রোববার জর্ডানে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আয়োজনে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
দূতাবাসের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাতৃভাষা দিবসের আন্তর্জাতিকীকরণে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন জর্ডানের সংস্কৃতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগ শুধু তাদের নিজদের ভাষাই নয়, বিশ্বের প্রতিটি ক্ষুদ্র ও আঞ্চলিক ভাষার মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সে কারণেই বাংলাদেশের শহীদ দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছে।
তিনি বলেন, ভাষা বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং তা মানুষের অতীত ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যতের মধ্যে সেতুবন্ধন।
“ভাষা যোগাযোগের মৌলিক মাধ্যম। ভাষা একটি জাতির পরিচয় বহন করে। তাই বহু ভাষাভাষীর সংখ্যা বিশ্বে যত বেশি হবে, ততই আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ হবে।”
বাংলাদেশ ও জর্ডানের পারস্পরিক সাংস্কৃতিক বিনিময় বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই ভাষার শিল্প ও সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য রচনা অনুবাদ করার ওপর গুরুত্ব দেন বাসেম মোহাম্মদ আল তুয়েসি।
সকালে দূতাবাসে জাতীয় সংগীতের সাথে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়, দূতাবাসে স্থাপিত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে ভাষা শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সবাই। এ উপলক্ষে দূতাবাস নির্মিত একটি ছোট ভিডিও চিত্রও দেখানো হয়।
একুশের আলপনায় সজ্জিত দূতাবাস চত্বরে এ আয়োজনে মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূতসহ কূটনীতিকরা, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা, জর্ডানের স্থানীয় নাগরিক এবং জর্ডানে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা পর্বে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বাংলাদেশের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
“শুধু তাই নয়, ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর প্রথম ভাষণটিও ছিল বাংলায়। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন।”
কে এম খালিদ বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তৎকালীন নেতাদের নেতৃত্বে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সংগঠিত আন্দোলনে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি প্রাণ দিয়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। ভাষার দাবিতে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
“এ দিবসের তাৎপর্য লুকিয়ে আছে দেশকে ভালোবাসা, দেশের মানুষকে, দেশের সংস্কৃতিকে ভালোবাসা ও তার জন্য গর্ব বোধ করার মধ্যে। এ দিবসে প্রত্যেক ভাষাভাষী মানুষ নিজের মাতৃভাষাকে যেমন ভালবাসবে, তেমনি অন্য জাতির মাতৃভাষাকেও মর্যাদা দেবে। এভাবে একুশকে চেতনায় ধারণ করে মাতৃভাষাকে ভালোবাসার প্রেরণা পাবে মানুষ।”
অনুষ্ঠানের বিশেষ বক্তা জর্ডান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দেল করিম বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আরব অঞ্চলের জন্যও প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ।
“ভাষা আন্দোলনে শহীদ বাঙালি ভাইদের প্রতি আমার সালাম ও শ্রদ্ধা, তাদের আত্মত্যাগের বিনময়ে বাংলাভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, সেই সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পৃথিবীর সকল মাতৃভাষার অধিকার।”
বাংলাদেশ ও জর্ডান তাদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে ভাষান্তরের মাধ্যমে আরও কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে বলে মত দেন তিনি।
চল্লিশের দশকের শেষভাগের ইতিহাস এবং পরে পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কেন্দ্রীয় ভূমিকার কথা তিনি তুলে ধরেন সেখানে।
এছাড়া মাতৃভাষার সংগ্রাম কীভাবে জাতির পিতার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রসারিত করেছিল, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের চূড়ান্ত স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করেছিল, সে বিষয়েও তিনি আলোকপাত করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেষ্টায় যেভাবে ২১ ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পায় এবং প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার বাংলাদেশের জাতিগত সংখ্যালঘু ভাষার মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্য যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাও তুলে ধরেন ফরহাদ।
বঙ্গবন্ধুর জীবন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একটি জাতীয় চেতনার জন্মদান এবং বাঙালি জাতির স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে নিরন্তর এগিয়ে যাওয়া, সে বিষয়গুলোও উঠে আসে প্রবন্ধে।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে বাংলাদেশ, ভারত, জর্ডান ও যুক্তরাজ্যের শিল্পীরা অংশ নেন।
এছাড়া বাংলাদেশের কবি মুজতবা আহমেদ মুরশেদ এবং জর্ডানের সারকাসিয়ান ভাষার কবি আহমদেহামজুক স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেয় জর্ডানে ভারতের দূতাবাস ও মেক্সিকোর দূতাবাস।
অনুষ্ঠানে জর্ডানের জাতীয় সংগীত কনজারভেটরি, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা এবং প্রবাসী বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে একুশের গান পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষে সকলের অংশগ্রহণে একটি আরবি গানও পরিবেশন করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলা ও আরবি ভাষায় পরিবেশন করা হয় একুশের গান- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’।