‘ঘরে বসে শুধু অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন শুনি’

নভেল করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত ইতালিতে এ পর্যন্ত ৭৪৩ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে দেশটির বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থা। তাদের নিয়ে এই রোগে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮২০ জনে।

আশিক রহমান, ইতালির মিলান থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2020, 08:35 AM
Updated : 25 March 2020, 08:35 AM

এ অবস্থায় আমরা যারা ইতালিতে আছি বিশেষ করে মিলান শহরে অথবা তার আশপাশে কেমন আছি আমরা! আমি মিলানের সিটি সেন্টার থেকে চার কিলোমিটার দূরে শহরতলিতে পরিবার নিয়ে থাকি। আজ প্রায় ২০ দিন হলো বাসায় বন্দি।

এর ভেতরে দুই-তিনবার সুপারমার্কেট থেকে বাজার করার জন্য বের হয়েছিলাম। আমার বাসার আশপাশে আরও ১৫/২০টা বাঙালি পরিবার থাকে। আমার জানামতে এখন পর্যন্ত আমরা সবাই ভালো আছি। আমাদের খাবার-দাবার নিয়ে সমস্যা হচ্ছে না। ইচ্ছে করলে আমরা ঘর হতে বের হতে পারি। সুপারমার্কেটগুলাতেও যথেষ্ট খাবার সামগ্রী আছে।

এখানে সমস্যা বলতে আমাদের যাদের ছোট বাচ্চা আছে তারা একটু সমস্যায় আছি। কারণ শিশুরা বাইরে যেতে চায়, খেলতে চায়, যেতে না পারলে জেদ ধরে বা কান্না করে। কিন্তু মানিয়ে নেওয়ার অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের স্কুল শিক্ষক অনলাইনে অ্যাক্টিভিটিস দিয়ে বা ভিডিও কনফারেন্স করে অনেকভাবে সাহায্য করছে।

তবে আমরা সবাই বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে খুব চিন্তিত। কোনভাবেই বোঝা যাচ্ছে না কখন পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে। দিনদিন রোগীর সংখ্যা আর মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। রাস্তাঘাট গতকাল থেকে খুবই নীরব। ঘরে বসে শুধু অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন শুনি। হয়তো মিলানের সব থেকে বড় জেনারেল হাসপাতালটা বাসার খুব কাছে বলে!

লেখক (পুরনো ছবি)

যদি স্থানীয় ইতালিয়দের কথা বলি তারাও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আগের চেয়ে এখন আরও বেশি সতর্ক। তবে কিছুটা বিপদে আছেন বৃদ্ধ মানুষ যারা একা থাকেন। বিশেষ করে বাজার করা, হাঁটা চলা করা সীমিত থাকার জন্য। তার সঙ্গে অসুস্থ হওয়ার ভয়তো আছেই। এজন্য যারা ইতালিতে আছেন সবার প্রতি অনুরোধ আপনাদের পাশের বাসার মানুষের সঙ্গে পরিচয় থাকলে খবর নিতে পারেন, দূরত্ব বজায় রেখে (এক মিটার)। দরকার হলে বাজার করে দিতে পারেন।

আইনের প্রতি সবার শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। বেশি পরিমান বাজার করা উচিত নয়, যেহেতু সরকার নিশ্চিয়তা দিচ্ছে। ইতালিতে দুর্যোগকালেও বিভিন্ন সুপার মার্কেটে ৩০% থেকে ৫০% ডিসকাউন্ট দিচ্ছে।

ইতালিতে করোনাভাইরাস এতো তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়েছে কেন! ইতালিতে পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক বয়স্ক মানুষ বাস করেন। আর তরুণরা এখানে একদম নিয়মিত বয়স্কদের সঙ্গে মেশে। ইতালিতে করোনাভাইরাস এত বেশি ছড়িয়ে যাওয়ার পেছনে এ ব্যাপারটির অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। বলে রাখা ভালো, বয়স্ক মানুষ বলতে ৬৫ এর বেশি বয়সীদেরই ধরা হয়েছে। ইতালির মোট জনসংখ্যার ২৩ শতাংশ মানুষের বয়সই ৬৫ এর বেশি।

ইতালি এখনও ভুতের নগরী হয়নি। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা রাস্তায় আছে। আপনার প্রয়োজনীয় সবকিছু আপনি চাইলে কিনতে পারবেন। ফেইসবুকে অথবা বাংলাদেশের সংবাদ দেখে শুধু শুধু বিব্রত হবেন না। বিভ্রান্ত করবেন না, দেশের মানুষকে টেনশন দেবেন না।

উহানের যে অবস্থা ছিল আর এখন যে অবস্থায় এসেছে তাহলে তো আমরা আশা করতেই পারি ইতালি পারবে। ইতালি রাষ্ট্রীয়ভাবে ডাক্তার-নার্সদের অনুরোধ করছে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতে। তাদের আরও ডাক্তার ও নার্স দরকার।

আশা করি খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হবে সবকিছু। এ দুআ করি। ভালো থাকুক প্রিয় স্বদেশ, ভালো থাকুক বাংলাদেশিরা।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!