এই সরকারের সময়ে বাংলাদেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু পদ্মা সেতু যেভাবে প্রচার-প্রচারণা পেয়েছে অন্য কোন প্রকল্প এত প্রচারণা পেয়েছে বলে জানা নেই। সঙ্গত কিছু কারণেই পদ্মা সেতু দেশে তো বটেই বিদেশি গণমাধ্যমেও বারবার আলোচিত হয়েছে। এমনকি বিদেশি আদালতে এই সেতু নিয়ে দুর্নীতি তদন্তে মামলা পর্যন্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষ এটা বিশ্বাস করতে পারেনি সেই সময় যে, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু সফলভাবে শেষ করতে পারবে বাংলাদেশ সরকার। এসব কারণে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জনগণের আত্মসম্মানের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সে জন্য এই সেতু নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহও ছিল বাঁধভাঙা।
কাপাসিয়া ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন জার্মানির সভাপতি মাহফুজ ফারুকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ফ্রাঙ্কফুর্ট শাখা প্রায় এক মাস আগে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল দিনটি উদযাপনের জন্য। সাধারণত রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে সব সময়ই সেই গতানুগতিক ধারা বক্তব্য এবং তারপর ভোজের আয়োজন। ভোজ মানেই বিরানি। এ পর্যন্ত যত অনুষ্ঠানেই গেছি একই চিত্র, নতুনত্ব কিছু থাকেনা।
কিন্তু ২৬ জুনের অনুষ্ঠান ছিল একেবারে ভিন্ন। সেখানে গ্রিল পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানটি ছিল খোলা জায়গায়। যেখানে মানুষ গ্রীষ্মকালে গ্রিল করার জন্য যায়। এই স্থানটি গ্রিল পার্টির জন্য নির্ধারিত স্থান। এক মাস আগে আয়োজকরা এই অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্ত ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাইরে আবহাওয়া ভালো থাকবে, কী থাকবে না, তার উপর নির্ভরশীল ছিল এই অনুষ্ঠান। কারণ বৃষ্টি হলে এই অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যেত।
আমি অনেক জার্মান নাগরিককেও দেখেছি সে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে। একজনকে দেখলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির সাথে সেলফি তুলছেন। একজন জার্মান আমার কাছে জানতে চাইলেন- কী এবং কেন এই অনুষ্ঠান। আমি তাকে ব্যাখ্যা করলাম কেন এই সেতু আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আর কেনই বা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন।
গ্রিল পার্টিটি সারা জার্মানি থেকে শত শত বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ আর আনন্দ-উল্লাসে এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিল। সমাজের সকল স্তরের মানুষ উপস্থিত ছিল সেখানে। কবি, লেখক, গবেষক, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনৈতিক নেতারা, সামাজিক ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযোদ্ধা, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, ছাত্র-ছাত্রী, নবীন-প্রবীণ আর শিশুদের কোলাহলে ‘গ্রিলপ্লাটস ভাল্ডস্পিলপার্ক সোয়ানহাইম’ যেন ক্ষুদে বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়েছিল।
এই অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন বিরামহীন গ্রিল করায় ব্যস্ত ছিলেন। তারা হলেন- মোহাম্মদ রিপন, মানিক মিয়া, শেখ আলম, শিহাব খান, মাখন সরকার ও ঠান্ডু মাতব্বর।
অনুষ্ঠান শেষে হেছেন প্রদেশ (ফ্রাঙ্কফুর্ট) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফ রিচার্ড ও সভাপতি নোমান হামীদ অনুষ্ঠান সফল করার জন্য সকল অতিথিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। আর প্রধানমন্ত্রীর ভবিষ্যৎ সফলতার জন্য শুভকামনা রাখার অনুরোধ জানান।
আমি অনুষ্ঠান ত্যাগ করার আগে অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মাহফুজ ফারুক আক্ষেপ করে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শুধু পদ্মা সেতু নয় অনেক উন্নয়ন করেছেন, যেমন তার সরকারের সময়ে প্রায় ২৫টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়েছে সে কথা কেউ বলে না। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান জাতীয় জীবনে পদ্মা সেতুর চেয়েও অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ।”
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |