সিডনির বুকে একখণ্ড সবুজ বাংলা
মো. ইয়াকুব আলী, সিডনি থেকে, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 19 Feb 2021 11:37 AM BdST Updated: 22 Feb 2021 12:43 PM BdST
-
রামিন ফার্মের সবজির খেত
-
গাছের জন্য তৈরি করা হচ্ছে মাচা
-
কলের লাঙল দিয়ে চলছে হালচাষ
-
সবজি হাতে হারুন ভাই
-
প্রবাস জীবনে শিশুরা পাচ্ছে শেকড়ের ছোঁয়া
শৈশবের একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমি বেড়ে উঠেছিলাম এমন একটি গ্রামে যেখানে বিদ্যুৎ বা টেলিভিশন ছিলো না। তাই প্রত্যেকটা দিন ছিলো প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত।
প্রতিদিন সকালে উঠে বাড়ির বড়দের সঙ্গে ক্ষেতে চলে যেতাম, তারপর সারাদিন ক্ষেতে কাটিয়ে আবার বাড়িতে ফিরে আসতাম। মাটির প্রকার অনুযায়ী বিভিন্ন ক্ষেতে বিভিন্ন রকমের সবজি আবাদ করা হতো। কোনটাতে উচ্ছে বা পটল বা মরিচ, আবার কোনটাতে বাঙ্গি বা তরমুজ বা ধুন্দল। প্রত্যেকটা ক্ষেত ছিলো আলাদাভাবে সুন্দর।
বীজ থেকে ছোট গাছ, তারপর একসময় ফুল, সেখান থেকে ফল। বাংগির ক্ষেতে বাংগি পাকা শুরু করলে অনেক দূর থেকে সেই ঘ্রাণ পাওয়া যেতো। আর পটলের গাছ হতো পটলের শাখা থেকে। সেটা হাট থেকে কিনে নিয়ে এসে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করে মাটিতে লাগানো হতো। প্রত্যেকটা ব্যাপার ছিলো আমাদের সাদামাটা শৈশবে উত্তেজনার উপকরণ।

গাছের জন্য তৈরি করা হচ্ছে মাচা
কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতে এই ক্ষেত আমি কোথায় পাবো! আমি যে ক্ষেতের সন্ধান করছি এটা আমার পরিচিত সবাই জানতো। এমনই একজন পরিচিত মানুষ ‘রামিন ফার্মের’ সন্ধান দিলেন। গিন্নিকে বলার সঙ্গে সঙ্গে উনি রাজি হয়ে গেলেন। বললেন ভালোই হবে কিছু তরতাজা শাক সবজি কিনে আনা যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ। একদিন শনিবার সকালে তাহিয়া আর রায়ানকে নিয়ে ‘রামিন ফার্মে’ হাজির হলাম।

কলের লাঙল দিয়ে চলছে হালচাষ
শখের বসে ২০১৬ সালে উনি এবং দুজন বন্ধু মিলে সাড়ে চার একর জমির উপর ফার্মটা শুরু করেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন অস্ট্রেলিয়ার খুব কম মাটি চাষাবাদের উপযোগী, বেশিরভাগ মাটি পাথুরে। শুরু করার পর একটা বছর তখন পেরিয়ে গেছে, কিন্তু লাভের কোন প্রকার দেখা নেই। উল্টো ঘরের থেকে পয়সা খরচ করে ফার্মের দেখাশোনা করতে হয়, তাই সংগত কারণেই উনার সঙ্গের সবাই ফার্মের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন। কিন্তু হারুন ভাই লেগে থাকলেন, কারণ উনি ফার্মের সময়টা খুবই উপভোগ করেন। তাই ভাবির কষ্ট হলেও হারুন ভাইয়ের এই ব্যাপারটা মেনে নিলেন। অস্ট্রেলিয়াতে সাপ্তাহিক দিনগুলোতে মানুষ এত ব্যস্ত থাকে যে নিশ্বাস ফেলার সময় থাকে না, তাই সবাই সপ্তাহান্তের দিনগুলো পরিবার ও বাচ্চাদের সঙ্গে কাটায়, কিন্তু হারুন ভাই সেটা না করে সেই সাত সকালে ক্ষেতে এসে হাজির হোন।

সবজি হাতে হারুন ভাই
‘রামিন ফার্মের’ জায়গাটা আমাদের পরিবারের সবারই খুব পছন্দ হয়ে গেলো আর সেইসঙ্গে হারুন ভাইয়ের মিষ্টি ব্যবহার। সবমিলিয়ে ‘রামিন ফার্মে’ গেলে আমাদের মনটা ভালো হয়ে যায়। আমি ক্ষেতের প্রত্যেকটা প্লট দেখি আর নিজের শৈশবে হারিয়ে যায়। ‘রামিন ফার্মের’ মাঝ বরাবর একটা পায়ে হাঁটার রাস্তা, তার দুপাশে বিভিন্ন সবজির প্লট। সেখানে কাঁচামরিচ, লালশাক, পুঁইশাক, কচুশাক, উচ্ছে, বেগুন, ধুন্দল, চিচিংগা, মিষ্টি কুমড়া, টোম্যাটো, বাংগি আর আছে লাউয়ের মাচা।
লাউয়ের কথা আলাদাভাবে বলতে হবে, কারণ সিডনির প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে উনার ক্ষেতের লাউ এখন একটা অবশ্যম্ভাবী সবজি। দুপাশের ক্ষেত পার হয়ে একদম শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেলে সেখানে রয়েছে একটা খাল। সেই খালে সারাবছর কম বেশি পানি প্রবাহ থাকে। সেই খালে আমি সিডনিতে প্রথমবারের মতো ক্ষুদে পানা দেখতে পেলাম আর হোগলার বন। সেখান থেকে সেচের বেশিরভাগ পানির যোগান আসে বলে হারুন ভাই জানালেন।

প্রবাস জীবনে শিশুরা পাচ্ছে শেকড়ের ছোঁয়া
হারুন ভাই বলেন, আমার ছোট ছেলেটাও রায়ানের বয়সি। নাম রাকিন। সেও ঠিক একইরকম দুষ্টু।
অবশ্য উনার বড় ছেলে যার নাম এই ফার্মের নামকরণ সে কিছুটা শান্ত আর সবার ছোট মেয়ে আইজা বেশ শান্ত স্বভাবের। রামিন, রাকিন সুযোগ পেলেই হারুন ভাইয়ের সঙ্গে ক্ষেতে চলে এসে বাবার সঙ্গে কাজে লেগে পরে। তাহিয়াও খুশি হয়, কারণ সে আমার সঙ্গে মাঝেমধ্যে ক্ষেতে নেমে পরে লালশাক, পুঁইশাক তুলতে। আমি কেটে দিই আর ও সেটা ওর হাতে ধরা পলিথিনে রাখে। এছাড়া আমি গ্রামের ছেলে বলে ক্ষেতের মধ্যে আগাছা হিসেবে হওয়া আরও কিছু শাক আবিষ্কার করেছি- যেমন বৈথার শাক, নোনতা শাক ইত্যাদি।
‘রামিন ফার্ম’ নিয়ে আমাদের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। শনিবার এলে তাহিয়া জিজ্ঞেস করতে থাকে আমরা আজ ‘রামিন ফার্মে’ যাবো কিনা। কারণ ‘রামিন ফার্ম’ সাধারণত শনিবার সকালের সময়টা খোলা থাকে। আপনিও যদি তরতাজা সবজি একেবারে ক্ষেত থেকে সঠিক দামে পেতে চান তাহলে চলে যান লেপিংটনের ‘রামিন ফার্মে’। ‘রামিন ফার্মে’ গিয়ে আমি বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে পরিচত হয়েছি যারা আমাদের মা-বাবার বয়সী। উনারা এসে ক্ষেতের মধ্যে বসে পড়েন ধুলো ময়লার পরোয়া না করে। দৃশ্যটার মধ্যে এমন একটা অকৃত্রিমতা আছে যে আমি আর চোখ ফেরাতে পারি না।
তবে ‘রামিন ফার্মে’ গেলে ক্ষেতে ঢোকার আগে হারুন ভাইয়ের অনুমতি নিয়ে নেয়া ভালো। কারণ ক্ষেতের মধ্যে আমি বিছুটি গাছ দেখেছি যেটা আপনার গায়ে লাগলে ভয়ংকর চুলকানি শুরু হবে। আর হারুন ভাই বললেন, উনি একদিন একটা বড় সাপও দেখেছেন।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |
-
ইতালিতে দূতাবাস ও কনস্যুলেটে শহীদ দিবস পালন
-
হামট্রামিক পাবলিক লাইব্রেরিতে বাংলা কর্নার উদ্বোধন
-
ফিনল্যান্ডে প্রবাসীদের শহীদ দিবস পালন
-
চীনে শহীদ দিবসে প্রবাসী ছাত্রদের নানা আয়োজন
-
বাঙালির আত্মত্যাগে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সকল ভাষার মর্যাদা: জর্ডানের মন্ত্রী
-
যুক্তরাষ্ট্রে দূতাবাস, মিশন ও কন্স্যুলেটে শহীদ দিবস পালন
-
জাতিসংঘের সামনে একুশের ৩০তম বার্ষিকী
-
মাতৃভাষা দিবসে দারফুরে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
-
ইতালিতে দূতাবাস ও কনস্যুলেটে শহীদ দিবস পালন
-
হামট্রামিক পাবলিক লাইব্রেরিতে বাংলা কর্নার উদ্বোধন
-
ফিনল্যান্ডে প্রবাসীদের শহীদ দিবস পালন
-
চীনে শহীদ দিবসে প্রবাসী ছাত্রদের নানা আয়োজন
-
বাঙালির আত্মত্যাগে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সকল ভাষার মর্যাদা: জর্ডানের মন্ত্রী
-
যুক্তরাষ্ট্রে দূতাবাস, মিশন ও কন্স্যুলেটে শহীদ দিবস পালন
সর্বাধিক পঠিত
- ‘ওভারনাইট বান্দরবান পাঠিয়ে দেব’ বন্ধ চায় সংসদীয় কমিটি
- ‘বনবন্ধু’ সেজে মুজিববর্ষে বৃক্ষরোপণের নামে প্রতারণা
- মেসির জোড়া গোলে বার্সার জয়
- বিস্ফোরণে সড়ক ফেঁড়ে উঠে এল ঢাকনি
- আমার ‘ওয়াইফ’কে নিয়ে বাজে কথা বললে ‘অ্যাকশন’: নাসির
- ‘রুটের ভুল ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত’
- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বসে বসে মধু খেয়েছেন: হাই কোর্ট
- স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার, পরীক্ষা চলবে সাত কলেজে
- ‘সি’ ক্যাটাগরি দেওয়ায় পিসিবির চুক্তি ফিরিয়ে দিলেন হাফিজ
- ‘ইউনিভার্স বস’ এখন ‘অরিজিনাল প্রাইম মিনিস্টার’