দেশে বিদেশে: বালটিমোর শহরের বলা না বলা কথা, পর্ব ১৩

স্টেট হচ্ছে মেরিল্যান্ড। শহরের নাম বালটিমোর। এ শহরেই প্রথম পা রাখা। মেয়ে রিনভীর বয়স তখন মাত্র সাড়ে চার বছর। আর ছেলে রাকীন দুই বছরের শিশু।

মো. রওশন আলম, যুক্তরাষ্ট্র থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2020, 08:11 AM
Updated : 11 Feb 2020, 08:12 AM

রিনভীর স্কুলে পা রাখার সময় হয়েছে তখন। ছয় মাস পরই রিনভীর স্কুলে যাবার পালা। এখানে রুল হচ্ছে- নো চাইল্ড লেফট বিহাইন্ড। অর্থাৎ চাইলেও বাচ্চাদেরকে ঘরে বসে রাখা যাবে না। স্কুলে যেতেই হবে। প্রাইমারি থেকে হাই স্কুল পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক এ দেশে।

হাই স্কুল ঠিক আমাদের দেশের মাধ্যমিক স্কুলের মতো এসএসসি পাশ পর্যন্ত নয় এখানে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির লেখাপড়া শেখানো হয় হাই স্কুলে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার যাবতীয় খরচ স্টেট গভর্নমেন্ট বহন করে থাকে। অর্থাৎ সন্তানদেরকে স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে পিতামাতার উপরে অর্থনৈতিক কোনো চাপ থাকে না। স্কুলের লেখাপড়া পুরোপুরি ফ্রি।

বাচ্চারা স্কুলে শুধু লেখাপড়ায় নয়, ম্যানারও শিখে থাকে। শিক্ষার পাশাপাশি বাচ্চাদের মেধার উপর ভিত্তি করে আরো কিছু এক্সট্রা কারিকুলাম কার্যক্রম রয়েছে এদেশের স্কুলগুলোতে। যেগুলোতে স্টুডেন্টরা পারটিসেপেট করতে পারে। এদেশে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া মূলত স্কুলকেন্দ্রিক। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়, শিক্ষকের কাছে যা শিখে সেই শিখার উপর ভিত্তি করে নিজেরাই বাসায় এসে হোমওয়ার্ক করে। আলাদা করে প্রাইভেট টিউশনির প্রয়োজন নেই।

এদেশে শিক্ষকরা টিউশনি ও কোচিঙয়ের মাধ্যমে আয় উপার্জন করে না। শিক্ষকদের বেতন যে এখানে আহামরি, তাও কিন্তু নয়। তবুও শিক্ষকতা এখানে একটি অতি সন্মানিত পেশা। শিক্ষকরা এই পেশাকে গুরুদায়িত্ব হিসেবে নেন এবং এনজয় করে থাকেন।

আমাদের বাংলাদেশে মাতা-পিতারা সন্তানদের লেখাপড়া নিয়ে অনেকটায় আতঙ্কগ্রস্ত থাকেন। সন্তানদের ভাল শিক্ষা দেবার জন্য কতনা দুশ্চিন্তা তাঁরা করে থাকেন। ভাল স্কুলে সন্তানদেরকে পাঠাতে পারলে সেই দুশ্চিন্তার ভার অনেকটায় মুক্ত হয়। কিন্তু সেইসব ভাল স্কুলে সন্তানদেরকে ভর্তি করানো কি চাট্টিখানি ব্যাপার? ভর্তি পরীক্ষা মানে একেবারে একটি ভর্তিযুদ্ধ সেখানে। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যা একেবারে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবার শামিল।

শুধু তাই নয়, স্কুলের নানাবিধ খরচ তো আছেই। ছোটবেলা থেকে একটা বাচ্চার পিছনে শিক্ষার খরচ মেটানো কারো কারো ক্ষেত্রে অনেকটায় দুঃসাধ্য ব্যাপার। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারের ক্ষেত্রে অর্থের টানাপড়েন সারাবছরই লেগে থাকে। বাচ্চাদের প্রাইভেট টিউটরের বেতন, কোচিঙয়ের খরচ সেই টানাপোড়েন আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। যারা নিম্নআয়ের মানুষ, তাঁদের সন্তানদের ক্ষেত্রে লেখাপড়ার ব্যয়ভার মেটানো কঠিন ব্যাপার।

ইদানিং শুনে থাকি যে, স্কুলে লেখাপড়া সেই আগের মতো আর হয় না। ছেলেমেয়েদের ক্লাশ ফাঁকি তো আছেই। পড়ালেখা মূলত টিউশনি ও কোচিং নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাই সেসবের ব্যয়ভার মেটাতে গিয়ে অধিকাংশ পিতামাতাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়।

স্কুলের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে। ভাল বা মন্দ স্কুল। বাংলাদেশে যেমন সব স্কুল ভাল নয় বা শিক্ষা উন্নতমানের নয়, ঠিক যুক্তরাষ্ট্রেও তাই। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রেও ভাল বা মন্দ স্কুল রয়েছে। সব স্কুলেই যে এখানে ভাল বা উন্নত লেখাপড়া হয় তা নয়। স্কুলের মান বা র‍্যাঙ্কিং যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এখানে। পিতামাতারা বিশেষ করে এশিয় মাতাপিতারা এদেশে সন্তানদের লেখাপড়ার ক্ষেত্রে বেশ যত্নবান। সন্তানদেরকে ভাল স্কুলে পাঠানো তাঁদের জীবনের একটি প্রধান প্রায়োরিটি থাকে এদেশে।

সন্তানদেরকে ভাল স্কুলে পাঠানো এখানে কঠিন কোনো বিষয়ও নয়। কোনো ভর্তি পরীক্ষারও দরকার হয় না। আমাদের দেশের মতো ভর্তিযুদ্ধ নয়। দরকার একটি ঠিকানা। আবাসিক ঠিকানা। একটি রুল এদেশে জলের মতো পরিষ্কার, যে মাতাপিতা যে এলাকার বাসিন্দা, তাঁদের সন্তানদেরকে সেই এলাকার পাবলিক স্কুলেই যেতে হবে। তাই যে স্কুলটি ভাল বা হাই র‍্যাঙ্কিং সেই স্কুল জোনের ভিতরে একটি ভাড়া বাসা বা নিজ বাড়ির ঠিকানা থাকলেই ওই পিতামাতার সন্তান ওই হাই র‍্যাঙ্কিং স্কুলে পড়তে পারবে। আমাদের এশিয় মাতাপিতারা সেই সুযোগটি নিয়ে থাকেন। তাঁরা সন্তানদের ভবিষ্যৎকে প্রাধান্য দিয়ে সঞ্চয়ের অর্থগুলো বাসাভাড়ার পিছনে ব্যয় করে থাকেন।

ভাল স্কুলজোনের মধ্যে বাসাভাড়া বা বাড়ির দাম অত্যধিক বেশি হয়ে থাকে। ভাল স্কুল এরিয়াতে থাকতে হলে ভাল ইনকাম থাকা তাই জরুরি। সংগত কারনেই বেশি ইনকামধারী মানুষেরা ব্যয়বহুল বা অভিজাত এলাকায় বসবাস করে থাকেন। অতি অভিজাত বা ব্যয়বহুল এলাকার পাবলিক স্কুলগুলো সাধারণত অতি ভাল হয়ে থাকে। র‍্যাঙ্কিং হাই।

যাই হোক, মেয়ে রিনভী বালটিমোরের একটি পাবলিক স্কুলে যাওয়া শুরু করল। আমি তখন একজন পোস্টডক্টরাল রিসার্চার। সরাসরি এসেছিলাম সেখানে জাপান থেকে। সেলারি যা পেতাম, কোনোমতে চলে যেত। তেমন কোনো উন্নত বা অভিজাত এলাকায় থাকার সুযোগ ছিল না। তাই রিনভী যেতে থাকলো মোটামুটি মানের একটি স্কুলে। দেখতে লাগলাম যে, প্রতিদিন সকালে (সোমবার থেকে শুক্রবার) হলুদ রঙের স্কুলবাস সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে এসে দাঁড়ায়। অ্যাপার্টমেন্টের সব ছেলেমেয়ে স্কুলে যাবার জন্য সুশৃঙ্খলভাবে একটি লাইনে দাঁড়িয়ে সেই বাসে উঠে পড়ে। বাচ্চাগুলো যতক্ষণ না নিরাপদে বাসে উঠছে, ততক্ষণ অন্য কোনো যানবাহন ওই স্কুলবাসের দুপাশ দিয়ে যাচ্ছে না।

স্কুলবাসের সামনে ও পিছনে সব প্রাইভেট কার বা ভেহিকলের ড্রাইভাররা তাঁদের গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বাচ্চাদেরকে নিরাপদে বাসে উঠা সুনিশ্চিত করছে তাঁরা। সন্তানদেরকে স্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে পিতামাতারা নিশ্চিন্তে তাদের ঘরে ফিরে যাচ্ছে। সাথীও (আমার স্ত্রী) এভাবে ছোট্ট রাকীনের হাত ধরে প্রতিদিন ঘরে ফেরে।

রিনভীর জন্ম হয়েছে জাপানে। জাপানের ফুকুওকা শহরে। সে জাপানের হৈকোয়েনে (ডে-কেয়ার) যেত। জাপানি ভাষায় সে কথা ও গানও গাইতে পারত। ইংরেজি শেখার তার সুযোগ হয়নি। তাছাড়া আমরা বাসায় সর্বদা বাংলা ভাষায় কথা বলতাম। তাই রিনভী যখন বালটিমোরে প্রথম স্কুলে যেতে শুরু করল, আমরা একটু চিন্তিত হয়ে পড়লাম। মেয়ে ইংরেজি ভাষা জানে না, কতনা সমস্যায় পড়ে যাবে সে স্কুলে। আমাদের ধারণা যে মেয়ে স্কুলে ইংরেজি ভাষা না জানার কারণে হয়ত টয়লেটে যাবার কথাও কাউকে বলতে পারছে না বা খেতেও পারছে না। অবশ্য সেসব অমূলক চিন্তাগুলো ধীরে ধীরে মাথা থেকে চলে যেতে লাগল।

যখন জানতে পারলাম যে, ইংলিশ না জানা বাচ্চাদের জন্য একটি প্রোগ্রাম আছে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে ইংলিশ না জানা ছেলেমেয়েদেরকে স্কুলে ইংরেজি শেখানো হয় এবং এই ইংরেজি শেখানোর দায়িত্বটা স্কুলের শিক্ষকের, পিতামাতার নয়। দিন যত যেতে থাকল, রিনভীর স্কুলে যাবার আগ্রহ ততই বেড়ে গেল। তার প্রথম স্কুল শিক্ষকের নাম মিসেস শেঙ্ক। সে বাসায় ফিরে শুধু মিসেস শিঙ্কের কথায় বলত।

বুঝতে পারলাম যে, মিসেস শেঙ্ককে তার ভীষণ ভাল লেগেছে। মিসেস শেঙ্ক ও তার মধ্যে একটি দারুণ কানেকশন গড়ে উঠেছে। যে কানেকশনের মধ্যে কোনো ভয়ভীতি নেই, রয়েছে দারুণ এক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। স্টুডেন্ট-টিচার সম্পর্ক।

রিনভীর স্কুলে যাবার দিন যত বেড়ে যেতে লাগল, আমাদের ঘরের মধ্যে একটা বিপদও আস্তে আস্তে বাড়তে থাকলো। তা হল, ইংরেজি উচ্চারণের বিপদ। আমরা ঘরে ইংরেজিতে যা বলি, সেসব উচ্চারণ রিনভী ভুল ধরা শুরু করল। বাবা, এটার উচ্চারণ ঠিক এরকম নয়, এ...র...ক...ম............। আমাদের ইংরেজি বলার ধরণের সঙ্গে রিনভীর ইংরেজি বলার একটা পার্থক্য গড়ে উঠল। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘একসেন্ট’। আমরা একসেন্ট যত কারেক্ট করার চেষ্টা করতে থাকি, রিনভী তত ভুল ধরতে থাকে।

এদেশে ইউনিভার্সিটিতে যাবার আগে ছেলেমেয়েরা তিনটি স্কুলে পড়ে থাকে। এলেমেন্টারি বা প্রাইমারি স্কুল যেখানে পঞ্চম শ্রেণি বা ফিফথ গ্রেড পর্যন্ত পড়ানো হয়। মিডল বা মাধ্যমিক স্কুল যেখানে অষ্টম বা এইট গ্রেড পর্যন্ত পড়ানো হয়। হাই স্কুল যেখানে দ্বাদশ বা টুয়েলভথ গ্রেড পর্যন্ত পড়ানো হয়। এর পর তাঁরা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যায়। হাই স্কুল পর্যন্ত লেখাপড়া যেমন ফ্রি এদেশে, ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা কিন্তু ঠিক তার উলটো। ফ্রি নয়। যেটুকু সঞ্চয় করে রেখেছেন এযাবৎ, তা আবার চলে যাবে ছেলেমেয়েদের টিউশন-ফি’র পিছনে। আপনার ইনকামের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের ইউনিভার্সিটির টিউশন-ফি সম্পর্কিত। এ বিষয়ে আরেকদিন বিস্তারিত লেখা যাবে।

প্রথমের প্রতি মানুষের ভালবাসার টান বেশি থাকে। যেমন, প্রথম প্রেম। এটাকে সহজে ভোলা যায়না বা ভুলতে কষ্ট হয়। বালটিমোরের সঙ্গে সেরূপ প্রথম প্রেমের মতো একটি সম্পর্ক রয়েছে আমার। যুক্তরাষ্ট্রেও এ শহরে আমার প্রথম চাকরি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রুজি এ শহর থেকেই। এখানেই আমার প্রথম বসবাস। এখানেই আমার মেয়ে রিনভী ও ছেলে রাকীনের প্রথম স্কুলে যাওয়া। স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের যাত্রা শুরু এ শহর থেকেই।

এই শহরের এক পাশে ওয়াশিংটন ডিসি। আরেক পাশে তিন ঘণ্টার পথ পেরুলেই নিউ ইয়র্ক সিটি। টানা তিন বছর ছিলাম এ শহরে, যেখানে পেয়েছিলাম দারুণ এক বাংলাদেশি কমিউনিটি। তদুপরি ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি গ্রাজুয়েট’স গ্রুপ’ (ডিইউজিজি) বা অ্যাসোসিয়েশন যার মাধ্যমে প্রতিবছর আয়োজিত হত ঢাকা ইউনিভার্সিটি গ্রাজুয়েট’স এবং তাঁদের পরিবারবর্গের পুনর্মিলনী। আয়োজিত হত সেখানে অনুকরণীয় মধুর ক্যান্টিন, মধুর ক্যান্টিনের সিঙ্গারা আরো কত কিছু।

সেই কত কিছুর মধ্যে থাকত দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের আগমন যারা মূলত ঢাকা ইউনিভার্সিটি গ্রাজুয়েটস- তাঁরা আমাদের সঙ্গে প্রবাসে এসে শরীক হতেন। যেমন, সেসময় দেখেছিলাম এক সময়ের বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ড. এম সাইদুজ্জামানের মতো সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন। ঠিক তেমনি শরীক হয়েছিলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ভাইস চ্যান্সেলর ড. ফায়েজ স্যার ও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক। 

আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন ‘ভয়েস অব আমেরিকাতে’ সংবাদ পাঠ করতেন রোকেয়া হায়দার। সেই আপাকে যে কাছে থেকে দেখতে পাবো সেখানে, তা ছিল অভাবনীয় ব্যাপার। সজ্জন সংবাদ পাঠক আনিস ভাইয়ের কথা না হয় না-ই উল্লেখ বললাম। এই বালটিমোর শহরে থাকাকালীন কয়েকজন মানুষের সান্নিধ্য আমাদেরকে নিঃসঙ্গ থাকতে দেয়নি। তাঁরা হলেন ড. জামাল ভাই ও ভাবী, ড. শোয়েব ভাই, ছুটি ভাবী, ডা. ওয়াহিদ ভাই ও ভাবী, আওলাদ ভাই ও ভাবী, বন্ধু বাদল ও তার সহধর্মিণী, রকিব, আলমগীর ভাই ও তার পরিবারসহ আরো অনেকে।

বালটিমোর শহরের কথা বলছি অথচ তার ডাউনটাউনের কথা উল্লেখ করছি না, তা কি করে হয়? যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো বড় শহরের ডাউনটাউন মূলত বসবাসের জন্য ততটা উপযোগী নয়। ডাউনটাউন থেকে দূরে উপশহরগুলোতে ভাল বসতি, স্কুল গড়ে উঠার কারণে মানুষ সেখানেই মূলত বাসাবাড়ি কিনে বসবাস করে থাকে। অফিস আদালত ও ব্যবসা বাণিজ্যের মূলকেন্দ্র হচ্ছে ডাউনটাউন।

তাছাড়া রাতেও নানা কারণে জমে উঠে ডাউনটাউন। লো-ইনকাম মানুষের হাতে ড্রাগ নাড়াচাড়া হয় মূলত ডাউনটাউনে। তাছাড়া কৃষ্ণাঙ্গ বন্ধুরা শহরের আশপাশে বসবাস করে থাকেন। তাঁদের অনেকের চলন বলন একটু ব্যতিক্রম। তাদেরকে দেখলে অনেকেই ভয় পায়। শহরে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তাঁদের উপরে দোষ চাপে, পুলিশ তাঁদেরকে পাকড়াও করে। বালটিমোর শহর সেসব থেকে ব্যতিক্রম নয়, বরং তা বেশি।

তাই অনেকেই বালটিমোর শহরের নাম শুনলে বলতে থাকেন যে, বালটিমোর শহর তাঁদের পছন্দের তালিকার শহর নয়। অথচ আমার সেখানে ভিন্নমত রয়েছে। বালটিমোর শহরকে আমি ভালবাসি। তিনবছর টানা থেকেছি এই শহরে। ছেলেমেয়ে-পরিবার নিয়ে চষে বেড়িয়েছি এই শহরের আনাচে কানাচে উইকএন্ডে। কখনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সন্মুখিন হয়নি।

ডাউনটাউন সম্পর্কে একটি ঘটনা উল্লেখ করে আজকের পর্বটির ইতি টানতে চাই। বিশ্বখ্যাত নামিদামি ‘জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটির’ মূল ক্যাম্পাস ছিল বালটিমোর শহরের ডাউনটাউনে। রিসার্চের সুবাদে সেখানে প্রতিদিন যাতায়াত করা ছিল আমরা রুটিন লাইফ। কাজের ফাঁকে আমি পাবলিক হেলথ বিল্ডিংয়ের নিচে নেমে আসতাম। ফর স্মোকিং। স্মোকিং ইজ ইঞ্জুরিয়াস টু হেলথ। যদিও স্মোকাররা বলে থাকেন যে, স্মোকিং টেনশন কমায় (ভিত্তিহীন)।

সিগারেট ধরালেই আশপাশ থেকে প্রায় বাজপাখীর মতো কৃষ্ণাঙ্গ বন্ধুরা কাছে এসে আলতো করে বলত- স্যার, মে আই হ্যাভ এ সিগারেট প্লিজ? মে আই হ্যাভ এ কোয়ার্টার (কোয়ার্টার মানে পঁচিশ সেন্ট) প্লিজ? একটি সিগারেট বা একটি কোয়ার্টারই তো? এর বেশি কিছু তো চেয়ে বসেনি তাঁরা। মানুষ কতটা অসহায় হলে একটি কোয়ার্টার বা সিগারেট চাইতে পারে? আমি এই অসহায় মানুষের এতো ছোট আবদার ফেলে দেই কি করে!      

অনেক বছর হয়ে গেল। বালটিমোর শহরের সেসব বলা না বলা কথা ও সুখকর স্মৃতি আজও মনকে নাড়া দেয়।

লেখক: বোস্টনের একটি ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত

ই-মেইল: alamrowshon@gmail.com

(চলবে)

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!

আগের পর্ব