স্লোভেনিয়ায় করোনাভাইরাস আতঙ্কে বাংলাদেশিরা

মধ্য ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়াতে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে কোভিড-১৯ খ্যাত নোভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছ দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের আতঙ্ক।

রাকিব হাসান, স্লোভেনিয়া থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2020, 08:24 AM
Updated : 24 March 2020, 08:24 AM

মোট ২১ লাখ জনগোষ্ঠীর এ দেশটিতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা ২০ এর কাছাকাছি, এদের মধ্যে পাঁচজন শিক্ষার্থী। তেমনই একজন শিক্ষার্থী হলেন মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ, তিনি ইউনিভার্সিটি অব লুবলিয়ানার অধীনে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ওপর পিএইচডি করছেন।

তিনি জানান, বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো স্লোভেনিয়াতেও করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে, এর প্রভাবে শিক্ষার্থীরা বেশ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। কেউই সঠিকভাবে বলতে পারছে না যে কবে সামগ্রিক পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আবার কবে খুলে দেওয়া হবে। যদিও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে অনলাইনে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বাংলাদেশি মালিকানায় পরিচালিত দুটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানাতে। সেখানকার ট্রুবায়েভা সেস্টায় অবস্থিত ‘তান্দুরী’ নামে একটি বাংলাদেশি ও ভারতীয় খাবারের রেস্টুরেন্টের মালিক হলেন মাহমুদুল হাসান শুভ। তিনি জানান, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে তিনি বেশ বিপাকে পড়েছেন। খুব বেশি দিন হয়নি তিনি এ রেস্টুরেন্টের মালিকানা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এরকম পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে তাকে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এটা তাকে লোকসানের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

স্লোভেনিয়াতে বসবাসরত অন্যান্য বাঙালিদের প্রতিক্রিয়াও প্রায় একই। সরকার জরুরি অবস্থা জারি করায় নিত্য প্রয়োজনীয় সেবাদানকারী কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন ফার্মেসি, হাসপাতাল, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, সুপার শপ ও নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির কিছু খাবারের দোকান ছাড়া সবকিছু বন্ধ রাখা হয়েছে যার প্রভাবে তাদের অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। ফলে সাময়িকভাবে তাদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।

সোমবার স্লোভেনিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী এপর্যন্ত দেশটিতে ৪৪৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে যাদের শরীরে নোভেল করোনাভাইরাস পজিটিভ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানাতে এবং এরপর পর্যায়ক্রমে ক্রানিয়ে ও ছেলইয়েতে।

দেশটিতে করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত দুই দিনে আরও নতুন করে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে, এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো তিনে। গতকাল স্থানীয় সময় দুপুরে স্লোভেনিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী টমাজ গ্যানটারের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে পুরো স্লোভেনিয়াকে লক ডাউন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে খুব বেশি প্রয়োজন না থাকলে কাউকে ঘর থেকে বাইরে বের না হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে রোববার স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইয়ানেজ ইনশা এক টুইটার বার্তায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে স্লোভেনিয়ার স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ক্রান্তিকাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে মনোবল ধরে রেখে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। স্লোভেনিয়া ১৯৯১ সালে যুগোস্লাভিয়া ফেডারেশন থেকে বের হয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

লেখক:  শিক্ষার্থী, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!