যেখানে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

মাঠের ক্রিকেটে জয়-পরাজয় আসে। বিশ্বকাপের মঞ্চে সঙ্গী হয় সাফল্য-ব্যর্থতা। তবে একটি জায়গায় বাংলাদেশ প্রায় চ্যাম্পিয়ন হয়েই গেছে!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2019, 04:56 AM
Updated : 15 June 2019, 04:56 AM

আইসিসি ও ইউনিসেফের যৌথ উদ্যোগে এবারের বিশ্বকাপে একটি আয়োজন নিয়মিত চলছে, ‘ওয়ানডে ফর চিলড্রেন।’ এই আয়োজনের আওতায় ‘কমিউনিটি ক্রিকেট ক্লিনিক’ পরিচালনা করছে সংস্থা দুটি। বিভিন্ন দলের ক্রিকেটাররা স্থানীয় শিশুদের সঙ্গে এক ঘণ্টা সময় কাটাচ্ছেন। তাদের ক্রিকেট শেখাচ্ছেন, টিপস দিচ্ছেন, মজা করছেন। সব দলেরই এরকম একটি সেশন নির্ধারিত আছে। বাংলাদেশ দল নির্ধারিত সূচিতে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি করেছে এরকম আরও একটি সেশন!

বিশ্বকাপের শুরুর দিকেই ওভালে এরকম একটি সেশন কাটিয়েছেন ক্রিকেটাররা। অনেক ইতিহাসের সাক্ষী সেই মাঠের কেন ব্যারিংটন ক্রিকেট সেন্টারে সেদিন ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান। ইউনিসেফের শিশু অধিকার দূত ও অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে ছিলেন লিটন দাস, আবু জায়েদ চৌধুরীও। হাসি, মজা, কৌতুকের মাঝেও ক্রিকেটের নানা কিছু স্থানীয় একাডেমির শিশুদের শিখিয়েছেন সাকিব-মিরাজরা।

এরকমই আরেকটি আয়োজন ছিল শুক্রবার টন্টনে। বৃষ্টির ছোবলে এবারও শিশুদের সঙ্গে সেশনটি করতে হয়েছে ইনডোরে, করা যায়নি খোলা মাঠে।

বন্ধ ঘরে আয়োজন হলেও প্রাণের উচ্ছ্বাস ছিল বাঁধনহারা। এই দিনের আয়োজনে দল থেকে মনোনীত ছিলেন মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকার, মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ মিঠুন ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। পুরো আয়োজনে ক্রিকেটারদের সবাই ছিলেন দারুণ স্বতস্ফূর্ত ও প্রাণবন্ত। এমনিতে অন্তর্মুখী হিসেবে যার পরিচিতি, নিজের মতো করে থাকতে পছন্দ করেন, সেই মুশফিককে দেখা গেল সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ত আর উৎফুল্ল।

সমারসেট কাউন্টি গ্রাউন্ডের ইনডোরে আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন ২৫-৩০ ক্ষুদে ক্রিকেটার। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছ থেকে দেখেই তারা দারুণ রোমাঞ্চিত। এরপর মুশফিকরা যখন তাদের সঙ্গে খেলছেন, ‘হাইফ ফাইভ’ করছেন, কিভাবে ব্যাটিং-বোলিং করতে হয়, সেসব দেখাচ্ছেন, ওই শিশুদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো।

শিশুদের বেশির ভাগই অনুমিতভাবে ক্রিকেটের মৌলিক অনেক কিছু জানে না। করতে পারে না। বাংলাদেশের পাঁচ ক্রিকেটার ধৈর্য ধরে, সময় নিয়ে, আন্তরিকতা দিয়ে তাদেরকে হাতে-কলমে সব দেখিয়ে দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, দেশের ক্রিকেটের বড় তারকাদের জন্য এসব যথেষ্টই বিরক্তিকর হওয়ার কথা। কিন্তু মুশফিকের অভিব্যক্তিতে অন্তত বিরক্তির ছাপ বিন্দুমাত্র ছিল না। বরং তারা শিশুদের সঙ্গে হেসেছেন, খেলেছেন, মিশে গেছেন পুরোপুরি। মুশফিক তো শিশুদের সঙ্গে নানা খুনসুটিতেও মেতে উঠেছেন বারবার।

আইসিসির অভিজ্ঞ এক ফটোগ্রাফার ছিলেন এই আয়োজনে। তার ক্যামেরার ক্লিক থামছিলই না। আয়োজনজুড়ে ছিল তার ব্যস্ততা, আয়োজন শেষে চোখে-মুখে মুগ্ধতা ফুটে উঠছিল স্পষ্ট। কথা বলতে চাইতেই খুব বেশি প্রশ্ন করতে হলো না। মুগ্ধতার প্রকাশ তার স্বতস্ফূর্ত কথায়।

“এই নিয়ে প্রতিটি দলের ক্লিনিক কাভার করলাম আমি।  একটি কথা বলার লোভ সামলাতে পারছি না, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মতো এতটা আন্তরিক আমি আর কোনো দলকে দেখিনি। অন্য কয়েকটি দল এই আয়োজনে মাত্র ২-১ জন ক্রিকেটার পাঠিয়েছে, তাদের দেখেও বোঝা গেছে যে বেশ বিরক্তি নিয়ে এসেছে। ১ ঘণ্টা পুরোও করেনি।”

“কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের দেখে আমি বিস্মিত ও মুগ্ধ। ওরা দারুণ আন্তরিক ছিল, শিশুদের দেখেও মনে হয়েছে খুব মজা পেয়েছে। আমার মনে হয় আইসিসি ও ইউনিসেফের এই আয়োজনকে পূর্ণতা দিয়েছে বাংলাদেশ দল। ওরা একাধিকবার এই আয়োজনে অংশ নিয়েছে, এই পেশাদারিত্বের যুগে এই আন্তরিকতা বিরল। আমার কাছে, ওরাই বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন।”

টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই এই আয়োজন নিয়ে কাজ করেছে চলেছে আইসিসি। সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক নাসের হুসেইন ও ইংল্যান্ডের বর্তমান দলের পেস বোলিং অলরাউন্ডার ক্রিস ওকসকে করা হয়েছে এই প্রকল্পের শুভেচ্ছা দূত।

প্রতিটি দলকে নিয়ে আলাদা করে আয়োজন থাকলেও ‘‘ওয়ানডে ফর চিলড্রেন’ এর চূড়ান্ত আয়োজন হবে ৩০ জুন বার্মিংহামে ইংল্যান্ড-ভারত ম্যাচে। সেদিনের আয়োজন সম্প্রচারিত হবে টিভিতে। আয়োজন থেকে আয় করা অর্থের পুরোটাই আইসিসি খরচ করবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে ক্রিকেটে আগ্রহী করতে।

সেই আয়োজন কতটা সফল হবে, বলবে সময়ই। তবে আইসিসির এই উদ্যোগকে বাংলাদেশ দল সফল করে তুলেছে আগেই। আইসিসির ফটোগ্রাফার যেমন বলেছেন, এখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েই গেছে বাংলাদেশ!