আমাদের বাস ভ্যাটিকান সিটির প্রবেশমুখে আসতেই নেমে পড়লাম চটপট। ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে ক্লাস সিক্সে থাকতে এ দেশটির নাম আমি শুনেছিলাম। সেই থেকে মনে মনে এ দেশটি ভ্রমণের সংকল্প আমাকে পেয়ে বসেছিল। যা হোক, ইতালিতে এসে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম নগররাষ্ট্র ভ্রমণের সুযোগটি হাতছাড়া করলাম না।
টিবার নদীর কূল ঘেঁষে ভ্যাটিকান সিটি অবস্থিত। এ নদীটি পুরো রোম নগরীর মাঝখান দিয়ে চলে গেছে। আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে ক্ষুদ্র স্বাধীন রাষ্ট্র ভ্যাটিকান সিটি। এ দেশটি আসলে খ্রিস্টান ক্যাথলিকদের প্রধান তীর্থস্থান। মাত্র ৪৯ হেক্টর আয়তনের এ ক্ষুদ্র দেশটিতে জনসংখ্যা কমবেশি ৮২৫ এর মতো।
পোপ শাসিত এ দেশটির প্রধান হলেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি জন্মসূত্রে আর্জেন্টাইন। গত ২০১৩ সাল থেকে তিনি খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা ২৬৬তম পোপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৯২৯ সালে ইতালির সরকারের সঙ্গে লাতেরান চুক্তির আওতায় এ পোপীয় রাষ্ট্রের সৃষ্টি।
কোন পোপ মারা গেলে অথবা অবসরে চলে গেলে এ বিল্ডিং এর ব্যালকনি থেকেই নতুন নির্বাচিত পোপ দেখা দেন। এ দৃশ্যটি দেখার জন্য সারা পৃথিবীর মানুষ টেলিভিশনে চোখ রাখেন। আর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি হিসেবে ক্যাথলিক ধর্মীয় নেতারা এদেশে এসে জড়ো হন। ১৬২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিল্ডিংটি বিশ্ব ঐতিহ্যের একটি। প্রায় ২০ হাজার মানুষের সমাগম হতে পারে এ বিল্ডিং-এ। এ বিল্ডিং-এর সামনে যে বিশাল মাঠ, তাকে বলা হয় ‘সেন্ট পিটার্স স্কয়ার’।
আমাদের পেছনে কিছু ধর্মীয় যাজককে দেখলাম। তারা দর্শনার্থীদের আশীর্বাদ করে দিচ্ছেন। দেশটি খুব ক্ষুদ্র হতে পারে, কিন্তু একটি স্বাধীন দেশে যা যা থাকা দরকার প্রায় সবকিছুই এদেশে আছে। আছে নিজস্ব পতাকা, মানচিত্র, নিজস্ব টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও। পৃথিবীর প্রায় ৪০টি ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় তাদের রেডিও থেকে ধর্মীয় বাণী প্রচার করা হয়। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্যাথলিক গির্জাগুলো এ পোপীয় রাষ্ট্র থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার একপাশে দেখলাম দুজন সুইচ গার্ডের সদস্যকে। লাল, হলুদ ও নীল এ তিনটি বর্ণ দিয়ে তৈরি একটি অদ্ভুত ইউনিফর্ম পরা ২৫-৩০ বছরের যুবক। একটি বিষয় আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি, ভ্যাটিকান সিটির যারা নিরাপত্তা দেয় তাদেরকে বলা হয় ‘সুইচ গার্ড’। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্র সেনাবাহিনীর দল এটি, মাত্র ১৩৫ জন সদস্য সংখ্যা।
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো ‘সুইচ গার্ড’ এর সব সদস্য সুইজারল্যান্ডে জন্ম নেওয়া যুবক। প্রায় আধ ঘণ্টা পর খেয়াল করলাম, সুইচ গার্ডের কয়েকজন সদস্য একজন দলনেতার নেতৃত্বে মার্চপাস্ট করে এগিয়ে আসছেন গার্ড রুমের পাশ থেকে, আমি ছবি তুলতে চাইছিলাম আমার বন্ধু বারণ করল, অনুমতি ছাড়া ওদের ছবি তোলা ঠিক হবে না।
হাঁটতে হাঁটতে গলা শুকিয়ে গেল। একটু দূরে দেখলাম বিভিন্ন রঙের ফুল দিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করছে। বিক্রেতাকে একটু বয়সি মনে হল। মনে হয় অনেকদিন ধরে এখানে সে আইসক্রিম বিক্রি করছে। ৬ ইউরো দিয়ে দুটি আইসক্রিম হাতে নিয়ে দুই বন্ধু ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলাম তাদের বিভিন্ন স্থাপনা।
লেখক পরিচিতি: ডেপুটি সেক্রেটারি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |