কোভিড-১৯: দেশে ফিরতে নিবন্ধন করেছেন ৯০ জাপান প্রবাসী

বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ মহামারীর কারণে জাপানে আটকা পড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ৯০ জন দেশে ফিরতে নিবন্ধিত হয়েছেন।

এস এম নাদিম মাহমুদ, জাপান প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 April 2020, 02:46 PM
Updated : 18 April 2020, 03:10 AM

টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর জিয়াউল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার কাছে ইতিমধ্যে ৯০ জন প্রবাসী নিবন্ধিত হয়েছেন যারা দেশে ফিরতে চান। আমরা ঢাকায় পররাষ্ট্র ও অন্যন্য মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি জানিয়েছি।”

“জাপানের মত দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলপাইন্সে আটকা পড়ছে অনেক প্রবাসী। আমরা আশা করছি, সরকার হয়তো এইসব দেশ থেকে একযোগে প্রবাসীদের দেশে ফেরানোর কোন উদ্যোগ নিতে পারে।”

উচ্চশিক্ষা শেষে দেশে ফেরার অধীর আগ্রহে থাকা প্রবাসী শিক্ষার্থীদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানিয়েছেন। জাপানের একাডেমিক সেশন অনুযায়ী গত মার্চের শেষ সপ্তাহে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হয়েছে। ঢাকার সাথে সব ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের ওই সময়ে দেশে ফেরা হয়ে ওঠেনি।

শিগা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পিএইচডি করা মারুফ হক খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চার বছর পড়াশোনা করে পিএইচডি শেষে যথাসময়ে দেশে ফিরতে না পারার কারণে এক অবর্ণনীয় কষ্ট ও ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয়েছে। দেশে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি নিয়ে ওসাকা হতে টোকিওতে ফ্লাইট যাওয়ার পর ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর শেষ মুহূর্তে দেশে যেতে পারিনি।”

তিনি আরও বলেন, “বাসা, চিকিৎসা বীমা, মোবাইল সংযোগ, ইন্টারনেট সব কিছু বাতিল করেছিলাম। অনিশ্চিত গন্তব্যে আমরা। জাপানের মতো একটি দেশে কোনও আর্থিক সাপোর্ট ছাড়া অনিশ্চয়তা নিয়ে দেশে ফেরার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। নিজে চিকিৎসক হয়েও দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে বিদেশে আটকে থাকাও মানসিক যন্ত্রণা তৈরি করছে।”

ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি শেষ করে দেশে ফেরার প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে ফেলেছিলেন আরেক প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রায় শতাধিক বাংলাদেশি জাপানে আটকা পড়েছে। আমরা সত্যি অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন পার করছি। স্কলারশিপের অর্থে আমরা চলতাম। পিএইচডি শেষ হওয়ার পর এখানে আমার কোন জব নেই। এই অবস্থায় সরকার যদি আমাদের পাশে এসে না দাঁড়ায় তাহলে আমাদের যাওয়ার কোনও পথ নেই।”

এম এ রহমান জামিল নামের একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মার্চ মাসে ডিগ্রিপ্রাপ্ত হয়ে এবং দেশে ফেরার সকল প্রস্তুতি নিয়েও আমরা ফিরতে পারছি না। করোনাভাইরাসের কারণে দেশের পরিবারে পরিজনকে নিয়ে যেমন উদ্বিগ্ন আছি তেমনি জাপানে সংক্রমণের হার ক্রমেই বেড়ে চলছে।”

তিনি আরও বলেন, “ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়ায় আমাদের সবারই বৃত্তিও শেষ হয়ে গেছে I স্বাস্থ্যবীমা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে I  যদি এমন কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে তার জন্য চিকিৎসা সেবা নেওয়া অনেক দুষ্কর হয়ে যাবে I একটি বিশেষ ফ্লাইটে আমাদেরকে দেশে ফিরিয়ে ব্যবস্থা করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি।”

বাবুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে গত পয়লা জানুয়ারি থেকে ২৭শে মার্চ পর্যন্ত শিজুওকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ শেষ করি। ২৮ তারিখে ফ্লাইট ছিল। কিন্তু সব ফ্লাইট বন্ধ থাকায় জাপানে আটকে পড়ি। অত্যন্ত অনিশ্চয়তা এবং দুঃচিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।”

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!