ভ্রমণ কাহিনি: পুলকিত পালমা

পালমা হলো একটি পর্যটন শহর এবং পশ্চিম ভূমধ্যসাগরের স্প্যানিশ দ্বীপ মলোরকা (মেজরকা) এর রাজধানী। রাজধানী পালমায় না গিয়ে মলোরকা ভ্রমণ সম্পূর্ণ হয় না।

মো. ফয়সাল আহমদ, জার্মানি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Sept 2021, 09:59 AM
Updated : 13 Sept 2021, 10:00 AM

পালমা প্রাণবন্ত ও শান্তিপূর্ণ শহর যা রাস্তার পাশের ক্যাফে, উচ্চমানের কেনাকাটা এবং সুন্দর স্প্যানিশ স্থাপত্যে পরিপূর্ণ। মলোরকা বালিয়ারিক দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং এর রাজধানী নিঃসন্দেহে তার সবচেয়ে বড় সম্পদ। এটি বছরের যেকোনো সময় পালমাকে পরিদর্শনের যোগ্য করে তোলে এর অবিশ্বাস্য জলবায়ু, সমুদ্র সৈকত, প্রাণবন্ত আশপাশের এলাকা, ঝকঝকে স্কোয়ার বা গ্যালারি, রেস্তোরাঁ এবং বার।

এর মধ্যে সান্তা পোনসা একটি উল্লেখযোগ্য জায়গা, যা বিশাল বালুকাময় সৈকতের জন্য বিখ্যাত। সৈকতের পাশে রয়েছে একটি সুন্দর সুরক্ষিত প্রাকৃতিক বন এলাকা যা হাঁটাহাটির জন্য দুর্দান্ত। সান্তা পোনসা একটি স্প্যানিশ দ্বীপ পশ্চিম মলোরকা (মেজরকা) এর একটি উপকূলীয় শহর। ৭ বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে ঘুরে এসেছি এই বিখ্যাত সৈকতের শহরটি।

বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি তুলছি আমি

যাত্রা শুরু করেছিলাম জার্মানির ড্রেসডেন এয়ারপোর্ট থেকে। আমাদের সাতজনের মধ্যে ছিলো ৪ বাংলাদেশি বন্ধু এবং ৩ নেপালি বন্ধু-বান্ধবী। আমাদের সবারই করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন নেওয়া থাকায় কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। সবার সঙ্গেই ভ্যাকসিনেশনের সনদপত্র ছিলো যা আমাদেরকে এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষকে দেখাতে হয়েছে। ভ্যাকসিন নেওয়া না থাকলে আপনাকে অবশ্যই কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ নিয়ে স্পেনে ঢুকতে হবে যা ছিলো বাধ্যতামূলক।

স্পেনের পালমা দে মলোরকা এয়ারপোর্টে পৌঁছানো-মাত্র আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে আমাদের ভ্রমণ-সম্বলিত সমস্ত তথ্য দেই, যা ছাড়া স্পেনে প্রবেশ করা প্রায় অসম্ভব ছিলো। এয়ারপোর্টের কাজ সেরে আমরা রওনা দেই সান্তা পোনসার উদ্দেশ্যে। আনুমানিক রাত ১২টায় আমরা হোটেলে পৌঁছাই। হোটেলের পাশ ঘেষে ছিলো সান্তা পোনসা সৈকত। বন্ধুরা পৌঁছানোমাত্র রাতের সান্তা পোনসা শহর দেখতে ভুল করিনি। হোটেলের বারান্দা থেকে রাতের শহরটাকে খুব আলোকসজ্জিত দেখাচ্ছিলো।

পর্যটকদের আনাগোনায় আশপাশের এলাকা খুব মুখরিত ছিলো। ক্লান্ত থাকায় কিছুক্ষণ ঘুরেই পরেরদিনের প্ল্যান তৈরি করে আমরা ঘুমিয়ে পড়ি।

সকালের নাস্তা শেষ করে আমরা সবাই প্রস্তুত হই সৈকত দেখার জন্য। সবাই একসঙ্গে ঝাপিয়ে পড়ি সমুদ্রের বুকে, সবার চোখে-মুখে ছিলো আনন্দের ছড়াছড়ি। অসম্ভব সুন্দর এই সৈকতটিকে আরও সুন্দর রূপ দিয়েছিলো আশপাশের ছোট ছোট দ্বীপগুলো। আমরা প্ল্যান করি ক্রুজ ভাড়া নিয়ে মাঝ সমুদ্রে গিয়ে সূর্যাস্ত দেখার। আমাদের ক্রুজ চালানোর পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা ছিলো না। বিকেলে সৈকতের পাশে থাকা ক্রুজ কর্তৃপক্ষের সাহায্যে আমি তা শিখে নিই।

আমি আর আমার এক বাংলাদেশি বন্ধু মিলে ড্রাইভ শুরু করি বিকেল ৭টায়, বলে রাখা ভালো সেখানে সূর্যাস্ত হয় তখন সাধারণত সাড়ে ৮ থেকে ৯ এর ভেতরে। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ প্রথমে একটু ভয় ঢুকিয়ে দেয় মনে। ধীরে ধীরে আমরা এর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় ভয় কেটে যায়। আমরা যখন ক্রুজ নিয়ে মাঝ সমুদ্রে তখন সবাই রোমাঞ্চিত। সবাই মিলে গান করি এবং যে যার মতো স্মৃতি ধারণ করে রাখতে চলে ফটোসেশন।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে খুব কাছ থেকে মনে হলো বিশাল এই নীল সমুদ্র আস্ত একটা সূর্যকে ধীরে ধীরে গিলে খাচ্ছে। সূর্যাস্তের পরপরই ৩ ঘণ্টার ক্রুজ ভ্রমণ শেষে আমরা রওনা দেই তীরের দিকে। এটা একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা ছিলো আমাদের জন্য। মাঝ সমুদ্র থেকে সূর্যাস্ত দেখা এটাই ছিলো সবার প্রথম। সান্তা পোনসা ছাড়াও আমাদের পর্যাপ্ত সময় থাকায় আমরা আশপাশের অন্যান্য সৈকতগুলো দেখে চোখ জুড়িয়েছিলাম। পাহাড়ের উপর থেকে বিশাল সমুদ্রের দিকে তাকালে আপনার মনে হবে এর বিশালতার শেষ কোথায়!

স্রষ্টার কি সুন্দর সৃষ্টি তা আপনি ঘর থেকে বের না হলে আবিষ্কার করতে পারবেন না। পালমার এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আপনাকে পুলকিত করবে, শত শত বছর বাঁচার অনুপ্রেরণা দেবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, অ্যাডভান্সড ফাংশনাল ম্যাটারিয়ালস, টেকনিশ্চে ইউনিভার্সিটি কেমনিটজ, জার্মানি

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!