আপনার চোখ পরবেই সেই অপরূপ দৃশ্যে। আমরা হয়তোবা অনেকেই জানি না যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কিছু কিছু জায়গায় শরৎকালে গাছের পাতা পড়ে যাওয়ার কারণে ওই শহরকে ‘ফল’ (পতন) নামে ডাকা হয়। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের একটি এলাকা যার নাম ‘অরেঞ্জ’। সেখানে শরৎকালে পুরো এলাকাজুড়ে সব জায়গায় আকর্ষণীয় এ রং-বেরঙের গাছের পাতা রাস্তা-ঘাট বন-জঙ্গলকে রঙিন করে দেয়। যার কারণে এ অরেঞ্জ সিটি কাউন্সিলকে বলা হয় ‘অস্ট্রেলিয়া’স কালার সিটি’ বা অস্ট্রেলিয়ার রঙিন শহর। শরতে এ শহর পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক মানুষ ভিড় করে শরৎকালের এই অপরূপ সৌন্দর্য নিজ চোখে উপভোগ করার জন্য।
শরতে শুধু একটি বা দুইটি প্রজাতির গাছই শুধু রঙিন হয় তা কিন্তু নয়। প্রায় সব গাছ প্রতিযোগিতা করে যে যার মতো করে রং ছড়িয়ে থাকে। রঙিন গাছগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্লারেট অ্যাশ, চাইনিজ পিস্তাচিও, টুপেলো, লিকুইডাম্বার, চাইনিজ ট্যালাউ ট্রি, জিংগো, স্পিন্ডিল বুশ, হাউথ্রোন, জাপানিজ ম্যাপল, মাঞ্চুরিয়ান পিয়ার, গোল্ডেন অ্যাশ ও ফ্লাওয়ারিং চেরি। এছাড়া আরও অনেক প্রজাতির গাছ আছে যারা প্রকৃতির নিয়মে নিজেদের নিজস্ব রং মেলে ধরে।
গাছগুলো শরৎকালের প্রতিটি আলাদা মৌসুমে সৌন্দর্যের পরিমাণ এতো নিখুঁত রাখে যে তা কেবল অত্যাশ্চর্য বলা চলে। প্রতি বছর নতুন করে আরও বেশি সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়ে আসে। শরৎকালে প্রকৃতি সাজে রঙের এমন একটি ক্যানভাসে যা কোনও শিল্পী কল্পনাও করতে পারেবে না। রঙগুলি সত্যিই এত প্রাণবন্ত এবং স্পষ্ট হয় যে বিশ্বের নামকরা শিল্পীদের পক্ষেও তার রংয়ের ক্যানভাসে এই রং ফুটিয়ে তোলা প্রায় অসম্ভব।
প্রয়োজনীয় সূর্যের আলো এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রার পরিবেশের সংস্পর্শে গাছ সাধারণত পাতা সবুজ থাকা অবস্থায় ফেলে দেয়। কিন্তু শীতপ্রধান দেশে শরতে গাছের নিচে পাতায় রঙের বাহার লেগে থাকে। আমরা কি কখনও লাল, কমলা, হলুদ এবং বাদামি রংয়ের পাতায় ঢাকা এরকম কোনও কোন রাস্তায় হেঁটেছি? এটা সত্যিই মজার এবং মন ভালো হয়ে যাওয়ার মতো একটি মধুর অনুভূতি যা আসলে লিখে বোঝানো যাবে না।
ক্লোরোফিলের ক্ষয় হওয়ার ফলে শরতের গাছগুলিতে হলুদ বর্ণ দেখা যায়। গাছ তার পাতার সবুজ রঙের ক্যারোটিনয়েডগুলো (উদ্ভিদে বিদ্যমান পিঙ্গল পদার্থ) সহজেই খালি করতে পারে। তবে পাতার লাল রঙ অ্যান্থোসায়ানিন নামক রঙ্গক থেকে আসে, যা শরৎকালের শুরুতে গাছকে নিজ থেকে নতুন করে তৈরি করতে হয়। কারণ পাতা লাল হয়ে যাওয়ার ফলে তা আরও বেশি সময় ধরে গাছে থাকতে পারে এবং গাছও চেষ্টা করে সেখান থেকে যতটা বেশি পরিমাণে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করে রাখতে।
শীতকালে প্রচুর ঠান্ডা ও সূর্যের আলো কম থাকায় গাছকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের জন্য কঠোর প্রতিকূল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। তাই শরতে পাতা জ্বলন্ত-লাল হয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ বলে যে লাল পাতা পাখিদের আকর্ষণ করতে সহায়তা করে যাতে গাছের ফলগুলি চারপাশে ছড়িয়ে দিতে পারে, ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন চারা জন্মানোর জন্য বা শীতের হাত থেকে গাছকে রক্ষা করে পাতার তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
লেখক পরিচিতি: প্রবাসী বাংলাদেশি, সেন্টাল কোস্ট, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |