কানাডা অভিবাসনের টুকিটাকি- ০১: ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব

কানাডায় ইমিগ্রেশন বা অভিবাসনের ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। আরো বহুকাল এ ধারা চলতে থাকবে। এ সুযোগের সুবিধা নিতে আপনাকে ইংরেজি বা ফ্রেঞ্চ অথবা দুই ভাষাতেই দক্ষ হতে হবে। এ দুইটি কানাডার রাষ্ট্রীয় ভাষা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কেবল ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব নিয়ে আলোকপাত করতে আমার এ সীমিত প্রয়াস। এ আলোচনা কারো কিছুটা কাজে লাগলে ভালো লাগবে।

এম এল গনি, কানাডা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2020, 03:42 PM
Updated : 13 June 2020, 04:50 PM

কানাডার সমাজ ব্যবস্থার সাথে মিশে যেতে এবং পড়াশোনা বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা আপনাকে বড়ো ধরনের সাহায্য করবে। তাছাড়া, ইংরেজিতে দক্ষতা না থাকলে আপনি কানাডার পিআর (পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট) বা সিটিজেনও হতে পারবেন না। সাধারণভাবে, কানাডায় পিআর হবার পর সেদেশে কয়েক বছর বসবাস করলে সিটিজেন বা নাগরিক হওয়ার আবেদন করা যায়। এক্ষেত্রেও ইংরেজি জানা বাধ্যতামূলক, যদি না আপনি বয়োবৃদ্ধ কেউ হয়ে থাকেন।

বাংলাদেশের আবেদনকারীরা ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রমাণে সচরাচর আইইএলটিএস পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। আইইএলটিএস আবার দুধরনের। জেনারেল ট্রেইনিং এবং একাডেমিক। ইমিগ্রেশনের আবেদন করতে জেনারেল ট্রেইনিং পরীক্ষা দিয়ে হয়, একাডেমিক নয়। আর, একাডেমিক লাগে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। একাডেমিক পরীক্ষা জেনারেল ট্রেইনিংয়ের চেয়ে কিছুটা কঠিন। তাই, কেউ কেউ মনে করেন একাডেমিক পরীক্ষা দিলে সম্ভবত ইমিগ্রেশন এবং পড়াশোনা দুই কাজই হবে। আসলে তা নয়। ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট (আরসিআইসি) হিসেবে কাজ করতে গিয়ে এমন অনেক ঘটনা আমি দেখেছি। আপনার উদ্দেশ্য যদি ইমিগ্রেশন এবং পড়ালেখা দুটোই হয়, তবে আপনার দুই প্রকারের আইইএলটিএস পরীক্ষাই দেওয়া উচিত।

আইইএলটিএস স্কোরের সামান্য তারতম্য কী করে সিআরএস স্কোরে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে তেমন একটি বাস্তব উদাহরণ আপনাদের দিতে চাই। বাস্তব উদাহরণ বলছি এ কারণে, এটি আমারই এক ইমিগ্রেশন ক্লায়েন্টের প্রোফাইল হতে নেওয়া। গোপনীয়তা রক্ষাকল্পে আমি তার নাম পরিচয় দেব না। তবে, তার বিষয়টি সাধারণভাবে আলোচনা করে কানাডা ইমিগ্রেশনে আইইএলটিএস স্কোরের সবিশেষ গুরুত্ব বোঝাতে চেষ্টা করবো।

এ আলোচনার স্বার্থে সিআরএস স্কোর কী জিনিস তা নিয়ে আপনাদের খানিক ধারণা না দিলেই নয়। এক্সপ্রেস এন্ট্রি সিস্টেমে যেসব ইমিগ্রেশন প্রত্যাশীর আবেদন বিবেচনায় আনা হয় তাদের ক্ষেত্রে প্রথমেই বিবেচনায় নেওয়া হয় এই সিআরএস (কম্প্রিহেন্সিভ র‌্যাংকিং সিস্টেম) স্কোর। আবেদনকারীর বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা, ভাষায় দক্ষতা, ইত্যাদির সাথে তিনি বিবাহিত হয়ে থাকলে স্বামী বা স্ত্রীর অনুরূপ দক্ষতা বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারণ করা হয় এ সিআরএস স্কোর। সিআরএস স্কোর এর হিসাবে আইইএলটিএস স্কোর বড় ভূমিকা পালন করে। কেননা, আইইএলটিএস স্কোর হতে আবেদনকারীকে সরাসরি পয়েন্ট দেয়ার পাশাপাশি আইইএলটিএস স্কোরকে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কাজের অভিজ্ঞতার সাথেও যৌথ বিবেচনায় এনে আলাদা পয়েন্ট দেওয়া হয়।

বিষয়টা একটা উদাহরণ দিয়ে খোলাসা করি। ধরুন, দুইজন আবেদনকারীর একজন কেবল উচ্চ মাধ্যমিক পাশ, অপরজন এমএ পাশ। দুজনেরই আইইএলটিএস স্কোর বেশ উঁচুমানের। কিন্তু, কর্মক্ষেত্রে দেখা যাবে, যার উঁচু আইইএলটিএস স্কোরের সাথে উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতাও আছে, তিনি কর্মক্ষেত্রে অন্যজনের তুলনায় অনেক বেশি অবদান রাখতে পারবেন। এর অর্থ, উচ্চ শিক্ষিত আবেদনকারীর ভাষায় দক্ষতাও উঁচু হলে সিআরএস হিসেবে তিনি অনেক বেশি পয়েন্ট পেয়ে যাবেন। একই যুক্তি খাটে কাজের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রেও। এবার বুঝুন, কানাডা ইমিগ্রেশনে আইইএলটিএস স্কোর, বা ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা কতটা গুরুত্ব বহন করে।

আমার উপরে বর্ণিত ক্লায়েন্টের সিআরএস স্কোরে আইইএলটিএস-এর ফলাফল কতটা প্রভাব ফেলছে দেখুন এবার।

মূল আবেদনকারীর বয়স উনচল্লিশ। কানাডার মাস্টার্স ডিগ্রি আছে। কাজের অভিজ্ঞতা কানাডার বাইরে, প্রায় দশ বছর। আইইএলটিএস স্কোর লিসেনিং-এ সাত, এবং রিডিং, রাইটিং, ও স্পিকিংয়ে সাত এর উপর। তার স্ত্রীর বাংলাদেশের মাস্টার্স ডিগ্রি আছে, তবে, কাজের অভিজ্ঞতা নেই। আইইএলটিএস স্কোর তার স্বামীর কাছাকাছি।

উপরের প্রোফাইলে সিআরএস স্কোর হিসেব করলে ৪০০-ও হয় না। এক্সপ্রেস এন্ট্রিতে আইটিএ (ইনভাইটেশন টু অ্যাপ্লাই) পেতে এ স্কোর তুলনামূলকভাবে কম সম্ভাবনাময়। যারা জানেন না, আইটিএ না পেলে কানাডায় পিআর বা ইমিগ্রেশনের আবেদন দাখিল করা যায় না। আর, আইটিএ পেতে হলে প্রতিযোগিতামূলক সিআরএস স্কোর পেতে হয়।

শুনে অবাক হবেন, আমার উপরের ক্লায়েন্টের আইইএলটিএস স্কোর লিসেনিং-এ কেবল এক পয়েন্ট বাড়ালেই তার সিআরএস স্কোর বেড়ে সাড়ে চারশ ছাড়িয়ে যায়। সে সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে তার আইটিএ পাবার সম্ভাবনা। এবার বুঝুন ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বাড়ানো কানাডা ইমিগ্রেশনের জন্য কতটা জরুরি।

কানাডা ইমিগ্রেশন বিষয়ে প্রশ্ন থাকলে ভবিষ্যৎ লেখায় আপনাদের প্রশ্নের প্রতিফলন দেখতে পাবেন। এছাড়া, কানাডা ইমিগ্রেশনের টুকিটাকি জানতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এও নিয়মিত চোখ রাখুন। আপনাদের সাথে আরো অনেক মূল্যবান তথ্য সহভাগের আগ্রহ নিয়ে আজ এখানেই শেষ করি।

লেখক: কানাডীয় ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট, আরসিআইসি।  

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!