ওমান উপসাগরের এ শহরটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায়, তবে ফুজাইরাহ সংলগ্ন। রাজধানী আবুধাবি থেকে ২৬৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এবং দুবাই থেকে ১২৯ কিলোমিটার উত্তরে খোরফাক্কানের অবস্থান। আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় কীভাবে ঘুমায় কিংবা আত্মার সঙ্গে সমুদ্র কীভাবে সখ্যতা গড়ে সেই সত্যতার সাক্ষাৎ পেতে আপনাকে আসতে হবে এখানে। গভীর প্রাকৃতিক সমুদ্র বন্দর, বৈচিত্র্যময় হাজার পর্বতমালা, নয়াভিরাম জলপ্রপাত, ধ্বংসপ্রাপ্ত পর্তুগিজ দুর্গ, প্রাকৃতিক লেক, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রাচীন গোরস্থান, পাথরের দ্বীপ, পাহাড় কেটে বানানোর টানেল এবং মূলত বাংলাদেশিদের দখলে থাকা 'ফ্রাইডে মার্কেট' শহরটিকে অনন্যতা দিয়েছে।
শারজা সরকার ছয় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে তৈরি করেছে পাহাড়ি পথের এ মসৃণ রাস্তা। এ বাইপাস সড়কটি দুবাই থেকে খোরফাক্কানের দূরত্ব অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। ৯০ মিনিটের রাস্তা এখন পাড়ি দিতে পারেন মাত্র ৪৫ মিনিটে। রাস্তার দুধারে সারি সারি খাড়া গম্ভীর কালো পাথরের পাহাড়, মনে হবে আকাশটাকে আড়ালে রেখে আপনাকে এক রহস্যময় নগরীতে নিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের ঘনত্বের কারণে এখানে শব্দের প্রতিধ্বনি হয়, গাড়ির শব্দটিও পুনরায় গাড়িতে ফিরে আসে, এমনকি প্রথম বিমান ভ্রমণের মতো কানে বায়ুচাপ অনুভব হয়।
এখানে যান্ত্রিক বোট বা ছোট্ট নৌকা নিয়ে ছুটে যেতে পারেন পাহাড়ের বাঁকে। সৌন্দর্য উপভোগের জন্য লেকের সুউচ্চ পাড়ে নিরিবিলি বসার ব্যবস্থা আছে। গাছপালায় ঘেরা গভীর সবুজে মন জুড়িয়ে নেওয়া এবং পাহাড় ও সবুজের স্মৃতি রক্ষার জন্য তুলে নিতে পারেন চমৎকার লোকেশনের কিছু ছবি। লেকটি কিছুতে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিল না, কিন্তু সমুদ্রের প্রতি টানে সৈকতের দিকে রওনা হলাম। হাতে সময় থাকলে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে পারেন এ লেকের পাড়ে।
তীরে আছড়ে পড়া ঢেউ মনকে অস্থির করে তুললো। নেমে পড়লাম নীল জলে। ঝাঁপাঝাঁপি দুষ্টুমিতে মেতে উঠলাম বন্ধুরা কিছুক্ষণ। বিচ পুলিশ এসে হুইসেল বাজানো শুরু করলো। ভড়কে গেলাম ভয়ে, না জানি কি আইন অমান্য করলাম। পরে বুঝলাম কিছু ভারতীয় সাঁতারের পোশাক ছাড়া নেমে পড়েছে পাশে। মজার এ সৈকতে সুবিধা আছে বই পড়ার, বারবিকিউ পার্টি কিংবা জগিং করার; আছে ক্রুজ প্যারাসেইলিং অথবা সার্ফিং করার সুযোগ। এখানে থেকে মাত্র ২০ দিরহাম দিয়ে স্পিডবোটে ঘুরে আসতে পারেন নিকটবর্তী 'শার্ক আইল্যান্ড' থেকে।
পাথুরে পাহাড়ে চড়া, নয়াভিরাম জলপ্রপাত, ধ্বংসপ্রাপ্ত পর্তুগিজ দুর্গ, প্রাকৃতিক লেক, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রাচীন গোরস্থান, কালা পাথরের দ্বীপ, স্থল টানেল কোনটা রেখে কোনটা দেখি করে সময়ের সঙ্গে সে নিয়ে যুদ্ধ করতে করতেই সময় শেষ হয়ে গেল। এ পর্যটন নগরীতে দিন শেষ হয়ে যায়, কিন্তু প্রাপ্তির পিপাসা নিবারণ হয় না। বারবার প্রকৃতি এখানে হাতছানি দেয় অতি প্রিয়জন হয়ে।
লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ দূতাবাস, আবুধাবি
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |