সিঙ্গাপুরভিত্তিক স্ট্রেইটস টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজু সরকার নামে ওই বাংলাদেশি শুক্রবার টান টক সেং হাসপাতাল (টিটিএসএইচ) থেকে ছাড়া পেয়েছেন। এর মধ্যে ২৪ কেজি ওজন হারিয়েছেন তিনি।
ফেব্রুয়ারিতে অসুস্থ হওয়ার সময় বাংলাদেশে তার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, গত ৩০ মার্চ তাদের ছেলে হয়েছে। এই পরিবারের প্রতি টানই তাকে ‘মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসার শক্তি যুগিয়েছে’।
৩৯ বছর বয়সী রাজু সরকার প্রায় পাঁচ মাস হাসপাতালে কাটিয়েছেন, এর অর্ধেক সময়ই তার পার হয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র- আইসিইউতে।
সিঙ্গাপুরে প্রথম যে কয়েকজন বিদেশি কর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের একজন রাজু সরকার। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। মে মাসের মাঝামাঝিতে তাকে টিটিএসএইচ পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।
টিটিএসএইচের রেসপিরেটোরি অ্যান্ড ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. বেঞ্জামিন হো বলেন, এত দীর্ঘ সময় আইসিইউতে থাকার পর তার নাটকীয়ভাবে সেরে ওঠায় বিস্মিত চিকিৎসকরাও।
তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় রাজু সরকার খুবই অসুস্থ ছিলেন এবং দুই বা তিন বার ‘মৃত্যুর খুব কাছাকাছি গিয়েছিলেন’।
“তার রক্তচাপ খুব কমে গিয়েছিল এবং তিনি অক্সিজেন নিতে পারছিলেনও খুব কম। আমরা ভেবেছিলাম, তাকে অনেক দিন অক্সিজেন দেওয়া লাগবে এবং সিঙ্গাপুরে প্রথম দিকের মৃত্যুর একটি হবে বলে খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম,” বলেন ডা. হো, যিনি সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজেস-এনসিআইডির আইসিইউ’রও পরিচালক।
গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরেও সেরে ওঠার বিষয়ে রাজু সরকারের মনোবল দৃঢ় ছিল। পুনর্বাসন কেন্দ্রে শরীরে শক্তি ফিরে পাওয়া ও কার্ডিওভাস্কুলার ফিটনেসের জন্য ফিজিওথেরাপি নিতে হয় তাকে। নিজের যত্নের জন্য অকুপেশনাল থেরাপিস্টেরও শরণ নিতে হয়। পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঁচ সপ্তাহে ১০ কেজি ওজন বেড়েছে তার।
ফিজিওথেরাপিস্ট সিমন লাউ জানান, এখানে আসার প্রথম দিকে হাঁটা-চলা করতে অন্য কারও সহায়তা নিতে হত তার।
“তার অবস্থা খুবই খারাপ হয়েছিল। আইসিইউতে দীর্ঘ দিন থাকার কারণে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তবে সুস্থ হয়ে উঠতে তিনি খবুই আন্তরিক ছিলেন। ব্যায়ামে খুব আগ্রহী ছিলেন, নিজের থেকে সেরে ওঠার চেষ্টা ছিল তার এবং এমনকি ওয়ার্ডে বিশ্রামে থাকার সময় নিজেই ব্যায়ামগুলো করতেন।”
সিনিয়র স্টাফ নার্স কারমেইন লো বলেন, সুস্থ হয়ে উঠতে তার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিল তার পরিবার।
আইসিইউ থেকে ছাড়া পাওয়ার এক সপ্তাহ পর মধ্য এপ্রিলে প্রথম ভিডিও কলে ছেলেকে দেখেন রাজু সরকার।
নার্সরা জানান, প্রায়ই ফোনে তিনি পরিবারের ছবি দেখতেন এবং ঘন ঘন বাড়িতে ফোন করতেন।
“আমি আমার ছেলে ও স্ত্রীকে দেখতে চাই। তিন বা চার মাসের মধ্যে বাড়ি যাওয়ার আশা করছি,” স্ট্রেইটস টাইমসকে বলেন রাজু।
এখনও সেরে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন তিনি। করোনাভাইরাস অনেকভাবে তার শরীরে প্রভাব ফেলেছে। তার শরীরে লবণ ও ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে গেছে, হৃদযন্ত্রও দুর্বল হয়ে পড়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে তার ফুসফুস, থাইরয়েড ও কিডনি জটিলতাও দেখা দিয়েছে। কিডনি সচল রাখতে সাময়িকভাবে তাকে ডায়ালাইসিস করতে হবে।
তার মস্তিষ্কেও পরিবর্তন দেখা দিয়েছে, দীর্ঘ সময় আইসিইউতে থাকলে যেটা হয়ে থাকে।
দুই মাসের জন্য হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন রাজু সরকার এবং এই সময় পার হলে আবার তাকে ফলো-আপের জন্য আসতে হবে।
স্ট্রেইটস টাইমস বলছে, যখন তিনি কাজের জন্য পুরোপুরি ফিট হবেন তখন তার নিয়োগকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে সব কিছু ঠিকঠাক করা হবে।
দৃঢ় মনোবল নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন রাজু। স্ট্রেইটস টাইমসকে তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর প্রথমেই খাশির মাংস খেতে চেয়েছিলেন।
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |