যুক্তরাজ্যে দেড় বছর পর কারি ইন্ডাস্ট্রির কর্মশালা অনুষ্ঠিত

কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর শিকার কারি ইন্ডাস্ট্রি এবং সেবাখাতের হাজারো মানুষের প্রতি শোক প্রকাশ ও শ্রদ্ধা জানিয়ে যুক্তরাজ্যে রন্ধন শিল্প নিয়ে ‘কারি লাইফ’ ম্যাগাজিন এক কর্মশালা শেষ করেছে।  

যুক্তরাজ্য প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2021, 06:17 PM
Updated : 26 July 2021, 06:18 PM

স্থানীয় সময় রোববার লন্ডনের ক্রাউন প্লাজা ডকল্যান্ড হোটেলে অনুষ্ঠিত ওই কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে আসা রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী, শেফ, কারিশিল্প বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতারা।

যুক্তরাজ্যে কোভিড সংক্রমণ শুরুর পর দেড় বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এটি ছিল কারি ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান, যেখানে এ খাতের সংশ্লিষ্টরা জড়ো হয়েছিলেন। মহামারী শেষ না হলেও দীর্ঘ সময় পরে একটি অনুষ্ঠানে এভাবে একে অন্যের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করতে পেরে সবাই ছিলেন উচ্ছ্বসিত।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে কোভিড সংক্রমণে মৃত্যুবরণকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।  এছাড়া অনুষ্ঠানের দিনই যুক্তরাজ্যে ব্রিটিশ বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইয়াফর আলীর মৃত্যুতেও শোক প্রকাশ করা হয়।

স্বাগত বক্তব্যে কারি লাইফ এর সম্পাদক সৈয়দ বেলাল আহমদ কোভিড সংক্রমণে মারা যাওয়া কারি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের কথা স্মরণ করে বলেন, “মহামারী শেষ হয়নি, সংকট কাটেনি। প্যানডেমিক ও আইসোলেশনে থাকার কারণে ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমাদের অনুষ্ঠানও আজ এর প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। আমাদের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য রাখার জন্যে নির্ধারিত তিনজন উপস্থাপক আইসোলেশনে যাওয়ায় উপস্থিত হতে পারেননি।”

সৈয়দ বেলাল আহমদ বলেন, “রেস্টুরেন্ট কমিউনিটির মধ্যে সবসময়ই একটি নেতিবাচক প্রচার চালান একটি গোষ্ঠি। এই শত শত, হাজার হাজার রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে অতোটি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট বন্ধ হচ্ছে... ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমি বলি এসব প্রচারণা বন্ধ করুন। নিজেরা সস্তা পাবলিসিটি পাওয়ার জন্য যতটা না ঘটছে তার চেয়ে বেশি বাড়িয়ে বলা বন্ধ করুন। এতে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়। তারা নিজেদের ব্যবসায় যতটা মনোযোগ দেওয়ার কথা ততটা দিতে পারেন না। সুতরাং তাদের উৎসাহ দিন, সমাধানের পথ খুঁজুন, তাদের সাহায্য করুন। তাহলেই ইন্ডাস্ট্রি টিকে থাকবে।”
তিনি বলেন, “আমরা ব্যবসায়ীদের ব্যবসার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার জন্যই এই আয়োজন করেছি। কিভাবে তারা উপকৃত হতে পারবেন, কিভাবে সেবার মান বাড়ানো থেকে খাবার নিউ ট্রেন্ড ভেগান অর্থাৎ প্লান্ট বেইজড বা উদ্ভিদভিত্তিক মজাদার খাবার পরিবেশন করতে পারবেন সেটাই এ ওয়র্কশপে শেখানো হবে।”

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন ফুড অ্যান্ড বেভারেজ উদ্যোক্তা সালিমা ভেল্লানি। লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস থেকে ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স এর উপর স্নাতক ও ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সে মাস্টার্স করার পর কিভাবে তার প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাবসার্ড বার্ড’ ও ‘কেবক্স গ্লোবাল’-কে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিলেন সে গল্প শোনান সালিমা। 

অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে তার ব্যবসা রয়েছে। সম্প্রতি কেবক্স গ্লোবাল নতুন করে ১২ মিলিয়ন পাউন্ড রেস্টুরেন্ট শিল্পে বিনিয়োগ করেছে।

সালিমা ভেল্লানি কারি শিল্পের  নতুন ট্রেন্ডে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্ট হওয়ার আহ্বান জানান।

কর্মশালায় সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারিতার ওপর বক্তব্য দেন সাম স্মিথ। তিনি ব্যবসার প্রসারে সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

কারি লাইফ এর প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, “আমরা মানুষের সাড়ায় অভিভূত। আবহাওয়া দুযো‍র্গপূর্ণ থাকার পরও অনুষ্ঠানে সবাই এসেছেন। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিরও আস্থা ফিরে আসবে এটাই আমি আশা করি।”

মহামারীর সময়ে ইন্ডাস্ট্রির প্রথম অনুষ্ঠান করার জন্য সহযোগিতাকারীদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন, ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স, ইউকেবিসিসিআই ও বিবিসিএ -র নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকায় তাদেরকেও ধন্যবাদ জানান নাহাস পাশা।

কর্মশালায় ডার্লিংটন, নিউক্যাসল, মানচেস্টার, বেডফোর্ড, লিডস, কেন্ট, সাসেক্স এবং মিডল্যান্ড থেকে ব্যবসায়ীরা যোগ দেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাঙালি শেফ ওলি খান।

কারি শিল্পে নতুন টেকনোলজি ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ শেফ ওলি খান বলেন, “টেকনোলজির ব্যবহার অবশ্যই আমাদের অনেক কাজ সহজ করে দিয়েছে। অনেক সুফল নিয়ে এসেছে, দক্ষতা বৃদ্ধি করেছে। টেকনোলোজির ব্যবহার করে ব্যবসাও বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু খাবারের ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক বিষয় নজর রাখার প্রয়োজন রয়েছে।”

“অনেক ধরনের কম্বি ওভেন বেরিয়েছে এবং আমি ব্যবহারও করেছি। বিশেষ করে ছোট রেস্টুরেন্টে এগুলো ব্যবহার করে আমাদের উপমহাদেশীয় খাবারের অনেক বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা যায় না বলেই আমি মনে করি। যেমন তান্দুরি ওভেনে যে স্লো কুকিংয়ের খাঁটি স্বাদ পাওয়া যায়, সেটা হয়তো আপনি এসব ওভেনে পাবেন না। তাছাড়া ছোট রেস্টুরেন্টের জন্য বড় বিনিয়োগও হয়তো আর্থিকভাবে যৌক্তিক নয়।”

তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত শেফদের খাবার মজাদার রাখার দিকে মনোযোগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, “মানুষ রেস্টুরেন্টে আসে খাবারের প্রকৃত স্বাদের জন্য, হুটহাট রান্না করা কিছুর জন্য নয়।”

কারি লাইফ ওয়ার্কশপ-এর প্রধান আকর্ষণ ছিল শেফ মৃদুলা বাজকারের তাৎক্ষণিকভাবে তৈরি ভেষজ আইটেম রান্না এবং ডেজার্ট তৈরি। উপস্থিত অতিথিরাও তার রান্না চেখে ভূয়সী প্রশংসা করেন। 

সম্প্রতি মৃদুলা ভারতীয় ভেষজ খাবারের দুইশ রেসিপি নিয়ে একটি বই লিখেছেন, যেটি অংশগ্রহণকারী শেফদের উপহার দেওয়া হয়।

কর্মশালা শেষে কারি লাইফ এর পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন শেফ এবং রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের সার্টিফিকিট ও উপহার দেওয়া হয়। এরা হলেন- সলিম জাফর উদ্দিন (দ্য ফ্যাট বৌদ্ধ), শেফ আবুল মনসুর (তাজ কুজিন), শেফ সৈয়দ জহরুল ইসলাম ( দ্য ক্যাপিটাল), বিজয় সিং পানওয়ার, আব্দুল কাহের (ক্রাউন কিচেন) ও ব্যবসায়ী আব্দুল রহমান (টেস্ট অব নওয়াব)।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জান্নাত সৈয়দ।

কোভিড সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাজ্যে প্রথম ধাক্কা লেগেছিল যে কয়েকটি খাতে তার মধ্যে কারি ইন্ডাস্ট্রিও ছিল। গত ১৯ জুলাই যুক্তরাজ্য সরকার কোভিড সংক্রান্ত অনেক বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়ায় কারি লাইফ এর নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘কালিনারী ওয়ার্কশপ’ ২০১৯ সালের পরে এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হলো।

এ বছরের ১০ অক্টোবর দুই বছর পরে আবারও ‘কারি লাইফ’ ম্যাগাজিনের আয়োজনে সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান ‘কারি লাইফ অ্যাওয়ার্ড’ আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।

লন্ডনের রয়েল ল্যাংকাস্টার হোটেলে ওই সম্মাননা অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা হচ্ছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।

জাস্টইট এর পৃষ্ঠপোষকতায় এবারের কারি লাইফ কালিনারি ওয়ার্কশপে সহযোগিতা করেছে- ইউনিসফট, ট্র্যাভেল লিংক ও কোবরা বিয়ার।

অনুষ্ঠানে শেষে ক্রাউন কিচেন ক্যাটারার্সের সৌজন্যে খাবার পরিবেশন করা হয়।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!