চীনে যেকোনও আন্তর্জাতিক মেলার কলেবর কতোটা বড় হয়- তা নিজে উপস্থিত না হলে বোঝা বেশ কঠিন। যেমন চীনের ৫ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত সাইকেল মেলার কলেবরের কথাই ধরা যাক। এবারের মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সাংহাইয়ের নিউ ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো সেন্টারের ১ লাখ ৩৫ হাজার বর্গমিটার এলাকা জুড়ে। কেবল একটা ধারণা দেওয়ার জন্য বলি- বাইসাইকেল মেলাটি আয়োজনের ভেন্যু বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মার্কেট যমুনা ফিউচার পার্কের চেয়ে প্রায় সাড়ে চারগুণের কাছাকাছি বড়।
মেলাটি কেবল বিশালই নয়, এতে ছিল নানা ধরনের সাইকেল এবং এর যন্ত্রাংশ। এক জীবনে এর অনেককিছু চোখে দেখা তো দূরে থাক, নামও শুনিনি।
মেলায় গিয়ে কথা হলো বাংলাদেশি মালিকানাধীন কোম্পানি হাংজো হাইভ ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার মো. ফররুখ উদ্দিন পিয়াসের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “এ দুর্দান্ত এক্সপোতে চীনা সরকার বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, এবং পেশাদার ক্রেতাদের চীনা বাজারে অংশ নিতে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানায়। এক্সপোতে অংশ নেওয়া মানেই হল সরাসরি উৎপাদকের সাথে যোগাযোগ হওয়া। যার ফলে পণ্যের মান এবং মূল্য ঠিক রাখা সম্ভব।”
“এবারের প্রদর্শনীতে আসায় আমার সাথে বাচ্চাদের সাইকেল, অ্যাডাল্ট সাইকেল, রেসিং সাইকেল, স্মার্ট সাইকেল, ই-বাইক, সাইকেল আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, এবং দুই চাকার গাড়ি এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি উৎপাদকের সাথে সংযোগ হয়েছে।”
ইয়াংজু ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স অধ্যয়নরত আরেক বাংলাদেশি রাফসানা মিলনের সাথে কথা হলো।
তিনি বলেন, “যেহেতু পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু সময় পাচ্ছি কাজ করার তাই ছোট পরিসরে ব্যবসায় নিজেকে যুক্ত করছি। কেননা চীনকে বলা হয় ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু। সাংহাইতে অনুষ্ঠিত ৩০তম বাইসাইকেল এক্সপোতে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত সাপ্লায়ার সাথে কথা হয়েছে।”
মেলায় ঘুরতে এসেছিলেন সুলতান সুমন নামের আরেক বাংলাদেশি ছাত্র। তিনি বলেন, “আমি এক্সপোতে আসার পর অনেক কোম্পানির সাথে আমার কথা হয়েছে। তাদের সাথে কথা বলে আমি অনেক কিছু জানতে এবং বুঝতে পেরেছি। আমি পড়াশোনার পাশপাশি চীন থেকে বাইসাইকেল এবং বাইসাইকেল পার্টস নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করতে চাই।”
“আমার সাথে বাইসাইকেল এবং বাইসাইকেল পার্টস প্রস্তুতকারক অনেক ফ্যাক্টরির সাথে পরিচয় হওয়ার ফলে, আমি এখন চায়না থেকে বাইসাইকেল এবং বাইসাইকেলের যেকোনো ধরনের পার্টস চায়না থেকে বাংলাদেশে পাঠাতে পারবো। আমি ভবিষ্যতে এ পণ্যগুলো নিয়ে ব্যবসা করতে ইচ্ছুক।”
মেলায় এসে জানতে পারলাম কোভিড-১৯ মহামারী বেশিরভাগ যানবাহন শিল্পের জন্য দুর্দশা বয়ে নিয়ে আসলেও, সাইকেলের ফিরিয়ে এনেছে সুদিন। পরিবেশবান্ধব যাতায়াত এবং ভাইরাস থেকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ যানবাহন সাইকেল ছাড়া আর কিইবা হতে পারে!
চীনা রপ্তানিকারকদের আ্যাসোসিয়েশন জানাচ্ছে, ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সাইকেল রপ্তানি হয়েছে এক কোটি ৬১ লাখ ৯০ হাজারটি, যার মূল্য ১০৬ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। অর্থের মূল্যের দিক থেকে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে ১০১ দশমিক ৬ শতাংশ।
মেলায় ঘুরতে ঘুরতে জানতে পারলাম একটি মজার তথ্য। বাংলাদেশিদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় তারা জানালো- মহামারীর এ সময়ে নাকি মাস্কের পরেই চীনা বাইসাইকেল দেশটির সবচেয়ে বড় রপ্তানি পণ্য হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
সত্যিকার অর্থেই আমার কাছেও মনে হলো- মহামারীর পরিবর্তন হয়তো আমরা এর মধ্যে রয়েছি বলে টের পাচ্ছি না। কিন্তু দুনিয়া পাল্টাচ্ছে। নতুন দুনিয়ায় হয়তো বাইসাইকেল আবার ফিরে আসবে প্রধান ব্যক্তিগত বাহন হিসেবে।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন |