জীবনের শেষ দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে বসে হুমায়ূন আহমেদের আঁকা চারটি ছবি আত্মসাতের অভিযোগে তার স্ত্রী শাওন মামলা করার পর বিশ্বজিৎ সাহার এমন প্রতিক্রিয়া এল।
আর তার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শাওন বলেছেন, তার মামলায় বিশ্বজিৎ সাহা আসামি নন। ফলে তার এমন বিবৃতির কারণ ‘বোধগম্য নয়’।
মঙ্গলবার ঢাকার হাকিম আদালতে দায়ের করা ওই মামলায় বিশ্বজিতের সাবেক স্ত্রী রুমা চৌধুরী ও মঞ্জুরুল আজিম পলাশ নামে আরেকজনকে আসামি করা হয়। আরজিতে বিশ্বজিৎ সাহার নাম এলেও আসামির তালিকায় তাকে রাখা হয়নি।
মামলা হওয়ার খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বজিৎ সাহা এক লিখিত বিবৃতিতে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
নিউ ইয়র্কে মুক্তধারার এই কর্ণধার বলেন, “হুমায়ূন আহমেদের কোনো চিত্রকর্মের প্রদর্শনী বা তার কোনো চিত্রকর্ম চুরি হওয়ার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।”
ক্যান্সারে আক্রান্ত হুমায়ূন ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা নেওয়ার সময় সেখানেই ছেলে নিষাদকে নিয়ে ২৪টি ছবি এঁকেছিলেন বলে শাওন জানান। ওই বছরের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবস্থায় মারা যান হুমায়ূন।
হুমায়ূনের মৃত্যুর পর অভিনেত্রী শাওন সন্তানসহ দেশে ফিরে আসেন। এরপর ছবিগুলো ফেরত চাইলে বিশ্বজিৎ ও রুমা ‘টালবাহানা’ শুরু করেন বলে শাওনের অভিযোগ।
আরজিতে তিনি বলেছেন, রুমা তার সাবেক স্বামী বিশ্বজিৎকে দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজের মিরপুরের বাসায় ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ২০টি ছবি ফেরত পাঠালেও চারটি ছবি এখনও ফেরত পাওয়া যায়নি।
শাওন আরজিতে বলেন, “বিশ্বজিতের সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর রুমা পলাশের সঙ্গে বসবাসের উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের কুমিল্লায় চলে আসেন। পলাশ গত ৩১ মার্চে তার ফেইসবুক পাতায় কুমিল্লায় একটি প্রদর্শনীতে হুমায়ূন আহমেদের আঁকা ছবি প্রদর্শনের ঘোষণা দেন, সেখানে আত্মসাৎ করা ছবি রয়েছে।”
বিশ্বজিৎ বলেছেন, হুমায়ূন আহমেদের মা আয়শা ফয়েজ জীবিত থাকা অবস্থায় মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ তার অন্যান্য ছেলে মেয়েদের উপস্থিতিতে মিরপুরের পল্লবীর বাসায় ‘একটি ছাড়া হমায়ূনের আঁকা সব চিত্রকর্ম’ হস্তান্তর করেন তিনি।
“২৪টি চিত্রকর্মের মধ্যে ২০টি তার মায়ের কাছে হস্তান্তর করেছি ২০১৩ সালে। একটি ছবি মেলার স্থান থেকে হারিয়ে যায়। এ বিষয়ে নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যামাইকার পুলিশ প্রেসিংকটে জিডি করা হয়েছে, তার কপিও হুমায়ূন আহেমদের মায়ের কাছে হস্তান্তর করেছি।
“একটি চিত্রকর্ম হুমায়ূন আহমেদ জাতিসংঘে তৎকালীন স্থায়ী প্রতিনিধি বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে উপহার দেন। আরেকটি বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনকে উপহার দেওয়া হয়। ২৪ নম্বর ছবিটি হুমায়ূন আহমেদ উপহার দেন নিউ ইয়র্কে তৎকালীন বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাব্বির আহমেদকে।”
বাংলাদেশ মিশনকে যে ছবিটি হুমায়ূন উপহার দিয়েছিলেন, সেটি এখনও সেখানেই রয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূর এলাহি মিনা।
বিশ্বজিৎ তার বিবৃতিতে বলেন, হুমায়ূন আহমেদের আঁকা সকল ছবি ও প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত বাংলাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘হুমায়ূন আহমেদের শেষদিনগুলি’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে। ছবি উপহার দেওয়ার সময় তোলা আলোকচিত্রও আছে।
“… হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কখন থেকে আমার পরিচয় তা শাওনের জানার কথা নয়। ১৯৯৪ সাল থেকে যতবার হুমায়ূন আহমেদ নিউ ইয়র্কে এসেছেন, প্রধানত আমার উদ্যোগে ‘মুক্তধারা নিউ ইয়র্ক’ ও ‘নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলা’কে ঘিরেই ছিল তার সকল আনন্দ-উদযাপন। শাওনের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের পরিচয়েরও অনেক আগের ঘটনা সেটা।”
বিশ্বজিৎ জানান, চিকিৎসা নিতে নিউ ইয়র্কে গিয়ে হুমায়ূন আহমেদ তারই তত্ত্বাবধানে ছিলেন। বেঁচে থাকা অবস্থায় ‘স্বজ্ঞানে’ তিনি হাসপাতালসহ সবক্ষেত্রে তার ঠিকানাই ব্যবহার করেছেন।
মামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, শাওনের হাতে না দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের চিত্র প্রদর্শনীর সকল ছবি হুমায়ূনের পরিবারের সকলের অভিভাবক হিসেবে তার মায়ের কাছে আমি নিজ হাতে হস্তান্তর করে এসেছি।
“…শাওন আমার এই পদক্ষেপের কারণে হমায়ূন আহমেদের আঁকা ছবিগুলো গ্রাস করতে পারেননি, সেটাই আমার অপরাধ।”
বিশ্বজিৎ সাহার বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মেহের আফরোজ শাওন শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি মামলা করেছি রুমা চৌধুরী ও মঞ্জুরুল আজিম পলাশের নামে। বিশ্বজিৎ সাহার নামে তো আমি কোনো মামলা করিনি। তিনি বিবৃতি দিলেন কেন আমি সেটাই বুঝতে পারছি না।
“উনার প্রাক্তন স্ত্রীর নামে মামলা করাতে তিনি কেন বিবৃতি দেবেন সেটা আমার বোধগম্য নয়। আর তিনি বিবৃতিতে কী লিখেছেন সেটা জানতেও আমি আগ্রহী না।”