিয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের বিমান বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরিয়ে আনে।

মহামারীকালে দেশে ফেরার পর এই প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিনে থাকার বাধ্যবাধকতায় কিছু কিছু স্থানে তাদের বাড়ি স্থানীয়রাই ঘিরে ফেলে অনেকটা একঘরে ফেলে বলেও খবর আসে।

জুলাইয়ের দিকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে বিমান চলাচল সীমিত আকারে শুরু হলে প্রবাসী শ্রমিকরা কর্মস্থলে ফিরে যেতে চাইলেও বিপত্তি দেখা দেয় বিমানের টিকেট নিয়ে।

হাতে গোনা এয়ারলাইন্সের মাত্র কয়েকটি ফ্লাইট চলায় টিকেট হয়ে যায় সোনার হরিণ; টিকেট না পেয়ে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা নিয়ে অনেককে থেকে যেতে হয় দেশে।

তেমনই একজন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির মাহবুব আলম; তিনি কাজ করতেন বাহরাইনে।

গত অগাস্টে ঢাকায় এসে টিকেট না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “আমার কাছে একজন ট্রাভেল এজেন্ট বাহরাইনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না বলে এয়ার এরাবিয়ার টিকিট সংগ্রহ করে দেওয়ার কথা বলে দেড় লাখ টাকা চেয়েছে। কিন্তু এত দামে টিকিট কেনা সম্ভব নয় বলে কেনা হয়নি, আর বাহরাইনে যেতেও পারিনি।”

চাকরি হারানোর শঙ্কায় বিমানের টিকেট পেতে বছরের মাঝামাঝিতে বিক্ষোভে নেমেছিল প্রবাসী কর্মীরা।

একদিকে টিকেট নেই, অন্যদিকে চাকরির নিয়োগপত্রের মেয়াদ ফুরিয়ে যাচ্ছে; এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যগামী কয়েক হাজার প্রবাসীকর্মী টানা কয়েক দিন ঢাকায় বিক্ষোভ করে।

এরপর সরকারের ‍উদ্যোগে বিমানের টিকিট সঙ্কট কিছুটা কাটার পাশাপাশি ভিসা ও চাকরির নিয়োগপত্রের মেয়াদও বাড়ানো হলে কিছুটা স্বস্তি ফেরে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে।

এরমধ্যে ইতালিগামী কয়েক বাংলাদেশির মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়লে দেশটি বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বন্ধ করে দিলে দেখা দেয় নতুন সঙ্কট।

এতসব সঙ্কট পেরিয়ে যারা বিদেশে কর্মস্থলে ফিরতে পেরেছেন, তাদের অনিশ্চয়তা যে কেটে গেছে, তা বলার সময় যে এখনও আসেনি, তার উদাহরণ ইতালিতে ফিরে যাওয়া গাজী কুতুব উদ্দিন।

সৌদি আরবে ফেরার টিকেটের জন্য অক্টোবরে রাস্তায় নেমেছিলেন প্রবাসীরা

এ বছরের মার্চে দেশে এসে প্রায় ৭ মাস বেকার জীবন কাটিয়ে অক্টোবরে ইতালিতে ফিরেছেন তিনি। কিন্তু যে রেস্তোরাঁয় তিনি কাজ করতেন, তা এখনও বন্ধ।

কুতুবউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রেস্টুরেন্টটির মূল ব্যবসা পর্যটকদের নিয়ে। এখন পর্যটক নেই, তাই কেনা-বেচা কম বলে মালিক এটি বন্ধ রাখবেন বলে জানিয়েছেন।”

মহামারীর আগে দেশে পরিবারের খরচ চালাতে মাসে অন্তত এক লাখ টাকা পাঠাতেন কুতুবউদ্দিন। এখন কাজ না থাকায় ইতালি সরকারের থেকে পাওয়া সহযোগিতার উপর নির্ভর করে নিজে কোনোভাবে টিকে আছেন।

তিনি বলেন, “যাদের বৈধ কাগপপত্র নেই, তারা রয়েছে আরও সমস্যায়। এভাবে চলতে থাকলে আর্থিক সঙ্কটের কারণে বহু মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে।”

মহামারীর শুরুতে শাহজালাল বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে ফেরত স্বজনদের অপেক্ষায় তাদের পরিবার।

রেমিটেন্স বাড়লেও চ্যালেঞ্জ সামনে

অভিবাসন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য বলছে, কোভিড-১৯ মহামারীর আগে বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার লোক বিদেশে যেত, বছরের হিসেবে তা দাঁড়ায় ৬ লাখের মতো।

এবার করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ প্রবাসী এরই মধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন। অর্থাৎ প্রায় ১০ লাখের কাছাকাছি লোক দেশের বাইরে যেতে পারেননি।

বছরের শুরুতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছিলেন, ২০২০ সালে কম করে হলেও সাড়ে সাত লাখ কর্মী বিদেশে পাঠানোর লক্ষ্য ধরেছেন তিনি।

বাংলাদেশের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি জমাতে পেরেছে ১ লাখ ৯০ হাজারের মতো জন, যাদের ৯৬ শতাংশ গেছে প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগে। এপ্রিল-জুন পর্যন্ত লকডাউনের কারণে একজনকেও পাঠানো যায়নি। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে গেছে মাত্র ৮ হাজার জন।

মহামারী শুরুর পরপর চলতি বছরে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় (রেমিটেন্স) গত বছরের প্রায় চার ভাগের একভাগ কমবে বলে বিশ্ব ব্যাংক আভাস দিলেও তার উল্টোটি ঘটেছে। এপ্রিলে রেমিটেন্স কমলেও তারপর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।

মহামারীর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৯০ কোটি ৪৪ লাখ (১০.৯০ বিলিয়ন) ডলার, যা গত স্বাভাবিক বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বা ৪১ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে পাঁচ মাসে এত রেমিটেন্স আগে কখনও আসেনি। জুলাইয়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আসে, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।

রেমিটাররা যখন সঙ্কটে তখন রেমিটেন্স বাড়ার কারণ কী- তা খুঁজতে গিয়ে বিশ্ব ব্যাংক বলছে, মহামারীর কারণে বিদেশে সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদেশে অর্থ ব্যয়ের সুযোগ কমে গেছে বলে প্রবাসীরা দেশে থাকা স্বজনদের বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন। আর হুন্ডি ছিল বন্ধ, বিপরীতে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠালে সরকার দিচ্ছে প্রণোদনা। তা রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।

অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর সতর্ক করে বলছেন, “একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, এখন উপার্জন বা কাজের টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন না তারা (প্রবাসী)। জমানো টাকা যেটা ছিল সেখান থেকেই অথবা অন্য কারও কাছ থেকে ধার করে পরিবারের-পরিজনের বিপদের দিনে কিছু পাঠাচ্ছেন। সেটা ফুরিয়ে গেলে আর পাঠাতে পারবেন না।”

প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদের অর্থ পাঠানোর পরিমাণ যদি ভবিষ্যতে কমে যায়, তার সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানির পথ যদি আগের মতো না খোলে, তাহলে দেশের জন্য বড় সঙ্কট যে সামনে তা স্পষ্ট।

এ বিষয়ে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রথমত আমাদের সরকারের চেষ্টা থাকা দরকার, যেন প্রবাস থেকে কর্মীরা ফেরত না আসে।

“এজন্য বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগটা বাড়াতে হবে। পাশপাশি দেশে যারা ফিরে এসেছেন, কিন্তু যেতে পারছেন না, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাটা করতে হবে।”

পাশাপাশি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে দেশের কর্মীরা যেন আরও প্রশিক্ষিত হয়ে বিদেশে যেতে পারেন, সেজন্য এখন থেকেই সরকার ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর প্রস্তুতি রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে আটকেপড়া প্রবাসীদের ফেরানোর কাজ সরকার ‘খুব ভালোভাবেই’ করেছে। যারা ফিরতে পারবেন না, তাদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রণোদনারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মালয়েশিয়ায় পুনরায় ফিরতে না পারার অনিশ্চয়তায় এই প্রবাসীরা।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে আবার বিভিন্ন দেশ তাদের দরজা বন্ধ করছে। তবে তা বাংলাদেশিদের শ্রমবাজারে বড় প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। প্রবাসী শ্রমিকদের প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ সৌদি আরবে যান। এর বাইরে দুবাই, কুয়েত, কাতারসহ কয়েকটি দেশেও বেশ সংখ্যক শ্রমিক যান।

দীর্ঘ সময় এই সব দেশে লোক পাঠানো বন্ধ থাকলেও এখন শর্ত সাপেক্ষে সেইসব দেশ কর্মী নিচ্ছে বলে অবস্থার ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুধু প্রবাসী কর্মীরাই নন, মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

“বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করে এমন ১৬০০ এজেন্সিতে অন্তত ৪০ হাজার কর্মী রয়েছে, যাদের বেতনসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি মাসে এজেন্সি মালিকদের আনুমানিক ৪৫ কোটি টাকা খরচ হত। তাছাড়া প্রায় এক লক্ষ লোকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।”

কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে কোনো আয় না থাকায় তাদের দীর্ঘ সময়ে অন্তত ২০০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে দাবি করে নোমান বলেন, “সেটা পাওয়া গেলে আবারও এই ক্ষেত্রে যারা কাজ করছেন তার ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারবে।”

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, মহামারীরে ক্ষত কাটিয়ে উঠতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে এক ছাতার নিচে এসে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

মহামারীর মধ্যে সঙ্কটে পড়া প্রবাসী কর্মীদের জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা চাই, সরকার তাদের জন্য যে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, তা যেন তারা এবং তাদের পরিবার ভোগ করতে পারে।”

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন ওই সভায় বলেন, পাঁচটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছেন তারা। প্রথমত, যারা বিদেশে আছেন, তারা কীভাবে সেখানে ভালোভাবে থাকতে পারেন। দ্বিতীয়ত, যারা ফিরে আসতে চাচ্ছেন, তাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন কীভাবে নিশ্চিত করা যায়। তৃতীয়ত, যারা ফেরত এসেছেন, তাদের কীভাবে আবার পাঠানো যায়। চতুর্থত, যারা দেশেই থাকবেন, তাদেরকে কীভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়। সর্বশেষ, নতুন করে কীভাবে আবার বৈদেশিক কর্মসংস্থান শুরু করা যায়।

বিদেশফেরত কর্মীদের কর্মসংস্থান তৈরির জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছে সরকার।

মন্ত্রী বলেন, দক্ষ কর্মী তৈরির লক্ষ্যে দেশে ৬৪টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) ও ৬টি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলোজি (আইএমটি) চালু রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ৪০টি টিটিসি নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে।