‘রাজাকার তালিকা ইতিহাস বিকৃতি রোধে সহায়ক হবে’

বিজয় দিবসের ঠিক আগে রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব:) চিত্তরঞ্জন দত্ত, যিনি সি আর দত্ত নামেই বেশি পরিচিত।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2019, 12:35 PM
Updated : 17 Dec 2019, 12:35 PM

স্থানীয় সময় সোমবার নিউ ইয়র্কে দাঁতের চিকিৎসক পুত্র রাজা দত্তের বাসায় অবস্থানরত এ সেক্টর কমান্ডারের সান্নিধ্যে প্রবাসের একদল মুক্তিযোদ্ধা বিজয় দিবস উদযাপন করেন।

রণাঙ্গনের সাথীদের কাছে পেয়ে আপ্লুত সি আর দত্ত বলেন, “দীর্ঘদিন পর হলেও রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের ঘটনাটি সত্যি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফেরা বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এর মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মাও শান্তি পাবে।”

সি আর দত্ত আরও বলেন, “একাত্তরের ঘাতকদের বিচার শুরু করে শেখ হাসিনা যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তা জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ৪৯তম বিজয় দিবসের প্রাক্কালে রাজাকারের তালিকা প্রকাশের ঘটনাটিও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিরোধে সহায়ক হবে।’

সেক্টর কমান্ডারের বিজয় স্মারকে প্রবাসের মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাক্ষর সম্বলিত শুভেচ্ছা।

বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এবং বাংলাদেশের সকল মানুষকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চার নম্বর সেক্টর কমান্ডার বলেন, “জাতিরজনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনায় তিনি  (শেখ হাসিনা) নিরলসভাবে কাজ করছেন। এজন্যে তাকেও ইতিহাস অবশ্যই সম্মানিত করবে।“

রাজা দত্তের বাড়ির অডিটরিয়ামে একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয় এবং সি আর দত্তকে সাথে নিয়ে সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে মুখরিত ছিল পরিবেশ।

বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সহায়তায় সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের উদ্যোগে প্রবাসে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধা এবং হোস্ট সংগঠন দুটির শীর্ষ কর্মকর্তারা এ সময় একাত্তরের স্মৃতিচারণ করেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সম্মান পুনর্প্রতিষ্ঠার জন্য শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।

অনাড়ম্বর এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি রাশেদ আহমেদ। সঞ্চালনা করেন ফোরামের নির্বাহী সদস্য মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক লাবলু আনসার।

সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন বীর প্রতীক মেজর (অব:) মঞ্জুর আহমেদ, কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায় এবং শহীদ হাসান, আবু তাহের, ফোরামের সেক্রেটারি রেজাউল বারি, ভাইস প্রেসিডেন্ট আবুল বাশার চুন্নু, মিজানুর রহমান চৌধুরী, সানাউল্লাহ, এম এ আওয়াল, মলয় সাহা, আব্দুল মতিন, আবুল হোসেন, আবুল কাশেম সরকার, এনামুল হক, দেবেন্দ্র দাস, মলিন চন্দ্র সাহা, মোস্তফা কামাল, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া, কোষাধ্যক্ষ আলিম খান, যুব বিষয়ক সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান এবং নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মোস্তফা কামাল পাশা মানিক।

সেক্টর কমান্ডার সি আর দত্তের সাথে প্রবাসের মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতার পাশাপাশি বিভিন্ন উৎসবের জন্যে বোনাস চালু এবং চিকিৎসায় নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোয় বক্তারা গভীর কৃতজ্ঞতা জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি। একইসাথে শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য কামনায় পরম করুণাময়ের দয়া প্রার্থনা করা হয় বিজয় দিবস উপলক্ষে ছিমছাম এ অনুষ্ঠান থেকে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের  চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের যে অঙ্গীকার করা হয়েছে তা যেন বাস্তবায়ন হয় সেই অনুরোধ জানান মুক্তিযোদ্ধারা।

বিজয় দিবসের আমেজে সেক্টর কমান্ডারের সাথে সকলেই মধ্যাহ্নভোজে মিলিত হন এবং জয়-বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানেই পুরো কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে।

সামনের জানুয়ারিতে ৯৩ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে সি আর দত্তের। তার এক পুত্র ও এক কন্যা বাস করেন নিউ ইয়র্কে। আরেক কন্যা ফ্লোরিডায় এবং চতুর্থ কন্যা থাকেন কানাডায়। এ চার সন্তানের বাসায় অবসর জীবন কাটাচ্ছেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা। নিউ ইয়র্কে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। তাই সামনের সপ্তাহে তিনি ফ্লোরিডায় যাবেন।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!