ভ্রমণ কাহিনি: পোল্যান্ডের বড় দুটি শহর দেখা

পোল্যান্ড প্রজাতন্ত্র ইউরোপ মহাদেশের মধ্যস্থলের একটি রাষ্ট্র ও ঐতিহাসিক অঞ্চল। এর রাজধানীর নাম ওয়ার্‌শ।

মো. ফয়সাল আহমেদ, জার্মানি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2022, 09:45 AM
Updated : 30 June 2022, 09:46 AM

এর পশ্চিমে জার্মানি, দক্ষিণে চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া, পূর্বে ইউক্রেন ও বেলারুস এবং উত্তরে বাল্টিক সাগর, লিথুয়ানিয়া ও রাশিয়া অবস্থিত।

বাল্টিক সাগরে পোল্যান্ডের সঙ্গে ডেনমার্কের জলসীমান্ত রয়েছে। পোল্যান্ড ২০০৪ সালের পহেলা মে তারিখ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। স্লাভিক উপজাতিরা প্রথম দেশটিতে বসতি স্থাপন করে। দশম শতাব্দীতে পিয়াস্ট রাজবংশের শাসনামলে রাজ্য হিসেবে পোল্যান্ড সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশ করে। ৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে ব্যাপ্টিজম মতাবলম্বীরা দেশটিতে আসে এবং এ সময়ই তাদের প্রচেষ্টায় দেশটিতে খ্রিস্টধর্মের ব্যাপক প্রসার ঘটে।

পোল্যান্ডের মুদ্রা ‘পোলিশ ছলোটি’

২০২১ এর শীতের সময়টাতে আমরা চার বন্ধু মিলে ঘুরে এসেছিলাম পোল্যান্ডের দুটি বড় শহর। জার্মানির কাছাকাছি এবং আমাদের সিটির পাশেই সীমান্ত হওয়ায় পোল্যান্ড পৌঁছাতে আমাদের বেশি সময় লাগেনি। জার্মানির শহর কেমনিটজ থেকে আমরা রওনা দিয়ে ১ ঘণ্টায় পৌঁছে যাই জার্মানির সাক্সোনি রাজ্যের রাজধানী ড্রেসডেনে। ড্রেসডেনের সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে আমরা ট্রেন পরিবর্তন করে এক ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাই আমাদের গন্তব্য পোল্যান্ডে।

চার বন্ধু

জার্মানির কেমনিটজ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ছাত্র হওয়ায় আমাদের ট্রেনে যাতায়াতের সময় কোন ভাড়া দিতে হয়নি। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার কার্ড পোল্যান্ড পর্যন্ত ট্রান্সপোর্টেশন খরচ কাভার করে। তাছাড়া চেক রিপাবলিকের কয়েকটি ট্রাম ও ট্রেন এই কার্ডের কাভারেজের আওতাভুক্ত। যার জন্য আমাদের ভ্রমণ আরও সহজ হয়ে যায়। আমার সঙ্গে ছিলো আবু সুফিয়ান চৌধুরী, আমানুল মালিক ও মেহেদী হোসাইন মিরু।
পোল্যান্ডে প্রবেশ করেই আমরা মুদ্রা পরিবর্তন করে নিই। বলে রাখা ভালো আপনি চাইলে ইউরো সঙ্গে করে নিয়েও আপনার যাতায়াত, খাবার এবং অন্যান্য খরচ পরিশোধ করতে পারবেন, সব দোকান-সুপারশপেই কারেন্সি এক্সচেঞ্জের সুবিধা আছে। পোল্যান্ডের মুদ্রার নাম হচ্ছে ‘পোলিশ ছলোটি’। ভিন্ন মুদ্রার প্রতি একটা প্রবল আগ্রহ থাকায় আমরা ইউরো চেঞ্জ করে পোলিশ মুদ্রা নিয়ে নিই। এক ইউরো চারশ ৬৮ পোলিশ ছলোটির সমান।              
কারেন্সি এক্সচেঞ্জ করে আমরা আশপাশটা ভালো করে ঘুরে দেখি। প্রাচীন স্থাপনা আর এর অপরূপ সৌন্দর্য যেন প্রাচীন স্থাপত্যশিল্পের এক অভূতপূর্ব ইতিহাসের জানান দেয়। সেখানকার মানুষজন ছিলো খুবই বন্ধুসুলভ। তাদের সঙ্গে কমিউনিকেশনে আমাদের কোন সমস্যাই হয়নি। খানিক ঘুরাফেরা করে আমরা গেলাম খাবারের দোকানে। সেখানকার কিছু খাবার আমরা ট্রাই করি। এর মধ্যে ভিন্ন আকৃতির পিৎজা আমাদের সবারই ভালো লাগে।
খাবার পর্ব শেষ করে আমরা রওনা দেই শহর ঘুরে দেখার জন্য। কাছাকাছি হওয়ায় আমরা ভ্রৎসওয়াফ ও পোজনানের কয়েকটি শহর ঘুরে দেখি। শহরের রাস্তাঘাট এবং বড় বড় স্থাপনা আসলেই দৃষ্টিনন্দিত। এর মধ্যে কয়েকটি ছোট মূর্তি আমাদের দৃষ্টি কাড়ে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো ভ্রৎসওয়াফ মার্কেট স্কয়ার। ভ্রৎসওয়াফ পশ্চিম পোল্যান্ডের ওডার নদীর তীরে অবস্থিত একটি শহর। এটি তার মার্কেট স্কোয়ারের জন্য পরিচিত, যেখানে মার্জিত টাউনহাউস রয়েছে এবং একটি আধুনিক ঝর্ণা রয়েছে।

এছাড়া স্কোয়ারের উপর রয়েছে গথিক ওল্ড টাউন হল, যার বিশাল জ্যোতির্বিদ্যা ঘড়ি রয়েছে। কাছাকাছি রেসোহুতার প্যানোরামা, ১৭৯৪ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধের চিত্রিত একটি চিত্রকর্ম। সেন্টেনিয়াল হল অডিটোরিয়াম, তার বিশাল গম্বুজ এবং লম্বা চূড়াসহ, নদীর ওপারে অবস্থিত।

পোল্যান্ডে আমি

সারাদিন আমরা শহর ঘুরে দেখে মধ্যরাতেই ফিরে আসি জার্মানিতে। খুব কাছাকাছি থাকায় একদিনেই আমরা পোল্যান্ডের বড় দুটি শহর দেখার অভিজ্ঞতা লাভ করি। ভ্রমণ-পিপাসুদের কাছে নতুন নতুন শহর, দেশ, জায়গা সবসময়ই রোমাঞ্চকর। সময় পেলেই আবারও ঘুরে আসবো পোল্যান্ডের অন্যান্য শহরগুলোতে।

মো. ফয়সাল আহমেদ: শিক্ষার্থী, কেমনিটজ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, জার্মানি

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!