যুক্তরাষ্ট্রে শেখ রাসেল দিবস উদযাপিত

যুক্তরাষ্ট্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন আলোচনা সভা ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে পালন করেছে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস, নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন এবং বাংলাদেশ কন্স্যুলেট।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2021, 07:23 PM
Updated : 19 Oct 2021, 07:23 PM

স্থানীয় সময় সোমবার ‘শেখ রাসেল দিবস’ উপলক্ষে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনান যথাক্রমে দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার মেহেদী হাসান এবং মিনিস্টার কন্সুলার হাবিবুর রাহমান।

রাষ্ট্রদূত এম সহিদুল ইসলাম তার বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি শহীদ শেখ রাসেলসহ পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টে নিহতদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি অনন্য দৃষ্টান্ত যা কিছু কুচক্রী মহল বিনষ্ট করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে।”

শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে বাংলাদেশ মিশনের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

তিনি এরকম ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে শহীদ শেখ রাসেল এর স্মৃতি অবলম্বনে নির্মিত একটি  প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।  অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে শেখ রাসেল এবং পঁচাত্তরের অগাস্টের নারকীয় হামলায় শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশন

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে সামাজিক দূরত্ব মেনে সেখানকার বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত শেখ রাসেল দিবসের অনুষ্ঠানে মিশনের সবস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশ নেন। শুরুতেই শহীদ শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এরপর শেখ রাসেল এর দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বাণী পাঠ করা হয়। এরপর শেখ রাসেল- এর জীবন বিষয়ক একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। তিনি শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিনকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করেন।

শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে নিউ ইয়র্ক কন্স্যুলেটের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

তিনি বলেন, “এর মাধ্যমে দেশের শিশু-কিশোররা শেখ রাসেল সম্পর্কে আরও জানতে পারবে যা তাদেরকে মানবতাবাদী ও অধিকার বোধসম্পন্ন ভবিষ্যত নাগরিকে পরিণত করবে। শহীদ শেখ রাসেলকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রচিত বই ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ পড়ার জন্য প্রবাসে বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোরদের প্রতি আহ্বান  জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের কালরাতে পরিবারে জাতির পিতার বর্বরোচিত ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, “ঘাতকেরা নিষ্পাপ ও কোমলমতি শিশু রাসেলকেও রেহাই দেয়নি।”

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ অগাস্টের পালিয়ে থাকা খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন তা তুলে ধরে স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “বিদেশে পালিয়ে থাকা খুনিদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে বিচার-আওতায় আনতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।”

দিবসটি স্মরণে মুক্ত আলোচনা পর্বে মিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশ নেন। তারা আশা-প্রকাশ করেন শেখ রাসেল দিবস উদযাপনের মাধ্যমে শেখ রাসেল এর পবিত্র স্মৃতি আজীবন সবার মাঝে বেঁচে থাকবে যা শিশু-কিশোরদের নতুনভাবে অনুপ্রাণিত করবে।

কেক কাটার মাধ্যমে শহীদ শেখ রাসেল এর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি হয়।

নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ কন্স্যুলেট

রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথমবারের মত পালিত ‘শেখ রাসেল দিবস-২০২১’ এর প্রতিপাদ্য ‘শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ শেখ রাসেল এর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল এস এম নাজমুল হাসান এবং কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা।

শহীদ শেখ রাসেল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবারের শহীদ সদস্যরা, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অন্য সব শহীদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

শহীদ রাসেল দিবস স্মরণ-সমাবেশে মোনাজাতে নিউ ইয়র্ক কন্স্যুলেটের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।

অনুষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয় এবং শেখ রাসেল স্মরণে একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এরপর ‘শেখ রাসেল দিবস- ২০২১’ উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠান শেষে জাতির পিতা ও তার পরিবারের অন্য শহীদ সদস্যরা সব শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দোয়া করা হয়। এসময় দেশের অব্যাহত সমৃদ্ধির জন্যও মোনাজাত করা হয়।

ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল তার বক্তব্যে  শেখ রাসেল দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, “শেখ রাসেল তার পরিবারের এবং বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত স্নেহের ছিলেন। শিশু রাসেলও ঘাতকদের নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পায়নি।”

তিনি বাংলাদেশি-আমেরিকান ও নতুন প্রজন্মের কাছে শেখ রাসেলের পরিচিতি বিশেষভাবে উপস্থাপনের আহ্বান জানান।

নিউ ইয়র্কে বৈশ্বিক অতিমারী কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষিতে স্বাগতিক সিটির বিধি-বিধান প্রতিপালন করে কনস্যুলেটে এ দিবস উদযাপন করা হয়।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!