করোনাভাইরাস: ফ্রান্স প্রবাসীদের চিন্তা যত দেশকে নিয়েই

যতটুকু না নিজের জন্য তার চেয়ে বেশি দেশের জন্য চিন্তা করছেন ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ কঠিন সময়ে গ্রামের অবহেলিত জনপদ আর পিছিয়ে থাকা মানবগোষ্ঠী পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করবেন, সে চিন্তা করছেন বারবার। সঙ্গে তো নিজেদের নিরাপত্তার প্রশ্ন রয়েছেই।

শাহ সুহেল আহমদ, ফ্রান্স থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 April 2020, 04:53 AM
Updated : 7 April 2020, 05:32 AM

গত দুইদিন থেকে ফ্রান্সে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা হাজার পেরুচ্ছে। যদিও বলা হচ্ছে, এ সংখ্যার সঙ্গে নার্সিং হোমের (বৃদ্ধ নিবাস) সংখ্যা যোগ হচ্ছে। কিন্তু তারাও একই রোগ অর্থাৎ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় সাধারণ মানুষ গেলো দুইদিন ধরে মৃতের সংখ্যা হাজারের উপরেই গুণছেন।

আর এ নিয়ে অনেকটা উদ্বেগ-আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন দেশটিতে বাংলাদেশি প্রবাসীরা। তাদের অনেকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানাচ্ছেন, একদিকে নিজের চিন্তা ও অন্যদিকে দেশে স্বজনদের চিন্তা।

প্যারিসের গার দু নর্দ এলাকায় বসবাস করেন আওয়ামী লীগের রাজনীতিক এমআর রশীদ বাবলু। তিনি বলেন, “অত্যধিক জনবহুল দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের চিন্তাটা একটু বেশিই। তবে সরকারের উদ্যোগগুলো যথাযতভাবে পালিত হলে মানুষ কিছুটা হলেও সেবা পাবে।”

তবে এ মহামারির সময়ে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন অনেকই। প্যারিসে লাকোর্নভে বসবাস করেন লেখক লোকমান আহম্মদ আপন। তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস নিয়ে সরকার শুরু থেকেই ভুলের মধ্যে রয়েছে। এতো সময় পেয়েও পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে না পারায় পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। সামনে কী আছে তা আমরা কেউ জানি না।” একই কথা বলছেন আরও একাধিক প্রবাসী।

তবে প্যারিসের অনেকেরই অভিমত, এখনও যে সময়টুকু আছে তা কাজে লাগাতে হবে। চিকিৎসার সরঞ্জামাদিতে পরিপূর্ণ করে রাখতে হবে। তবেই হয়তো দেশের জনগণ কিছুটা হলেও চিকিৎসা সেবা পাবে।

ফ্রান্সে একটানা প্রচণ্ড ঠান্ডা শেষে এপ্রিলের শুরু থেকে ঝকঝকে রোদের দেখা মেলে। এ সময়ের সূর্যের তাপটা বড়ই আকাঙ্খিত ইউরোপিয় বিশেষত ফরাসীদের কাছে। এমন রোদে পেখম মেলে গা এলিয়ে দিতে কে না চায়! ফরাসিরা এ সময়ে ছুটির দিনটাকে দারুণ উপভোগ করে আসছে বরাবরই।

কিন্তু এবার করোনাভাইরাসের থাবায় সে উপভোগ তো দূরে থাক, বরং নিরবতা বিরাজ করছে ফ্রান্সের চারদিকে। দীর্ঘদিনের লক ডাউনের কারণে মানসিক-শারিরিক চাপ ভর করলেও অতি জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বেরুচ্ছে না।

সাধারণত ইউরোপিয়রা কাজপ্রিয় মানুষ। ছোট বড় বৃদ্ধ, সবাই কাজের মাঝে থাকতেই ভালবাসে। সেইসব কর্মচঞ্চল মানুষগুলো এখন কেমন আছে! খবর নিতে গিয়ে জানা গেলো, না, তারা থেমে নেই কেউই। মানসিক চাপ কমাতে তাদের বেশিরভাগই ঘরের অভ্যন্তরীণ কাজে ব্যস্ত হয়েছেন। কেউবা ছবি আঁকছেন আবার কেউবা গান শিখছেন। বিভিন্ন কারণে অনেক ফরাসি সন্তানদের সময় দিতে পারেন না। এখন সেই শূন্যতাকে মোক্ষমসময় হিসেবে সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছেন, খেলছেন তাদের সঙ্গে।

আবার কেউ কেউ জানালেন, তারা দৈনিক ২৪ ঘণ্টার একটা রুটিন করে নিয়েছেন এবং একদম রুটিনমাফিক সময় পার করছেন। এতে যেমন দিন চলে যাচ্ছে তেমনি বোরিং ফিলও করতে হচ্ছে না।

একই অবস্থা ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও। সময় কাটাতে একেকজন একেক রকম পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। কেউ ফরাসি ভাষায় মনোযোগী হয়েছেন, কেউবা ফরাসি নাগরিকত্ব নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আবার অনেকেই যার যার ধর্মমতে ধর্মীয় প্রার্থনা বাড়িয়েছেন।

তবে সবার আশা একটাই, বিরূপ এ পরিস্থিতি নিশ্চয়ই কেটে যাবে। সে পর্যন্ত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!