মাশরাফি-কোহলির রসায়ন ও ইংলিশ জোয়ারের অপেক্ষা

বিশ্বকাপ জমে ওঠার আগেই দারুণ জমে গেছে মাশরাফি বিন মুর্তজা ও বিরাট কোহলির রসায়ন!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2019, 07:16 PM
Updated : 30 May 2019, 07:47 PM

এমনিতে দুই দেশের বাস্তবতায় সাধারণ্যে যে আবহ, তাতে এই দুই পক্ষকে একপাত্রে রাখলে আগুন জ্বলে ওঠার কথা। ২০১৫ বিশ্বকাপে বিতর্কে ভরা সেই কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে শুরু, গত চার বছরে ভারত-বাংলাদেশের প্রতিটি লড়াইয়ের প্রেক্ষাপট ছিল উত্তেজনায় ঠাসা। এই দুই দল মুখোমুখি হলে মসলার অভাব নেই, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের ঝাঁঝও তুলনায় কম মনে হয়। দুই দেশের অনেক ক্রিকেট অনুসারীর কাছে ক্রিকেটীয় লড়াই রূপ নেয় প্রায় যুদ্ধের। অথচ দুই দলের সেনাপতির কি না ভাব জমে গেছে!

বিশ্বকাপের ১০ অধিনায়ককে নিয়ে আইসিসির বিশেষ আয়োজন থেকেই মাশরাফি ও কোহলির সম্পর্কের উষ্ণতা চোখে পড়ছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধি হয়ে আমার সৌভাগ্য হযেছিল সেখানে থাকার। গত ২৩ মে লন্ডনের দা ফিল্ম শেডে অনুষ্ঠানের আগে-পরে ও ফাঁকে দুজনের আড্ডা হয়েছে অনেকটা সময় ধরে। দেখা গেছে হাসাহাসি, খুনসুটিতে মেতে উঠতে।

১০ অধিনায়কের আড্ডা মাশরাফি ও কোহলিই মাতিয়ে রেখেছিলেন। কোহলির ফিটনেস নিয়ে কথা উঠল এক পর্যায়ে। অন্য অধিনায়কেরা মজা করে কোহলির ‘সিক্স প্যাক’ দেখতে চাইলেন। মাশরাফি নিজের পেটে হাত বুলিয়ে বলে উঠলেন, “আমার ফ্যামিলি প্যাক কেউ দেখতে চাও?”

সবাই তো হেসেই খুন। কোহলি হাসতে হাসতে প্রায় ঢলে পড়েছেন মাশরাফির ওপর।

এমনকি মূল আয়োজনের মঞ্চেও নানা আলাপের ভিড়েও দুই প্রান্তে বসা দুজনকে ইশারায় মজা করতে দেখা গেছে বেশ ক‘বার।

‘সুযোগ থাকলে অন্য দলের কোন ক্রিকেটারকে নিজ দলে পেতে চান?’ এই প্রশ্নে মাশরাফি ইশারায় দেখালেন কোহলির দিকে, ‘দ্যাট ম্যান, বিরাট…।’ কোহলি চোখ টিপে কিছু একটা বোঝাতে চাইলেন।

তাদের আড্ডা-ইশারার অনেক কিছু দূর থেকে বোঝা যায়নি। তবে সম্পর্কের গভীরতা ঠিকই স্পষ্ট হয়েছে।

আরও বোঝা গেল দুই দলের প্রস্তুতি ম্যাচে, কার্ডিফে। ম্যাচ চলার সময়ই দুইজনকে মজা করতে দেখা গেছে অনেকবার। খুনসুটিও চলেছে বেশ।

একসময় তুমুল গতিময় বোলার হলেও চোটের ছোবলে মাশরাফি এখন কেবলই মিডিয়াম পেসার। বাউন্সার করেন কদাচিৎ। সেদিন কোহলিকে একটি বাউন্সার ঠুকে দিলেন। এই গতি নিয়েও সেই বল কোহলির ওপর দিয়ে, কিপার মুশফিকুর রহিমের ডাইভকে ফাঁকি দিয়ে উড়ে চলে গেল।

কোহলি বলে উঠলেন, ‘ক্যায়া রে, জোশ আগায়া ক্যায়া!”

মাশরাফির ত্বরিত উত্তর, “তোমাকে ব্যাটিংয়ে দেখলে এমনিতেই জোশ এসে যায়!”

৩০ গজ বৃত্তের ভেতরে কাভারে ফিল্ডিং করছিলেন মাশরাফি। কোহলি চিৎকার করে বললেন, “তোমার কাছে বল দিয়ে রান নেব, পারলে ঠেকাও।”

পরের বলে ঠিকই মাশরাফির দিকে বল ঠেলে দ্রুত সিঙ্গেল নিলেন কোহলি। তারপর বিজয়ে হাসিতে দিলেন খোঁচা, “কাম অন স্কিপার, মুভ ফাস্ট।”

একটু পর মাশরাফি দ্রুত ছুটে আটকে দিলেন কোহলির একটি সিঙ্গেল।

রোহিত শর্মা আউট হয়ে ফিরে গেলেন। নতুন ব্যাটসম্যান আসার আগে যেটুকু, তখনও উইকেটের পাশে দাঁড়িয়ে দুজনকে দেখা গেল গল্পে মেতে উঠতে।

এই রাশি রাশি হাসির মেলায় দুজন ক্রিকেটের চিরন্তন বার্তাটিও বুঝি ছড়িয়ে দিতে পারলেন। মাঠের লড়াইয়ে কোনো ছাড় নেই, কিন্তু মাঠ পেরুলেও থেমে যায় সেই লড়াই। দুই দেশের ক্রিকেট অনুসারীদের কাছে খেলাটা যতোই যুদ্ধ হয়ে উঠুক, ক্রিকেটারদের কাছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সমীহ, ভালোবাসা আর বন্ধুত্বই গুরুত্বপূর্ণ।

জোয়ারের অপেক্ষায় ইংল্যান্ড

বিশ্বকাপ শুরু হল বৃহস্পতিবার থেকে, স্বাগতিক ইংল্যান্ড খেলছে প্রথম দিনেই, এই দেশের বেশিরভাগ পত্র-পত্রিকা দেখে সেটি বোঝার উপায় নেই।

আগের দিন উয়েফা ইউরোপা লিগের ফাইনালে খেলেছে ইংল্যান্ডের দুই দল। আর্সেনালকে উড়িয়ে চেলসির জয়ের খবরের আড়ালে চাপা পড়েছে ক্রিকেটের বিশ্ব আসর।

সাধারণ্যেও উত্তেজনার রেশ নেই। বিশ্বকাপের কথা প্রায় সবাই জানেন, তবে রোমাঞ্চ খুব একটা নেই।

খুব অপ্রত্যাশিত অবশ্য নয়। ক্রিকেটের জন্মস্থান ইংল্যান্ড হলেও কখনোই প্রিয় সন্তান হয়ে উঠতে পারেনি এই খেলা। ক্রিকেটকে ঘিরে উপমহাদেশের মতো আবেগ এখানে তো কল্পনাতীত। বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ-কৌতূহলের কমতি তাই বিস্ময় ছড়ায় না।

প্রথম ম্যাচের ভেন্যু ওভালের কাছাকাছি গেলে অবশ্য বোঝা যাচ্ছে, কিছু একটা হচ্ছে! এখানকার হাওয়াতেই কেবল বিশ্বকাপের সুর খানিকটা পাওয়া গেল। ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচে ওভালের গ্যালারিও ছিল টইটম্বুর। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা যাদের আছে, তাদের ঠিকই টেনেছে মাঠ।

এবারের বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডের জন্য বড় সুযোগ ক্রিকেট দিয়ে দেশকে নাড়া দেওয়ার। স্বাগতিক বলেই কেবল নয়, বিশ্বকাপের টপ ফেবারিট দলও তারা। তাদের শুরুটাও হয়েছে ফেবারিটের মতোই, দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিয়ে। ওয়ানডে ক্রিকেটের অনেক ধ্যানধারণাই গত চার বছরে পাল্টে দিয়েছে ওয়েন মর্গ্যানের এই দল। আনন্দদায়ী ক্রিকেট খেলছে, সাফল্য মিলছে। তাদের ব্র্যান্ডের ক্রিকেট শিশু-কিশোরদের উৎসাহিত করতে শুরু করেছে। প্রয়োজন স্রেফ এমন কিছু, যেটির ঢেউ স্পর্শ করবে গোটা দেশকে।

সেই জোয়ার বইবে কেবল অধরা বিশ্বকাপ ধরা দিলেই!