করোনাভাইরাস জয়ী এক প্রবাসী দম্পতির গল্প

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন এমন এক বাংলাদেশি দম্পতি এখন ‘সুস্থ’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2020, 09:28 AM
Updated : 11 May 2020, 09:28 AM

তারা হলেন ফজলুল হক ও তার স্ত্রী সায়েরা হক, বাড়ি কিশোরগঞ্জে। তারা নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে বসবাস করেন।

পেশায় চিকিৎসক সায়েরা হক তার রোগীদের টেলিফোনে প্রেসক্রিপশন দিচ্ছেন এবং পেশায় প্রকৌশলী ফজলুল হক ‘মেট্রপলিটন ট্রানজিট অথরিটি’ (এমটিএ) এর চাকরিতে যোগ দিয়েছেন এ সপ্তাহে।

তারা জানান, টেস্টে দুজনই পজিটিভ ছিলেন। অসুস্থ হয়ে ১৪ এপ্রিল ফজলুল হক কোনি আইল্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে দুদিন পর প্রেসক্রিপশন নিয়ে তিনি বাসায় ফিরেন। কিন্তু সায়েরা হক হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় থেকেই নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ সেবনসহ পুষ্টিকর খাবার খান।

ওই পরিবারে অন্তত ৭ জন রয়েছেন যাদের বয়স ৭০ এর বেশি, তবে কেউই জটিল কোন রোগে আক্রান্ত নন জানিয়ে ফজলুল হক বলেন, “স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানরা আইসোলেশনে বসবাস শুরু করেছিলাম মার্চের শেষ দিন থেকে। এমনি অবস্থায় জানলাম যে আমার ভায়রা-ভাই ভাইরাসে আক্রান্ত। তিনি চাকরি করেন নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগে। এটি নিশ্চিত হবার পর আমি ও আমার স্ত্রী সায়েরা হক ৩ এপ্রিল গেলাম করোনাভাইরাস টেস্ট করতে।

“৫ এপ্রিল জানানো হলো যে, আমরা উভয়েই পজিটিভ। এরপর এক ধরনের দুশ্চিন্তা গ্রাস করলেও মনোবল হারাইনি। প্রতিদিনই বেশ কয়েক গ্লাস গরম পানি, লেবু পানি, আদা-লং আর মধু দিয়ে চান পান করি। সঙ্গে রয়েছে ওষুধ। ফলমূলসহ পুষ্টিকর খাবার খেতে থাকি বেশি করে। এমন অবস্থায় শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বলবোধ করায় ১৪ এপ্রিল স্ত্রীর সঙ্গে গেলাম কোনি আইল্যান্ড হাসপাতালে।”

যুক্তরাষ্ট্রে ‘কিশোরগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশন’ এর সাবেক এ সভাপতি বলেন, “আমার স্ত্রী ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। এক পর্যায়ে আমার দেখভালের দায়িত্ব আমার স্ত্রীকে নিতে সম্মতি দেওয়া হয়। ১৭ এপ্রিল অনেকটা ভালো মনে হওয়ায় হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরি। বাসায় আসার পর ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়েছি বলে মনে হচ্ছে। একইসঙ্গে সায়েরা হকও সুস্থবোধ করায় পুরোদমে টেলি-মেডিসিন দিচ্ছেন তার রোগীদের।”

ফজলুল হক আরও বলেন, “আমরা কারও বিরাগভাজন হইনি। আলাদা থেকেছি, অন্যরা খাবার সরবরাহ করেছেন। সবাই চেষ্টা করেছি হাসি-খুশিতে ভরপুর থাকতে। আমরা যে কঠিন একটি রোগে আক্রান্ত, যে রোগে প্রতিদিনই অনেক পরিচিত মানুষের মৃত্যুর সংবাদ সবাই পাচ্ছি, তবু কেউই হাল ছাড়িনি।”

সায়েরা হক বলেন, “আমি ভালো হয়েছি বলে খুব খুশি হতে পারছি না। কারণ ইতোমধ্যে আমার অনেক রোগী মারা গেছেন। আরো অনেকে হাসপাতালে অথবা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। এত পরিচিতজনের মৃত্যু সংবাদ আমাকে বিষন্ন করছে।”

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!