‘শিক্ষার্থীদের চাকরিতে ঢোকানোতে গুরুত্ব দেওয়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের অন্তরায়’

গবেষণার বদলে স্নাতক ডিগ্রি এবং শিক্ষার্থীদের চাকরি জীবনে প্রবেশ করানোতে বেশি জোর দেওয়াকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় বলে মনে করছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। 

যুক্তরাজ্য প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 August 2020, 04:24 PM
Updated : 9 August 2020, 04:24 PM

শনিবার লন্ডন থেকে সম্প্রচারিত ওয়েবনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত  'শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন ও সংকট' শীর্ষক আলোচনায় অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টার্মিনাল ডিগ্রি দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশি মনোযোগী। গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি দেওয়া ও শিক্ষার্থীদের চাকরি জীবনে প্রবেশ করানোতে বেশী মনযোগ দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গবেষণা নির্ভর শিক্ষা না হওয়াটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়।”

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধুর মতো জাতির পিতা তৈরি করলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নোবেল লরিয়েট তৈরি করতে পারছে না। আধুনিক যন্ত্রপাতির স্বল্পতা রয়েছে, গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্ধ নেই। পিএইচডির শিক্ষার্থী খুব কম, আন্ডার গ্রাজুয়েট লেভেলের শিক্ষার্থী বেশি। বিদেশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষক নেই। গবেষণামনস্ক অবস্থা সৃষ্টি করার জন্য উৎসাহ নেই।”

ওয়েবনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের আয়োজকদের এ ধরণের একটি সমসাময়িক ওয়েবনার আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেকেই পাশ্চাত্যের অক্সফোর্ডের সাথে তুলনা করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ২৬ শতাংশ রিসার্চ গ্রান্ট পেয়ে থাকে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়িত্বশাসিত হলেও বাজেটে গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তেমন বরাদ্দ নেই।”

তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ৭ টি কলেজ রয়েছে সেই সাথে সান্ধ্যকালীন কোর্স পরিচালনা করার কারণেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি অনেক বড় হয়েছে। সমাজ বিজ্ঞান অনুষদে ৩০০ শিক্ষকের বিপরীতে ৬ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে যা রীতিমতো একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সমান।”

“অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যেখানে ১১ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছে সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ২০ জনের জন্য রয়েছে একজন শিক্ষক। এতো কম সংখ্যক শিক্ষক ও শিক্ষা সরঞ্জামাদি দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে মান বজায় রাখা দুরূহ।”

তবে এরমধ্যে সাদেকা হালিম ইতিবাচক দিকের কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের ৩০ শতাংশের উপরেই নারী। এটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নারীর ক্ষমতায়নের একটি সুফল বলেই মনে করি।”

তিনি শিক্ষার্থীদের প্রায় সকলেই মাস্টার্স ডিগ্রিও নিচ্ছেন উল্লেখ করে বলেন, “এর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা ভাববার সময় এসেছে।”

উপ উপাচার্য মাকসুদ কামালের মতে, “বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র সৃষ্টি করে দিতে পারাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের বড় অবদান।”

“মায়ের ভাষায় কথা বলার সুযোগ করে দেওয়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান।”

“বুদ্ধিভিত্তিক উপাদানের জোগান দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে যে ভূমিকা রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তার নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।  সেই অর্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতিরজনক তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। পৃথিবীর দ্বিতীয় কোনও বিশ্ববিদ্যালয় পাওয়া যাবে না যে বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, আর সেই রাষ্ট্রটি আবার অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।”

সামনের দিনগুলোতে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাবও বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান অধ্যাপক মাকসুদ কামাল।

যুক্তরাজ্যের লিংকনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার ও কমনওয়েলথ অ্যাডভাইজার কমিশনের পরামর্শক মাহফুজুর রহমান বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জনগুলো ঠিক মতো উপস্থাপন করতে না পারার অভাব রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অর্জন রয়েছে, শিক্ষকদের যোগ্যতা রয়েছে কিন্তু পাবলিক রিলেশন টিম খুবই দুর্বল।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।

ডকুমেন্টেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে গেছে বিষয়টিকে স্বীকার করে শতবর্ষকে সামনে রেখে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান প্রফেসর মাকসুদ কামাল।

তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আগামী বছর লন্ডনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন তুলে ধরা হবে। লন্ডনের  অ্যালামনাইদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপনে একসাথে কাজ করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।”

আলোচনায় টাইমস হায়ার এডুকেশন এর র‌্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নেওয়ায় যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অ্যালামনাইদের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন অধ্যাপক কামাল।

ফেইসবুক ও ইউটিউবে সরাসরি সম্প্রচারিত এক ঘণ্টার ওই আলোচনাটির সঞ্চালনা করেন একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকের ম্যানেজমেন্টের সদস্য তানভীর আহমেদ।

আলোচনায় প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকের ম্যানেজমেন্টের সদস্য থার্ড সেক্টর কনসালটেন্ট বিধান গোস্বামী, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সোনালী ব্যাংক ইউকে-র সাবেক ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ আমীরুল ইসলাম চৌধুরী, আইনজীবী অজয় রায় রতন, আইনজীবী চৌধুরী হাফিজুর রহমান, আইনজীবী  কাজী আশিকুর রহমান, আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম, আইনজীবী ইউসূফ ইকবাল, আইনজীবী ঝুমুর দত্ত, রওশন আরা জাহান পলি, সংবাদ পাঠিকা হিমিকা আযাদ, রেহানা ফেরদৌস মনি ও সঙ্গীত শিল্পী শুভ্রা মুস্তাফা ।

এর আগে জুম অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন  প্রতিষ্ঠার স্মৃতিচারণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই এসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি রকিব উদ্দীন আহমেদ। ঢাকা থেকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই এসোসিয়েশন বাংলাদেশের সিনিয়র সহ সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার, বাংলাদেশ এনার্জি কমিশনের সদস্য সেলিম মাহমুদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী মমতাজ উদ্দীন আহমেদ।

এছাড়াও করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ সময়ে যুক্তরাজ্যে অ্যালামনাইদের কার্যক্রম ও ক্লাবের ভবিষ্যত কর্মপরিধি নিয়ে আলোচনায় যুক্ত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ম্যানেজমেন্টের অন্যতম সদস্য বাংলাদেশ ল অ্যাসোসিয়েশন ইউকের সাবেক সভাপতি আইনজীবী শাহ আলম সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও যুক্তরাজ্যের লিংকন্স ইউনিভার্সিটির রিসার্চ স্কলার শাহ রিদওয়ান চৌধুরী, এডুকেশন কনসালট্যান্ট গোলাম মর্তুজা, সৈয়দা নাসরিন ভূঁইয়া, সুপ্রতীম দেব, আইনজীবী মামুন আল ফিরোজী, রথীন্দ্র গোস্বামী, শায়লা শিমলা, মনির সারোয়ার, আইনজীবী কাওসার আলম হীরা, সোহেল আহমেদ, আসাদ কিবরিয়া তানিন ও মনির সরকার সহ যুক্তরাজ্যে বসবাসরত পঞ্চাশেরও বেশি অ্যালামনাই।

ওয়েবনারটি শিল্পী সারোয়ার-ই আলমের আধুনিক গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি হয়।

সঙ্গীতানুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে ইউকের সদস্য সংবাদ উপস্থাপক কিশোয়ার মুনিয়া।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!