কুয়েতে জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে বাংলাদেশিরা

কুয়েতে করোনাভাইরাস প্রকোপের পরিস্থিতি উন্নতির দিকে থাকলেও জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

আ হ জুবেদ, কুয়েত থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 July 2020, 05:03 AM
Updated : 22 July 2020, 05:03 AM

উপসাগরীয় এ দেশটিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধাপে ধাপে জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো চালু হচ্ছে, খুলছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও খুলেছে, তবে স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা অনেকটাই চিন্তাগ্রস্ত। প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলো লকডাউনমুক্ত হওয়াতে বাংলাদেশিদের অনেকেই কাজে যোগ দিয়েছেন।

তবে মহামারী পরিস্থিতিতে এরই মধ্যে অনেকে কাজ হারিয়েছেন। অর্থাভাবে স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা ফের ব্যবসা চালু করতে প্রায় অক্ষম। পুঁজি হারাতে বসেছেন শত শত ক্ষুদ্র-মাঝারি প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।

কোভিড-১৯ এর কারণে কুয়েতে প্রায় দুই লাখেরও বেশি প্রবাসী কর্মহীন হয়ে পড়বেন, দেশটির স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যম এমন খবর ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা মহামারী পরিস্থিতির আগে ছুটিতে গিয়ে যাদের আকামার মেয়াদ শেষ হয়েছে তাদের ফের কুয়েত প্রবেশ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এদিকে জনসংখ্যার কাঠামোর বৈষম্য নিরসনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত। দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের কম অভিবাসী হওয়া উচিত, যা এখন মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ স্থানীয় নাগরিক এবং ৭০ শতাংশ অভিবাসী অনুপাতে রয়েছে, এমন অভিমত দেশটির প্রধানমন্ত্রীর।

কুয়েতের জনসংখ্যা প্রায় ৪৮ লাখ (৪.৮ মিলিয়ন), যার মধ্যে সাড়ে ১৪ লাখ স্থানীয় নাগরিক এবং প্রায় ৩৪ লাখ অভিবাসী। প্রধানমন্ত্রীর মতে, আদর্শ জনসংখ্যার কাঠামো কুয়েতি ৭০ শতাংশ এবং অভিবাসী ৩০ শতাংশ হওয়া উচিত।

সম্প্রতি আরেকটি বিষয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুয়েত সরকার তার দেশ থেকে অভিবাসীদের সংখ্যা কমিয়ে আনতে একটি প্রবাসী কোটা বিল প্রণয়ন করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

জানা গেছে, ওই খসড়া আইনে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য মাত্র ৩% কোটা প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে কুয়েতে বিভিন্ন পেশায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। একদিকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা চাকরি ও স্বল্প পুঁজির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারানোর শঙ্কায় আছেন, অন্যদিকে কুয়েতের মন্ত্রীপরিষদ প্রবাসী কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। এ অবস্থায় কুয়েতে থাকা প্রবাসী চাকরিজীবি ও ব্যবসায়ীরা তাদের আর্থিক অসচ্ছলতার কথা তুলে ধরে সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করছেন।

প্রবাসী কমানোর খসড়া আইন প্রণয়ন প্রসঙ্গে কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, “ওই খসড়াতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে তিন শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনটি বাস্তবায়ন হওয়ার আগে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা চাচ্ছি খসড়ায় উল্লেখিত শতাংশ আরো বাড়াতে। এছাড়া একাধিক কোম্পানিতে প্রবাসীদের বকেয়া বেতন পাইয়ে দিতে দূতাবাস আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করছে।”

দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা আরও জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আগে যেসব প্রবাসী বাংলাদেশে গিয়েছিলেন, বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু হওয়ার পর এক পর্যায়ে তারা ফের কুয়েতে আসতে পারবেন। তবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির স্পন্সর (কফিল) প্রতিনিধির (মন্দুব) সঙ্গে আকামা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

তিনি যোগ করেন, প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবামূলক কার্যক্রম আরো বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে পাসপোর্ট ডেলিভারি ও নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া সহজতর করা হয়েছে। বিনামূল্যে এক বছর মেয়াদের পাসপোর্ট নবায়ন করে দেওয়া হচ্ছে।

আনিসুজ্জামান বলেন, “নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে গিয়েও কনস্যুলার সেবা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি আমি নিজেও বাড়তি কিছু সময় দিয়ে প্রবাসীদের বিভিন্ন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে যাচ্ছি।”

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!