আমিরাতে প্রবাসীদের ‘বিনামূল্যে’ টিকা দিচ্ছে সরকার

শুরু থেকে আমাদের মন স্থির করা ছিল যে আমরা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন যখনই নিই ‘সাইনোফার্ম’ এর ভ্যাকসিনই নেবো। কারণ মহামারীর উৎপত্তিস্থল চীনের ‘উহান ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস’ এর ভ্যাকসিন এটি।

জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2021, 03:19 PM
Updated : 28 Jan 2021, 11:16 AM

শনিবার ছুটির দিন আমি ও তামিল রুমমেট চন্দ্র পান্ডি ঠিক করলাম ভ্যাকসিন নেবো। অন্য রুমমেট আগেই দুই ডোজ শেষ করেছেন। মেডিক্লিনিক ‘আল নূর’ এর টোল ফ্রি নাম্বারে ফোন করলাম, ওরা দুঃখের সঙ্গে জানালো যে আমাদের প্রত্যাশিত লোকেশান খালিফা স্ট্রিটের হাসপাতালে ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের দীর্ঘ কিউ এর কারণে মধ্য এপ্রিলের আগে সিরিয়াল পাওয়া যাবে না।

ওদের পরামর্শে আমরা আরব আমিরাতের রাজধানী শহর আবুধাবির উপকণ্ঠে এয়ারপোর্ট রোডের ব্রাঞ্চে বিকেল সাড়ে চারটায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে ছুটলাম, ওপরে শাদা মেঘের ভেলা আর নিচে পড়ন্ত দুপুরের হিমেল ঠান্ডা প্রকৃতিকে সাক্ষী করে।

কিছুদিন আগে রাশিয়ান ‘স্পুৎনিক ভি’ ভ্যাকসিনের অনুমোদনের মধ্য দিয়ে এ অবধি তিনটি ভ্যাকসিন সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের অনুমোদন পেল। অপর দুটি হচ্ছে চীনের ‘সাইনোফার্ম’ আর যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফাইজার বায়োটেক’। তবে চীনা ফার্মাসিউটিক্যাল ফার্মের ‘সাইনোফার্ম’ ভ্যাকসিনের আমিরাতে দীর্ঘ উপস্থিতি এবং এর প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল আবুধাবিতে হওয়ায় অন্য দুটির চেয়ে এটির জনপ্রিয়তা এখানে বেশি।

মেডিক্লিনিক ‘আল নূর’ এয়ারপোর্ট রোড ব্রাঞ্চের নতুন ছিমছাম ভবনটিতে করা হয়েছে কোভিড ভ্যাকসিন সেন্টার। সিকিউরিটি চেক পেরিয়ে সুবিশাল লবির পর রিসেপশন। আমাদের চার পাতার ফরম আর দুই পাতার সম্মতিপত্র পূরণ করতে দেওয়া হলো। এরপর সিরিয়াল এলে গেলাম ভ্যাকসিন নিতে। ফিলিপিনো প্যারামেডিক আমাদের মজা করে বলল, আর য়্যু নার্ভাস!

আমি বললাম, আমরা তো সব জেনেশুনেই এসেছি। ফ্রন্টলাইনার এ স্বাস্থ্যকর্মীকে অভিনন্দন জানালাম ইতিহাসের অংশ হওয়ার জন্য। উত্তরে সেও আমাদের বললো, ভ্যাকসিন নিয়ে তোমরাও তো ইতিহাস হচ্ছো!

লেখক, স্বাস্থ্যকর্মী ও লেখকের বন্ধু চন্দ্র পান্ডি

আমিরাত সরকার বিনামূল্যে সার্বজনীন করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের আওতায় পর্যায়ক্রমে দেশের সব নাগরিক ও অভিবাসীদের আনতে যাচ্ছে। তবে এখনো তা স্বেচ্ছাভিত্তিক রয়েছে। ‘সাইনোফার্ম’ ভ্যাকসিনের লোকাল ট্রায়ালে তার কার্যকারিতা ৮৬% নিশ্চিত হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে। যদিও আমিরাতের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তীব্র করোনাভাইরাস আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনটি ব্যবহার করে শতভাগ সাফল্য পাওয়া গেছে জানিয়ে বলেছে এ ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও প্রায় শূন্য। যারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রাইভেট ও পাবলিক হাসপাতালে তাদেরও ইম্যুনিটি পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন গ্রহণের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

গত দেড় সপ্তাহে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বগামী থাকায় বিশেষ করে দুবাই ২৭ জানুয়ারি থেকে প্রাইভেট পার্টি, বিয়ে কিংবা লাইভ অনুষ্ঠানের ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ জারি করতে যাচ্ছে। দুবাইর হাসপাতালগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জীবন বাঁচাতে আবশ্যক নয় এমন অস্ত্রোপচার ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। আর এ পরিস্থিতিতে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ জোরদার করেছে তাদের প্রচারণা, বিলম্ব না করে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য।

সে ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদেরও ছিলো ভ্যাকসিনেশনে অংশ নেওয়া। প্রথম ডোজ নেওয়ার ২১ দিন পর ১৩ ফেব্রুয়ারি আমাদের নিতে হবে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ।

আমরা ফেরার সময় ক্যারাবিয়ান গালফের বুকে রক্তিম আভা ছড়িয়ে বিদায় নিচ্ছিল দিনের সূর্য, আরেকটি নতুন দিনের সম্ভাবনা নিয়ে আবার উদিত হবে বলে।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!