সারা দিন ধরে স্লোগান শেষে তাদের কণ্ঠে তখন গান। সুর করে গাইছিলেন- ‘সা..কি..ব..আ..ল..হা..সা..ন..’।
মাঠের এক কোণায় আইসিসি টিভিতে তখনও সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ম্যাচ সেরা সাকিব।
এমনিতে বাংলাদেশের জয়ের পর গান একসময় নিয়মিতই শোনা যেত। দারুণ কোনো জয়ের পর ড্রেসিং রুমে গলা ফাটিয়ে গাওয়া হতো ‘আমরা করব জয়।’ সেটিই যেন হয়ে গিয়েছিল আনুষ্ঠানিক বিজয় সংগীত।
বাংলাদেশের জয় ইদানিং হয়ে গেছে নিয়মিত ঘটনা; বিজয় সংগীতে কোরাস ধরার সেই আবেদনটাও যেন হারিয়ে গেছে!
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে স্মরণীয় জয়গুলির একটি ছিল সেটি। সেমিফাইনালের সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে জয়ের বিকল্প ছিল না। ২৬৬ রান তাড়ায় টিম সাউদির সুইং আর অ্যাডাম মিলেনের গতিতে বাংলাদেশ প্রথম চার ব্যাটসম্যান ফিরে গিয়েছিলেন ৩৩ রানে।
দলের অবস্থা দেখে আস্তে আস্তে ফাঁকা হতে থাকে বাংলাদেশি দর্শকে ঠাসা গ্যালারি। বিসিবি কর্তাদের অনেকেও বেরিয়ে যান হতাশ হয়ে।
কিন্তু পরে তাদের আরেক দফা হতাশায় পুড়তে হয়েছিল সেদিন। দলের অসাধারণ জয়ের মুহূর্তের সাক্ষী হতে পারেননি যে!
সাকিব আর মাহমুদউল্লাহ সেদিন করেছিলেন সেঞ্চুরি। বাংলাদেশ জিতেছিল ৫ উইকেটে।
সেদিন ইনিংসের শুরুতে দলের বিপর্যয়ের মধ্যেও আশা নিয়ে যারা গ্যালারিতে থেকে গিয়েছিলেন, দলকে উৎসাহ দিতে গলা ফাটিয়ে গেছেন অক্লান্তভাবে, রোমাঞ্চকর সেই জয়ের অংশীদার ছিলেন তারাও।
বিজয় সংগীত শোনার লোভেই ড্রেসিং রুমের যতটা কাছে পারা যায়, গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম আমি।
অবশ্য অতটা কাছে না গেলেও চলত। ‘আমরা করব জয়’ শোনা যাচ্ছিল বেশ দূর থেকেই।
দলের বাইরে ‘অন্তর্মুখী’ হিসেবে পরিচিত হলেও ড্রেসিং রুমে বা দলের ভেতের যে কোনো আয়োজনে সবচেয়ে বেশি প্রাণবন্ত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। ড্রেসিং রুমে সেদিনের উদযাপনেও তিনিই ছিলেন নেতা। তার উচ্চকিত কণ্ঠই বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছিল সবচেয়ে বেশি।
ড্রেসিং রুমে এবার বিজয় সংগীত হলো না। তবে তা পুষিয়ে দিলেন ম্যাচ শেষে গ্যালারিতে থেকে যাওয়া দর্শকদের ওই অংশ। দিনের নায়কের নাম তারা কণ্ঠে ধারণ করলেন সুরে সুরে।
গ্যালারির ভাঙা হাটে সেই সুর তৈরি করল অদ্ভুত মাদকতা। মাঠের স্বেচ্ছাসেবক, নিরাপত্তাকর্মী, আইসিসির কর্মকর্তারা- সবাই উপভোগ করলেন সেই উদযাপন।
গানের সুরে নিজের নাম স্পর্শ করল সাকিবকেও। সাক্ষাৎকার দেওয়া শেষে গাইতে থাকা দর্শকদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লেন।
আর তাতে দর্শকরা যেন মেতে উঠলেন দুনিয়া জয়ের উল্লাসে!