বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধীদের শাস্তি দাবি নিউ ইয়র্কে

জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতাকারিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসীদের বিভিন্ন সংগঠন। 

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2020, 07:36 AM
Updated : 23 Nov 2020, 12:57 PM

স্থানীয় সময় রোববার সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখা, বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়্যার ভেটারন্স’৭১ এবং যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা বিবৃতিতে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

বিবৃতিগুলোয় বলা হয়, “বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে এহেন ঔদ্ধত্য পোষণকারিদের প্রশ্রয় দেওয়ার অর্থ হবে ‘দুধ-কলা দিয়ে বিষধর সাপ পোষা’র সামিল।

সময় থাকতেই এদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দিতে হবে এবং এমন ঔদ্ধত্য প্রদর্শনের মদদদাতাদেরকেও চিহ্নিত করতে হবে। এনিয়ে কালক্ষেপণের অবকাশ নেই বলেও মন্তব্য করা হয়েছে বিবৃতিতে।

ভোটের রাজনীতির গ্যাড়াকলে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা একটি চক্রের মদদে প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে এমন বক্তব্য প্রদানে ইন্ধন পেয়েছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি।”

যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাফায়েত চৌধুরী বিবৃতিতে বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে মৌলবাদী শক্তি আজ  বাংলাদেশকে অস্বীকার করছে। বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। ভাস্কর্য আর মূর্তি এক জিনিস নয়। ভাস্কর্য ও মূর্তির পার্থক্য এই মৌলবাদী শক্তি বুঝেও  না বুঝার ভান করছে। এই পার্থক্য কাঠামোগত নয়, এটা চেতনাগত।

“চেতনার মাধ্যমে মূর্তির আরাধনা করা হয়। অন্যদিকে একটি ভাস্কর্য জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতীক। স্বাধীনতা অর্জনের প্রায় ৫০ বছর পরও আজকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দেখতে হয়। একাত্তরের পরাজিত শক্তির বীজ আমরা আজও দেখতে পাই। যেই দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন, চার হাজার ৬৮২ দিন কারাবরণ করেছেন, সেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতার ধৃষ্টতা দেখায়। আসুন অমরা এ মৌলবাদী অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াই। আমরা যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের পক্ষ থেকে এই ধর্মান্ধ ও জ্ঞানপাপী মৌলবাদীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি এবং এই ধরনের রাষ্ট্র বিরোধী আস্ফালন যাতে ভবিষ্যতে দেখাতে না পারে, তার যথাযত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।”

যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি রাশেদ আহমেদ এবং সেক্রেটারি রেজাউল বারি বলেছেন, “বিভিন্ন ইসলামী রাষ্ট্রও তাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণস্থানে ভাস্কর্য স্থাপন করেছে। যা তাদের স্থাপত্যকলা ও সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য অংশ।”

বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, “বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকাবস্থায়ই কুচক্রিরা তাদের দেশিবিদেশি প্রভূদের নীলনকশা বাস্তবায়নে এমন অপরাধমূলক মতামত ব্যক্ত করছে।”

যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি খন্দকার মনসুর এবং সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া বিবৃতিতে বলেন, “২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর এক রিটের শুনানিতে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের স্থানে মঞ্চ  নির্মাণ করে সেখানে তার ভাস্কর্য কেন স্থাপন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিল।”

“যেখানে দেশের সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছে বিভিন্ন স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য স্থাপনের, সেখানে কিছু মৌলবাদী সংগঠন তার বিরোধিতা করে আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। সরকার-উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও রাষ্ট্রের চার মূলনীতির বিরুদ্ধাচরণ দেশদ্রোহিতার সামিল। এটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।”

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ‘বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফেরা বাংলাদেশে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ বক্তব্য দানকারিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নেতারা।

বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়্যার ভেটারন্স’৭১-এর প্রেসিডেন্ট গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ এবং সেক্রেটারি মোহাম্মদ ফারুক হোসাইন বলেন, “বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনায় অন্যতম ভীত হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক চেতনা। একাত্তরে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে সেটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করেছে। তবে একাত্তরের সেই পরাজিত শক্ররা লেবাস পাল্টে আবারো মাঠে নেমেছে মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশকে ভিন্নপথে নিতে। অথচ ইরাক, ইরান, তুরস্কসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশেই ভাস্কর্য রয়েছে।”

“আমরা বাহাত্তরের সংবিধানের পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চাই। সে লক্ষ্যে জাতিরজনকের ভাস্কর্য-বিরোধী যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তার সাথে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করছি।”

এর আগে নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে সচেতন প্রবাসীদের ব্যানারে র‌্যালি করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বিরোধিতাকারীদের ‘ঔদ্ধত্য’ এর শাস্তির দাবি জানানো হয়।

কর্মসূচির সমন্বয়কারি তোফাজ্জল লিটনের সঞ্চালনায় মুজাহিদ আনসারী, নুরল আমিন বাবু, মাহফুজুল হক হায়দার, গোলাম কিবরিয়া অনু, শিবলী সাদিক, বিভাস মল্লিক প্রমুখ বক্তব্য দেন ওই র‌্যালিতে।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!