নিউ ইয়র্কে জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী: বিএনপির অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিত

বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে দলটির ব্যানারে ভিন্ন ভিন্ন আটটি কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার একটিতে বিতণ্ডার জের ধরে লাঞ্ছিত হয়েছেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2021, 04:37 PM
Updated : 1 June 2021, 04:37 PM

স্থানীয় সময় ৩১ মে পর্যন্ত নানা উপদলে ভাগ হয়ে যাওয়া বিএনপির নেতাকর্মীরা জিয়ার ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে পাল্টাপাল্টি ওই আট কর্মসূচী পালন করেছেন। 

এর একটিতে বিএনপি সমর্থক বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমানকে আঘাত করা হয়েছে। আরেকটিতে একজন বক্তার ‘মৃত্যুবার্ষিকী’র জায়গায় ‘জন্মবার্ষিকী’ বলায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ভেতর দলীয় দ্বন্দ্ব নিরসনে ৫০১ সদস্যের ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটি’ ঘোষণার পর থেকেই আগের চেয়েও বেশি মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায় সেখানকার বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

বিরোধের মধ্যেই ওই কমিটিকে ৭০১ সদস্যে উন্নীত করা হলেও কোন্দল না থেমে বরং জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী ঘোষণা করেন। 

লাগোয়ার্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলে বলরুমের আয়োজিত কর্মসূচীতে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটি’-র ৪৭ যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ২৮ যুগ্ম সদস্য-সচিবের মধ্যে মাত্র ১২ জন উপস্থিত হয়েছিলেন।

জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী সমাবেশে বক্তব্য দেন দেলোয়ার হোসেন।

কমিটিতে থাকা বাকিরা এ ‘ইভেন্ট কমিটি’র কয়েক নেতৃস্থানীয়ের ‘অনাচারে’র এবং ‘ত্যাগী নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়নের নিন্দা’য় ভিন্ন ভিন্ন আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন ।

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সুবর্ণ জয়ন্তীর উদযাপন কমিটির রূপরেখা তৈরী করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম। তাকে সহায়তা করেন লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন।

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির বিলুপ্ত কমিটিতে বিগত দিনে নেতৃত্ব দেওয়া অনেকের সঙ্গে পরামর্শ না করে কমিটি দেওয়ায় দীর্ঘদিন দলের কাজে যুক্ত অনেকে বাদ পড়েন ওই কমিটি থেকে।

আয়োজিত আটটি অনুষ্ঠানের মধ্যে ২৯ মে সন্ধ্যায় কাজী আজম এবং ফিরোজ আহমেদের নেতৃত্বাধীন গ্রুপের অনুষ্ঠানে ঘটে বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মশিউর রহমানকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা।  

ওই অনুষ্ঠানে অতিথির মধ্যে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন।

তাকে উদ্দেশ্য করে অনুষ্ঠানের অপর অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মশিউর রহমান বলেন, “আপনারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পেয়েছেন। অথচ ম্যাডাম আজ কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। আপনাদের উচিত ছিল স্বেচ্ছায় কারাবরণের। সেটি কেউ করেননি। অধিকন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এসে অনেকেই বিএনপির কোন্দলে মদদ দিচ্ছেন। প্রবাসের নিষ্ঠাবান কর্মীদেরকে বিভ্রান্ত করছেন।”

“আপনাদের কানপড়ার কারণে ৯ বছর যাবত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি হচ্ছে না।”

মীর মশিউরের এমন বক্তব্যে উপস্থিত এক কর্মী তার প্রতি তেড়ে যান এবং কিল-ঘুষি দিয়ে চেয়ার থেকে ফেলে দেন। এতে তিনি আহত হন। পরে সবার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

৩০ মে সন্ধ্যায় আলোচনা সভা ও দোয়ার আয়োজন করে ৫০১ থেকে ৬০১ সদস্যে বর্ধিত ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটি’। সেখানে যুগ্ম আহ্বায়ক, যুগ্ম সদস্য-সচিবদের ১০ শতাংশও উপস্থিত হননি।

ওই অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কর্মকাণ্ডে কখনও দেখা যায়নি এমন কিছু প্রবাসীকে আনা হয় বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা গিয়াস আহমেদ। 

জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীর সমাবেশে বিশেষ মোনাজাত।

গিয়াস আহমেদ বিএনপির কেন্দ্রীয় উদযাপন কমিটির অন্যতম সদস্য এবং মূলধারার রাজনীতিক। তাকে ৬০১ সদস্যের আহবায়ক কমিটির দুই শীর্ষ কর্মকর্তা সম্মান জানাতে অনীহা প্রকাশ করেন বলে তিনি পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছিলেন ২৯ মে বিকালে জ্যাকসন হাইটসে ডাইভার্সিটি প্লাজায়।

সে কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাসাসের সেক্রেটারি চিত্রনায়ক হেলাল খান।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করেই এ কর্মসূচিতে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত হয়েছিল। 

ওই অনুষ্ঠানে সার্বিক সমন্বয় এবং সঞ্চালনা করেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা এম এ বাতিন। সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট সোলায়মান ভূইয়া। 

এদিকে উদযাপন কমিটির দুই নেতার আচরণের প্রতিবাদে ৩০ মে সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে দোয়া ও আলোচনার  আয়োজন করেছিলেন ওই  কমিটির অন্যতম যুগ্ম আহবায়ক ও বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং মূলধারার রাজনীতিক আকতার হোসেন বাদল। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।

ওই অনুষ্ঠানেও বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীর সমাগম ঘটেছিল। 

সেখানে আকতার হোসেন বাদল অভিযোগ বলেন,  “বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার লক্ষ্যে দুর্বার আন্দোলন রচনা সম্ভব হচ্ছে না দলে ঘাপটি মেরে থাকা সরকারের দালালদের কারণে। এসব দালালদের নেতৃত্ব থেকে বিতাড়ন করতে এই প্রবাস থেকে আন্দোলন রচনা করতে হবে ১/১১ এর চেতনায়।”

সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ সোসাইটির বোর্ড অব ট্রাস্টির অন্যতম সদস্য দেলোয়ার হোসেন বলেন, “নেতারা হুঙ্কার দিয়েছিলেন যে, ম্যাডামকে কারাগারে নেওয়া হলে তারা স্বেচ্ছায় কারাবরণ করবেন।”

জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী সমাবেশে বক্তব্য দেন আকতার হোসেন বাদল।

“অথচ তেমন কোন ঘটনাই বাংলার মানুষ দেখেননি। আর এভাবেই ক্ষমতাসীন সরকারের কাছে থেকে নানা সুবিধাভোগীদের রহস্যজনক আচরণের অসহায় ভিকটিম হয়ে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে আজ কারাগারে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।”

দেলোয়ার হোসেন এবং আকতার হোসেন বাদল ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে প্রবাসীদেরকে আন্তর্জাতিক লবিং জোরদার করতে হবে’ বলে মত প্রকাশ করেন।  

বিএনপি নেতা রাফেল তালুকদারের সভাপতিত্বে এ আলোচনার প্রারম্ভে আশরাফউদ্দিন ঠাকুরের নেতৃত্বে জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে জিয়াউর রহমানের জীবন-কর্ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় আরো অংশ নেন বিএনপি নেতা মোহাম্মদ বশীর, রফিকুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান, নূর ইসলাম বর্ষণ, মাইনউদ্দিন মেহদী, এস এম আলাউদ্দিন, ইকবাল হায়দার, এমরান শাহ রণ, দেলোয়ার হোসেন শিপন, নূরল ইসলাম খসরু, শাওন বাবলা, এস এম শফি, জামাল হোসেন, হুমায়ূন কবীর, আব্দুস সালিক জাকির, এবং এ কে এম রফিকুল ইসলাম ডালিম।

এ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সরোয়ার বাবু।

৩০ মে এই আলোচনা সভা ছাড়াও  জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জ্যাকসন হাইটস এলাকাবাসীর ব্যানারে দোয়া ও তবারক বিতরণ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি নেতা ও মূলধারার রাজনীতিক গিয়াস আহমেদ।

জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী সমাবেশে বক্তব্য দেন গিয়াস আহমেদ।

এ কর্মসূচিতে মধ্যে আরও ছিলেন নিউ ইয়র্ক মহানগর বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা, যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সভাপতি জাকির এইচ চৌধুরী এবং সহ-সভাপতি আবুল কাশেম প্রমুখ।

৩১ মে সোমবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসে ইত্যাদি গার্ডেন পার্টি হলে জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আরেকটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপি নেতা ও গ্রেটার ঢাকা জাতীয়তাবাদী ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাসেত রহমান এবং পরিচালনা করেন বিএনপি নেতা সোহরাব হোসেন।

ভার্চুয়ালে ঢাকা থেকে বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান।

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা গিয়াসউদ্দিনের সার্বিক সমন্বয়ে এ আলোচনায় অতিথি ছিলেন রীটা রহমান, এস আই শেলী, গিয়াস আহমেদ, এম এ বাতিন, দেলোয়ার হোসেন শিপনসহ যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন