কার্ডিফের ‘অন্য মাঠে’ ক্রিকেটারদের ফুরফুরে সন্ধ্যা

পেছনে নিউ জিল্যান্ডের কাছে হারের স্মৃতি; সামনে ইংল্যান্ডকে সামলানোর চ্যালেঞ্জ।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 June 2019, 04:10 AM
Updated : 7 June 2019, 04:20 AM

ক্রিকেট বিশ্বকাপের কঠিন অভিযানের মাঝে বাংলাদেশের দলের একটু ফুরফুরে সময় কাটল কার্ডিফের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি অব ওয়েলস ভবনে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এখানেই ক্রিকেটারদের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশন।

অনুষ্ঠানের ভেন্যুই ছিল মন ভালো করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ওয়েলসের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ কার্ডিফ উপসাগরের তীর ঘেষে দাঁড়ানো এই অ্যাসেম্বলি ভবন। ঘোর লাগা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে যেন মিতালি অনিন্দ্য আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর।

টিম বাস থেকেই নেমেই ক্রিকেটাররা থমকে গেলেন মুহূর্তের জন্য। চাহনিতে ধরা পড়ল ভালো লাগা, মুগ্ধতা ফুটে উঠল কারও কারও কণ্ঠে, ‘দারুণ জায়গা তো!’

দেখার মতো সাজে ছিলেন নিজেরাও। কালো স্যুট, সাদা শার্ট, সবুজের মাঝে হলুদ ডোরাকাটা টাই, কেতাদুরস্থ পোশাকে তাদের উপস্থিতিতে ঝলমলে করে উঠল পুরো আয়োজন। আয়োজক ও আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছে তারা যে পরম প্রার্থিত।

সেতার ও তবলার স্নিগ্ধ সুরের মূর্ছনায় মূল হলঘরে স্বাগত জানানো হলো ক্রিকেটারদের। মঞ্চ সাজানো ছিল বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ক্রিকেটারদের ছবিতে। পাশেই স্ক্রিনে দেখানো হচ্ছিল বাংলাদেশের স্মরণীয় পারফরম্যান্সগুলোর ভিডিও।

বাংলাদেশ, ওয়েলস ও ইংল্যান্ডের জাতীয় সংগীত দিয়ে শুরু হলো আয়োজন। মাশরাফি বিন মুর্তজা তখন মঞ্চের ঠিক সামনেই দাঁড়ানো। তাকে ঘিরে অনেকের ভিড়। সবাইকে সরিয়ে নৃত্যশিল্পীদের জন্য জায়গাটা ফাঁকা করতেই সময় লাগল বেশ।

‘চলো বাংলাদেশ’ গানের সঙ্গে নাচ দেশাত্মবোধের আবহ ছড়িয়ে দিল আরও গভীরভাবে।

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম জানালেন- দেশের বাইরে দেশকে নিয়ে কতটা গর্বের উপলক্ষ এনে দেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম শোনালেন কদিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাপান সফরের মজার এক অভিজ্ঞতা। জাপান টুকটাক ক্রিকেট খেললেও সেদেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা নেই বললেই চলে। কিন্তু সেই দেশেরই এক কূটনীতিক দারুণ ক্রিকেটপ্রেমী। বাংলাদেশ দলকে তার ভালো লাগে। ক্রিকেটের সূত্রেই সহজ হলো কূটনৈতিক আলোচনার পথ!

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে এবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে যখন হারাল বাংলাদেশ, প্রধানমন্ত্রী তখন সৌদি আরবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানালেন, ভ্রমণের তাড়া ছিল তাদের। কিন্তু দলের জয়ের মুহূর্ত না দেখে প্রধানমন্ত্রী টিভি থেকে চোখ সরাবেনই না!

জয়ের পর বিসিবি প্রধানকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়ে তবেই রওনা হয়েছিলেন তিনি।

অন্যদের বৃক্ততাপর্ব যখন চলছে, মঞ্চের এক পাশে ক্রিকেটারদের জটলার মাঝে মাশরাফিকে দেখা গেল নিচু হয়ে একটি কাগজে কী যেন পড়ছেন। ঠিক যেন পরীক্ষার আগে শেষ মুহূর্তে নোটে চোখ বুলিয়ে নেওয়া! বোঝা গেল, খানিক পরই আসবে অধিনায়কের বক্তৃতার পালা।

পরীক্ষায় অবশ্য লেটার মার্কস পেয়েই উতরে গেলেন অধিনায়ক। ছোট ও গোছানো কথামালায় মাশরাফি বললেন, দারুণ কিছু সুখস্মৃতির জন্য কার্ডিফ বাংলাদেশ দলের কাছে কতটা প্রিয়।

ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ কৃতজ্ঞতা জানালেন দলকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য।

আনুষ্ঠানিকতার ফাঁকেই চলল আড্ডা, ছবি তোলা, গল্পের পালা। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপের মহাচাপের মাঝে একটু অন্যরকম সময় কাটল ক্রিকেটারদের। ক্রিকেট বুঁদ হয়ে থাকার সময়টায় একটু চনমনে ও ঝরঝরে ওঠে ওঠার ফুরসতও মিলল।

পুরো সময়টা জুড়ে অনেকের ছবি তোলার আবদার মেটাতে হলো ক্রিকেটারদের। ফেরার সময় তারা নিজেরাই মজে উঠলেন ছবি তোলায়। এত সুন্দর জায়গার স্মৃতি ধরে রাখতে হবে না! কার্ডিফ উপসাগরের তীরে নানান ঢঙে চলল ছবির উৎসব।  

কী কথা তাহার সনে

আনন্দ আয়োজনের মাঝে আলাদা করে নজর কাড়ল একটি ঘটনা। তখনও বক্তৃতাপর্ব চলছে। মুশফিকুর রহিমকে দেখা গেল সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে রেলিংয়ে ভর দিয়ে উদাস চোখে তাকিয়ে। মনে হচ্ছিল, দৃষ্টি তাহার কোন সুদূরে!

তখনই কাছে গেলেন মাশরাফি। কাঁধে হাত রেখে স্বভাবসুলভ মজার সুরে কিছু একটা বললেন, হাসি ফুটল মুশফিকের মুখে।

হাসাহাসির এক ফাঁকে হাতের অঙ্গভঙ্গিতে কিছু দেখাচ্ছিলেন মাশরাফি। তাকে দেখা গেল গ্লাভসে বল জমার আগেই কনুইয়ে গুঁতোয় বেলস ফেলে দেওয়ার মতো ভঙ্গি করতে। আগের দিন যেভাবে উইলিয়ামসনকে রান আউট করার সুযোগ হাতছাড়া করেছেন মুশফিক, সেটাই কি ছিল আলোচনার বিষয়বস্তু?

কে জানে! মুশফিকের মুখে তখন রাজ্যের আঁধার। একটু পর দেখা গেল, পিঠ চাপড়ে দিয়ে মুশফিকের মুখের হাসি ফেরালেন অধিনায়ক।

অধিনায়ক তো জানেন, নিউ জিল্যান্ড ম্যাচের হতাশা ভুলে এই মুশফিকই আবার সবার মুখে হাসি ফোটাতে পারেন মাঠের পারফরম্যান্সে!

 

ভিডিও: নাহাস পাশা