সংবাদ পাঠক ও অভিনেতা কাফি খানের মৃত্যু

ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের এক সময়ের সংবাদ পাঠক এবং অভিনেতা ও বাচিক শিল্পী কাফি খান মারা গেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকনিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2021, 05:49 AM
Updated : 2 July 2021, 10:53 AM

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনে ভার্জিনিয়া সেন্টার হাসপাতালে বৃহস্পতিবার বিকালে কাফি খান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন তার ছেলে রাফি খান।

সত্তরের দশকের শেষ থেকে আশির দশকের শুরুতে জিয়াউর রহমানের প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করা কাফি খান দীর্ঘদিন প্রোস্টেট ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

যুক্তরাষ্ট্র সময় শুক্রবার জুমার নামাজের পর সুগারল্যান্ড রোডের অ্যাডামস সেন্টার মসজিদে তার জানাজা হবে। এরপর মুসলিম গোরস্থানে দাফন করা হবে।

দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক কাফি খান ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগ থেকে অবসর নেন ১৯৯৪ সালে। তারপর যুক্তরাষ্ট্রেই পরিবার ও স্বজনদের সান্নিধ্যে অবসর জীবন কাটাচ্ছিলেন।

মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা প্রবাসী লেখক-বিজ্ঞানী ড. আশরাফ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুদিন আগেও (মঙ্গলবার) প্রবাসীদের এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে অসুস্থ কাফি খান বিছানায় শুয়েই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শাহজাহান’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন।

“সে সময় তাকে বিমর্ষ দেখালেও এত তাড়াতাড়ি তিনি চলে যাবেন সেটা কেউ বুঝতে পারিনি।”

২০১৯ সালের নভেম্বরে কাফি খানের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন ড. আশরাফ। সে সময় কাফি খান ক্যান্সারের চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

কাফি খান সে সময় বলেছিলেন, “আমি ২০২০ সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকতে চাই। ট্রাম্পের মত একজন খারাপ লোক যাতে আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে না পারে সেই ব্যালট যুদ্ধে অংশ নিতে চাই।”

কাফি খানের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশপরগনা জেলার বারাসাত এলাকার কাজীপাড়া গ্রামে। সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্ম ১৯২৯ সালের ১ মে।

গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে বারাসত গভার্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে তিনি পাস করেন ম্যাট্রিক। তারপর কলকাতার রিপন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক করে বিকমে ভর্তি হন।

১৯৪৭ এ দেশভাগের পর ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকা চলে আসেন কাফি খান। তার পরিবারের অন্য সদস্যরা ভারতেই থেকে যান।

ঢাকায় এসে পাকিস্তানের রাজস্ব বিভাগে কেরানির চাকরি দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন কাফি। পাশাপাশি ১৯৫১ সালে পাকিস্তান রেডিওর ঢাকা শাখায় বেতার-নাটকে কণ্ঠদানও শুরু করেন। এছাড়া ঢাকায় মঞ্চনাটকের অন্যতম সংগঠক হিসেবেও কাজ করতে থাকেন।

১৯৬৬ সালে কাফি খান প্রথমবার ভয়েস অব অ্যামেরিকার বাংলা বিভাগের কর্মী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে কর্মরত ছিলেন। তৎকালীন কিছু প্রবাসীর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে জনমত গঠনে কাজ করেন তিনি।

জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পর প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিলে কাফি খানকে তার প্রেস সচিব হিসেবে কাজ করার আমন্ত্রণ জানান। কাফি খান সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। সাড়ে তিন বছর পর ১৯৮১ সালে জিয়া নিহত হন।

এরপর ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভয়েস অব আমেরিকার চাকরি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী হন কাফি খান।

মঞ্চনাটক, কবিতা আবৃত্তি ও বেতার অনুষ্ঠান ছাড়াও, ষাটের দশকে ঢাকায় বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি।

কাফি খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। এক দিকে সাংবাদিকতা, অন্যদিকে সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ সবখানেই তার অসামান্য প্রতিভা তাকে এক স্বতন্ত্র মাত্রা দান করেছিল।

“তিনি জিয়াউর রহমানের সাথে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিবিড় যোগাযোগ ও সেতুবন্ধন রচনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।”

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!