আমিরাতে ভিসা সংস্কার নিয়ে প্রবাসীদের ভাবনা

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে অভিবাসন নীতিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার। প্রায় এক কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৮৯% অভিবাসীর এ দেশটি তাদের ভিসা পদ্ধতিকে ‘আরও নমনীয়’ করার ঘোষণা দিয়েছে।

জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2021, 11:44 AM
Updated : 10 Sept 2021, 11:53 AM

বাংলাদেশে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স পাঠানো দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মরত প্রবাসীরা এ খবরে উচ্ছ্বসিত। কাজের ফাঁকে, আড্ডায় বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই নিজের মতামত জানাচ্ছেন। ভিসা পুনর্গঠনের সংবাদ তাদের মধ্যে যথেষ্ট স্বস্তি বয়ে এনেছে এবং তারা সরকারের ভিসা সংস্কার নীতির প্রশংসা করেছেন।

 দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন রোডম্যাপ দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ৫০ বর্ষপূর্তিতে দেশটি ৫০টি মেগা প্রজেক্ট ঘোষণা করতে যাচ্ছে যা দেশটিতে আরও দক্ষ জনশক্তি ও অভিবাসীদের আকৃষ্ট  করবে।

প্রতিষ্ঠার ৫০ বর্ষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রতীক্ষিত দুবাই ওয়ার্ল্ড এক্সপো। তাকে সামনে রেখে আমিরাত তাদের রেসিডেন্সি সিস্টেমকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি আমিরাতের মতো অভিবাসী জনশক্তিনির্ভর দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রবাসীরা মনে করছেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাত দেশটিতে কাজের পরিবেশকে আরও স্থিতিশীল এবং মেধার উপযুক্ত ব্যবহারকে লাগসই করার লক্ষ্যে তাদের ভিসা সিস্টেমকে করছে আরও নমনীয়। ৮৮.৪৯% নাগরিককে ভ্যাক্সিনেশানের আওতায় এনে মহামারী পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করে আমিরাত তাদের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে। বিশ্বের সব দেশের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ ভিসার দ্বার উম্মুক্ত করে, শর্তসাপেক্ষে বিশেষ ক্যাটাগরির বিনিয়োগকারী, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক  গবেষকদের জন্য দেওয়া পুনরায় নবায়নযোগ্য ১০ বছর মেয়াদী গোল্ডেন ভিসার পরিধি বিস্তৃত করে, গ্রিন ভিসা ফ্রি-ল্যান্স ভিসাসহ নানা ক্যাটাগরির ভিসা চালু করে বিদেশিদের ও তাদের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে নিচ্ছে নানা সংস্কার উদ্যোগ।

শিঘ্র কার্যকর হতে যাওয়া দেশের ভিসা সিস্টেম পুনর্গঠন আইনানুযায়ী  অভিবাসীরা এখন তাদের চাকরি হারানো কিংবা অবসর গ্রহণের পর থেকে  আমিরাতে আরও ৩ থেকে ৬ মাস বৈধভাবে অবস্থান করতে পারবেন। প্রচলিত নিয়মানুযায়ী এক্ষেত্রে এখন গ্রেস পিরিয়ডের কেবল একমাসই অবস্থান করতে পারেন। এ পুনর্বিন্যাসের কারণে অভিবাসীরা আমিরাতে অন্যত্র কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন এবং তাতে দেশের মেধা দেশেই থেকে যাবে। আমিরাতকে তার সরকার কাজ, শিক্ষা ও বিনিয়োগের একটি উপযুক্ত গন্তব্য হিসেবে পরিণত করতে চান। দেশটি আগামী দশকে ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ আশা করছে।

ভিসা পদ্ধতি পুনর্গঠনের আওতায় আরও যে কয়েকটি পরিবর্তন আনা হয়েছে তা হলো- বিজনেস ট্রিপ পারমিটের মেয়াদ তিন মাস থেকে ছয় মাসে বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের পরিবারের আপন সদস্যদের স্পন্সর করার সুযোগ, মানবিক বিবেচনায় অভিবাসীদের রেসিডেন্স ভিসা একবছর বর্ধিতকরণ, অভিভাবকদের স্পন্সরে সন্তানদের বসবাসের মেয়াদ ১৮ থেকে বাড়িয়ে ২৫ বছর করা।

‘বাংলাদেশ সমিতি, ইউএই’ এর সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “যারা দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরে যাবেন তারা যদি বাড়তি কিছু সময় পান নতুন কর্মসংস্থান কিংবা ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তাহলে তা খুবই ভালো হয়। বাংলাদেশিরা যারা এখানে দীর্ঘদিন ধরে আছেন, যারা ব্যবসা করতে চান কিংবা যারা এখানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকালীন সময়ে অভিভাবকদের স্পন্সর করতে চান তারা তা পারবেন।”

‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি আবুধাবি’-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইমরাদ হোসেন ইমু বলেন, “এটি আমিরাত সরকারের একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, এজন্য আমরা সরকারকে অভিনন্দন জানাই। এই উদার ভিসা নীতি বহু বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী, শিক্ষার্থী ও ভ্রমণপিপাসুদেরকে ইউএইর প্রতি আকৃষ্ট করবে। আসন্ন দুবাই ওয়ার্ল্ড এক্সপোয় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ আমাদের জন্য সম্ভাবনা তৈরি করবে।”

নতুন ভিসা পদ্ধতিতে বিশ্বের সব দেশের নাগরিকদের জন্য আরব আমিরাত দীর্ঘমেয়াদী ভ্রমণ ভিসা ইস্যুর ঘোষণা দিয়েছে। ৫ বছর মেয়াদী এই মাল্টিপল এন্ট্রি ভ্রমণ ভিসার পূর্বশর্ত হচ্ছে এটি ব্যবহার করে দেশটিতে প্রতি বছর ৯০ দিনের বেশি অবস্থান করা যাবে না। ভিসা ফি হবে ৬৫০ দিরহাম এবং আবেদন ফরমের সঙ্গে ছয় মাসের ৪ হাজার ডলার সমপরিমাণ ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাতে হবে।

ইউনাইটেড আরব ব্যাংক আবুধাবির সহকারী ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান বলেন, “পেট্রো প্রাচুর্যের দেশ সংযুক্ত আমিরাত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে এ দেশটি সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে। দেশটি নিজেকে বহির্বিশ্বের কাছে ট্যুরিজম ও বিজনেস হাব হিসেবে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে এমনকি তাদের পররাষ্ট্রনীতি এবং রেসিডেন্সি আইনে অনেক উদার সংস্কার এনেছে যা প্রশংসার দাবিদার। গোল্ডেন ভিসা, গ্রিন ভিসা, মাল্টিপল এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসা, ফ্রিল্যান্স ভিসা আমিরাতে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান ও সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।”

আবুধাবিতে বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তা মেহেরুন্নেসা দিপা বলেন, “একজন প্রবাসী উদ্যোক্তা কিংবা ভ্রমণকারী ৫ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসা পেলে নির্ভাবনায় আমিরাতে যাওয়া আসা করতে পারবেন। যেমন আমার নিজের যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা রয়েছে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা এদেশে তাদের অভিভাবকদের স্পন্সর করার যে সুযোগ পাবেন তা প্রশংসনীয়।”

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!