ভ্রমণ কাহিনি: সুইডেনের সাইকেল

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর জনগণ সমাজ, রাষ্ট্র ও পরিবেশ নিয়ে খুব সচেতন। ওদের সমাজের রীতিনীতি ও পরিবেশ ভাবনা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।

মোহাম্মদ আজিজুল মওলা, সুইডেন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2020, 08:22 AM
Updated : 24 Sept 2020, 08:22 AM

পরিবেশবান্ধব জনগোষ্ঠী পুরো দেশটিকে সবুজে আচ্ছাদিত করেছে। এখানকার পরিবেশ রক্ষার আইনও প্রশংসনীয় পর্যায়ের। সুইডেনে আপনি হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল যে কোন গৃহপালিত পশু-পাখি পালন করতে পারবেন ঠিকই, কিন্তু জবাই করার কোন অনুমতি নেই। তবে মুসলমান কমিউনিটি যাতে হালাল মাংস খেতে পারে সে ব্যবস্থা তারা করে রেখেছে।

এদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা দেখলে আপনি অবাক না হয়ে পারবেন না। এ দেশের বেশিরভাগ মানুষদের প্রাক্টিক্যালি তেমন কোন ধর্ম-কর্ম করতে দেখলাম না। তবে কেউ যদি ধর্ম পালনের কথা বলে সেক্ষেত্রে সবাই একে অপরকে সহযোগিতা করতে দেখলাম। আপনার ইচ্ছে হয়েছে আপনি বাসায় গান-বাজনা করতে পারেন অথবা ধর্মীয় কোন ওয়াজ-নসিয়ত করতে পারেন, শুনতে পারেন পবিত্র কোরআনের তেলাওয়াত বা অন্য কোনো ধর্মীয় আলোচনা।

তবে সেটির আওয়াজ আপনার ঘরের সীমানার বাইরে যেতে পারবে না। যদি আপনার প্রতিবেশী মনে করে যে আপনার বাসার ব্যবহৃত লাউড স্পিকার তার বাসার কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে তিনি ১১২ নম্বরে ডায়াল করে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করলে আপনি মামলার মুখোমুখি হবেন। গুণতে হতে পারে বড় অঙ্কের জরিমানা। 

সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের এক কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ, বর্তমানে গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে কাজ করছেন। তিনি সারাবিশ্বে গণসচেতনতা তৈরি করছেন, কিভাবে সারা পৃথিবীকে সবুজ শ্যামলে সাজানো যায়, কার্বন নিঃসরণ কমানো যায়, কিভাবে মানব অধিকার রক্ষিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। পরিবেশ রক্ষার এ আন্দোলন সুইডেনে শুরু হলেও এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী, ইউরোপের সীমানা পেরিয়ে সর্বত্র।

‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’ ব্যানারে ১৩৯টি দেশের স্কুল-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অংশ নিয়েছিলেন নানা শ্রেণি-পেশার লক্ষ লক্ষ মানুষ। বৃহৎ এ আন্দোলন প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশেও। গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে শত শত শিশু-কিশোর জড়ো হয়েছিল প্ল্যাকার্ড হাতে যাতে লেখা ‘ক্লাইমেট স্ট্রাইক ইন বাংলাদেশ’।

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে সাইকেলের ব্যবহার অনেক বেশি। মালমো সেন্ট্রাল স্টেশন, সুইডেন-স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন। অনেক পুরাতন ও গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশনটি সঙ্গে লাগোয়া কয়েকতলা বেষ্টিত একটি পার্কিং স্পেসে দেশটির জনগণ পরিবেশের জন্য  কতটা সতেচন সেটা স্বচক্ষে দেখবেন। পুরো দুই-তিন তলা এলাকাজুড়ে শুধু সাইকেলের পার্কিং এরিয়া এটি। অবাক হবেন, এখানে সাইকেল চালানোর জন্য আলাদা রাস্তা আছে, পুরো শহর জুড়ে। অথচ আমাদের দেশে মানুষ চলাচলের রাস্তাগুলো পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা বাড়াতে দখল করে রেখেছে। এতে করে জনদুর্ভোগ বাড়ছে, সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ বাড়ছে।

এইতো কিছুদিন আগেও আমাদের দেশের স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন করেছিল। আন্দোলনের পর আমাদের সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে অনেকগুলো নীতিমালা ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে।

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে পরিবেশ রক্ষায় সাইকেলের জন্য আলাদা রাস্তার প্রচলন হয়েছে অনেক আগেই। এখানকার প্রায় সব পরিবারেই দুই-তিনটা করে সাইকেল রয়েছে। তারা এই বাহন দিয়ে স্কুল-কলেজসহ কর্মস্থলে যাতায়াত করে যাতে করে শারীরিক ফিটনেস ঠিক থাকে, আর পরিবেশের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণও কম হবে। আমার ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষককে দেখলাম ইউনিভার্সিটিতে সাইকেল নিয়ে আসতে।

প্রথম প্রথম বিষয়টি আমাকে একটু অবাক করেছে। মনে মনে চিন্তা করতেছি আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ওদের চেয়ে অনেক ভাল জীবন-যাপন করে। পরে দেখলাম ওরা সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন সাইকেলে কর্মস্থলে আসেন আর বাকি দুই দিন গাড়ি নিয়ে আসেন। নিয়মিত সাইকেল চালালে শারীর ঠিক থাকে এবং পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনেও শামিল হওয়া যায়।

আমি নিজেও সাইকেল চালাতে শুরু করি তাদের দেখাদেখি। প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগত এই শীতের দেশে সাইকেল কিভাবে চালাবো এই ভেবে। পরবর্তীতে অভ্যস্ত হয়ে যাই। দেশে আসার পরও আমি সাইকেল চালানো শুরু করি নিয়মিত। আসলে ওদের কাছ থেকে শেখার আছে অনেক কিছুই।

লেখক পরিচিতি: ডেপুটি সেক্রেটারি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!