একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি নিউ ইয়র্কে

একাত্তরে বাংলাদেশে যে বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে তাকে ‘ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার’ স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি উঠেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2019, 06:31 AM
Updated : 11 Dec 2019, 06:31 AM

এ দাবিতে ২০০১ সালে নিউ ইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত ‘জেনোসাইড-৭১ ফাউন্ডেশনের’ পক্ষ থেকে সোমবার নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে খাবার বাড়ি পার্টি হলে  ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা ও প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।

জাতিসংঘ কর্তৃক ৯ ডিসেম্বরকে গণহত্যা দিবস ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে একাত্তরের ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা সম্ভব নয় বলে মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাসের নৃশংসতার স্বীকৃতি দাবি করা হচ্ছে। এ দাবি আদায়ের জন্য এ সংগঠনের পক্ষ থেকে ৮ দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেন ‘জেনোসাইড-৭১ ফাউন্ডেশনের’ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রদীপ রঞ্জন কর।

এগুলো হচ্ছে- ১. স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা, ২. দেশে-বিদেশে ব্যাপক জনমত তৈরি করা, ৩. উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জাতীয় কমিটি বা সেল গঠন করা, ৪. একাত্তরের গণহত্যার দালিলিক প্রমাণগুলো সংগ্রহের মাধ্যমে একটি ডকুমেন্ট প্রণয়ন করা, ৫. হলোকস্ট ডিনাইল আইনের মতো বাংলাদেশে একটি আইন চালু করতে হবে যাতে গণহত্যা প্রতিষ্ঠিত ফ্যাক্ট নিয়ে কেউ বিতর্ক তুলতে না পারে, ৬. বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সংসদে বাংলাদেশে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য কূটনীতিক পদক্ষেপ নেওয়া, ৭. গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাওয়ার পাশাপাশি এ গণহত্যার মূলনায়কসহ ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী সেনাদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের ব্যবস্থা করা এবং ৮. ‘যেখানে গণহত্যা সেখানেই প্রতিরোধ’ এই নীতি গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনের সাথে কাজ করা।

জাতিসংঘ ঘোষিত গণহত্যা দিবস স্মরণে ‘জেনোসাইড-৭১ ফাউন্ডেশন’ মোমবাতি প্রজ্জলন করে। এসময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলির পর সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের প্রতি সম্মান জানাতে।

এরপর ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের তাৎপর্য ও একাত্তরে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ‘জেনোসাইড-৭১ ফাউন্ডেশনের’ সভাপতি ও নিউ ইয়র্কের রকোফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রদীপ রঞ্জন কর। পরিচালনা করেন সংগঠনের  সাধারণ সম্পাদক মনজুর চৌধুরী ।

এতে অতিথি ছিলেন নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা, জাতিসংঘে বাংলাদেশের উপ স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক মো. আরিফুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট প্রেস সেক্রেটারি নূরএলাহী মিনা।

সাদিয়া ফয়জুননেসা বলেন, “আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য মার্কিন রাজনীতি ও প্রশাসনে লবিং চালাতে হবে প্রবাসীদেরকে। নিজ নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধিরা তাদের দাবিকে উপেক্ষা করতে পারবে না। তবে এজন্য দরকার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। এছাড়া কলেজ-ভার্সিটিতে সভা-সিম্পোজিয়ামের পাশাপাশি কনসার্টও করা যেতে পারে। হলিউডের কোন পরিচালক দিয়ে একাত্তরের গণহত্যার ওপর একটি মুভি করতে পারলে আন্তর্জাতিক জনমত জোরদার করার ক্ষেত্রে বড় একটি কাজ হবে।”

নেতা-কর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্বা রাশেদ আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা কামরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মাসুদুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এম এ করিম জাহাঙ্গির, আইন সম্পাদক শাহ মো. বখতিয়ার, মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মমতাজ শাহনাজ, আওয়ামী লীগ নেতা শরীফ কামরুল হীরা, আকতার হোসেন, ‘শেখ হাসিনা মঞ্চের’ সভাপতি জালাল উদ্দিন জলিল ও সাধারণ সম্পাদক কায়কোবাদ খান, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ জামাল হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক রহিমুজামান সুমন, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি হাসান জিলানী,  নিউ ইয়র্ক মহানগর যুবলীগের সভাপতি খন্দকার জাহিদুল ইসলাম এবং যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি শহিদুল ইসলাম।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!