একজন ক্রেইগ ডুরাডু এবং ভারতের পেস বিপ্লব

বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ এখনও অনেকটা দূরে। তবে তার আগেই ভারতীয় এক পেসারের ঝাঁঝ টের পেলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2019, 04:19 AM
Updated : 16 June 2019, 03:55 PM

শনিবার টনটনে বাংলাদেশের নেটে আগুন ঝরা বোলিংয়ে নজর কাড়লেন নেট বোলার ক্রেইগ ডুরাডু, আদতে যিনি একজন ভারতীয়!

চেহারায় এখনও কৈশোরের ছাপ। দেহের কাঠামোও খুব পোক্ত বলে মনে হয় না। দেখে অনুমান করা কঠিন, ডুরাডু একজন জাত ফাস্ট বোলার।

অ্যাকশন বেশ মসৃণ ও ছন্দময়। গতি দুর্দান্ত। লেংথ থেকে সহজাত বাউন্স আদায় করে নিতে পারেন। বাংলাদেশের নেটে নিজেকে আলাদা করে চেনালেন একদম প্রথম বল থেকেই।

গতি আর বাউন্সে ডুরাডু যথেষ্টই ভোগালেন মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসানের মতো ব্যাটসম্যানদের।

বাংলাদেশের নেটে এ দিন আরও একগাদা নেট বোলার ছিলেন, যাদের বেশির ভাগই স্থানীয় কাউন্টি দল সমারসেটের একাডেমির বোলার।

ডুরাডু ওই একাডেমির নয়, এসেছিলেন তার কলেজ থেকে। তবে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়লেন তিনিই। পেস বোলিংয়ের কিংবদন্তি বাংলাদেশের বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে বলছিলেন, “দিস বয় ক্যান বোল...।”

অনুশীলনের শেষ দিকে ডুরাডুকে পাওয়া গেল বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমের সামনে। আলাপ জমতে সময় লাগল না। শোনালেন চমকপ্রদ গল্প।

জাসপ্রিত বুমরা, ইশান্ত শর্মা মোহাম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমার, উমেশ যাদব

জন্ম ও বেড়ে ওঠা ভারতের গোয়ায়। ইংল্যান্ডে এসেছেন পড়াশোনা করতে। দুই বছরের কোর্স। আগামী বছরই আবার ফিরে যাবেন দেশে।

ছেলেবেলা থেকেই ক্রিকেট খেলছেন। গোয়ায় বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলের হয়ে খেলেছেন রাজ্য অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। কোর্স শেষে দেশে ফিরে আবার ক্রিকেটে ঝাঁপিয়ে পড়ার ইচ্ছে আছে।

বিশ্বকাপের জন্য নেট বোলার নেওয়ার কথা কিছুদিন আগে জানতে পারেন ডুরাডু। নাম লেখাতে দেরি করেননি। বোলিং সামর্থ্য দেখানোয় নেট বোলার হিসেবে নির্বাচিত হতেও সময় লাগেনি।

আন্তর্জাতিক একটি দলের নেটে বল করতে পারা তার কাছে স্বপ্নের মতো। এ দিন অনুশীলন সেশনের প্রতিটি মুহূর্তই তার কেটেছে সেই স্বপ্ন পূরণের অনুভূতি নিয়ে।  

একটু আক্ষেপ অবশ্য আছে। বাংলাদেশের নেটে বোলিং করবেন জানার পর থেকেই বল হাতে তামিম ইকবালের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছে ছিল। তবে তামিম এ দিন নেটে থ্রো ডাউনই খেলেছেন বেশি। ডুরাডুর তাই ইচ্ছে পূরণ হয়নি সেভাবে। 

ভারতের একটি রাজ্যের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলে আসা পেসার যেভাবে গতির ঝড় তুললেন, বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়েও এমন গতিময় বোলার খুব বেশি নেই। পেস বোলিংয়ে ভারতের যে দাপুটে অবস্থান এখন, তারই প্রতীকী চিত্র যেন এটি।

ক্রিকেট ইতিহাসে যুগে যুগে ভারতের পরিচয় ছিল স্পিনারদের দেশ হিসেবে। ষাট ও সত্তরের দশকের সেই বিখ্যাত স্পিন চতুষ্টয় থেকে শুরু করে দুর্দান্ত সব স্পিনার তারা জন্ম দিয়েছে বরাবর। কিন্তু পেস আক্রমণ খুব ধারালো ছিল না কখনো।

একজন দুজন ভালো পেসার ভারত অনেক সময়ই পেয়েছেন। কপিল দেব ছিলেন অসাধারণ একজন, একাই দীর্ঘ দিন টেনেছেন ভারতের পেস বোলিং।

জাভাগাল শ্রিনাথের গল্পও অনেকটা একইরকম, মাঝে দুই-তিন বছর ভেঙ্কটেশ প্রসাদকে পাশে পাওয়া ছাড়া তাকেও লড়াই করতে হয়েছে একা।

সাম্প্রতিক অতীতে জহির খানও ছিলেন দুর্দান্ত, কিন্তু লম্বা সময় কোনো সঙ্গী পাননি তিনি।

সেই ভারত নিজেদের চিরায়ত চরিত্র গত কয়েক বছরে পাল্টে ফেলেছে অবিশ্বাস্যভাবে। ভারত যে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট, এখন বিশ্ব ক্রিকেটের শীর্ষ শক্তি, টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে তারা এক নম্বর, ওয়ানডেতে দুইয়ে- তার বড় কারণ তাদের পেস আক্রমণ।

এক সময় হন্যে হয়ে গতিময় পেসার খুঁজে বেরিয়েছে ভারত। এখন তাদের অনেক পেসার নিয়মিত স্পর্শ করেন ১৪০ কিলোমিটার। এমনকি যে ভুবনেশ্বর কুমারের গতি একসময় ১৩০ স্পর্শ করত কদাচিৎ, তিনিই গত কয়েক বছর ধরে ১৪০ ছাড়াচ্ছেন নিয়মিত।

আগে ভারতের পেস আক্রমণ প্রতিপক্ষের জন্য তেমন দুর্ভাবনার বিষয় ছিল না। কিন্তু এখন সব প্রতিপক্ষকেই সবার আগে ভাবতে হয় জাসপ্রিত বুমরা, মোহাম্মদ শামি, ভুবনেশ্বর কুমারদের সামলানোর কথা।

ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটেও এখন গতিময় ও স্কিলফুল পেসার অনেক। রঞ্জি ট্রফি থেকে শুরুর করে আইপিএলে দেখা যায় এর প্রমাণ।

সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে, লম্বা সময় বিনিয়োগ করে, নিজেদের প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করে তবেই আজকের এ অবস্থায় আসতে পেরেছে ভারত। 

গতিময়তার পথে ভারতের অগ্রযাত্রার একটি প্রমাণ যেন এই ক্রেইগ ডুরাডু। গোয়ার অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলা পেসার যখন একটি আন্তর্জাতিক দলের নেটে গতির ঝড় তোলেন, সেটা হয়ে ওঠে সেই দেশের পেস বোলিংয়ের বড় বিজ্ঞাপন।