সিঙ্গাপুরে নির্মাণ-শ্রমিকদের গানের দল ‘মাইগ্রেন্ট ব্যান্ড’

সিঙ্গাপুরে বসবাসরত কিছু বাংলাদেশি তরুণ সঙ্গীতপ্রেমী গড়ে তুলেছেন বাংলা গানের দল ‘মাইগ্রেন্ট ব্যান্ড সিঙ্গাপুর’।

ওমর ফারুকী শিপন, সিঙ্গাপুর থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2019, 07:49 AM
Updated : 3 Dec 2019, 07:50 AM

সিঙ্গাপুরে তাদের পরিচয় অভিবাসী-কর্মী। দেশটির বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করেন তারা৷ কেউ আবাসন নির্মাণ-শ্রমিক, কেউবা নৌযান নির্মাণ কারখানা শিপইয়ার্ডে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। দিন-রাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন তারা৷

কাজের ফাঁকে একটু অবসর পেলেই গান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাদের ধ্যান-জ্ঞানে বাংলা গান৷ গানের প্রতি দরদ ও ভালবাসা আছে বলেই অবসর সময়টুকু অপচয় না করে গানচর্চায় ব্যস্ত থাকেন৷

ভাগ্যবদলের স্বপ্ন ও পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই তারা পাড়ি জমিয়েছিলেন প্রবাসে৷ আর সেই স্বপ্নবাজ ছেলেরা গড়ে তোলেন ‘মাইগ্রেন্ট ব্যান্ড সিঙ্গাপুর’। দলটি ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুরে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। দেশটির জাতীয় কয়েকটি পত্রিকায় তাদের নিয়ে সংবাদও ছাপা হয়েছে।

আমার সঙ্গে ‘মাইগ্রেন্ট ব্যান্ড’ সদস্যদের প্রথম পরিচয় হয় সিঙ্গাপুরে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে৷ সেখানে তাদের গান আর মিউজিক শুনে মুগ্ধ হয়ে যাই৷ সেদিন উপস্থিত দর্শকরাও তাদের গান শুনে প্রশংসা করেন৷ মাইগ্রেন্ট ব্যান্ডে ভোকাল রানা, নীল সাগর ও অন্যরা যখন তাদের দরদী কণ্ঠে পুরনো দিনের গান ধরেন তখন মিউজিকের অতল গভীরে হারিয়ে যাই৷

২০১৫ সালে তারা কয়েকজন যখন গান করেন তখন তাদের কোন দল ছিল না। একসময় গানের মাধ্যমেই একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হন। তারা ভাবলেন নিজেরাই একটি গানের দল তৈরি করবেন৷ গান গাইবেন মনের সুখে৷ তাদের এ গানের দল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হলো সপ্তাহে একদিন গান গেয়ে নিজেদের বিনোদিত করা৷

‘মাইগ্রেন্ট ব্যান্ডের’ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নীল সাগর শাহীন বলেন, “মানসিক প্রশান্তির জন্য আমরা গান করি। একদিন গানের মধ্যে থাকলে সারা সপ্তাহ কাজ করার শক্তি পাওয়া যায়। গানের গলা যেহেতু আছে, ভাবলাম তা নিয়েই কিছু করতে। হয়ে গেল ব্যান্ডদল।”

ব্যান্ডের শুরুতে তাদের বাদ্যযন্ত্রের সমস্যা ছিল। গান প্র্যাকটিস করার মতো রুমও চাই৷ কিন্তু শুরুতে তাদের কিছুই ছিল না। নিজেরা টাকা জমিয়ে ধীরে ধীরে বাদ্যযন্ত্র কিনতে শুরু করেন। এখন অবশ্যই তাদের পর্যাপ্ত বাদ্যযন্ত্র আছে, এমনকি গান প্র্যাকটিস করার মতো রুমও আছে৷

এখন তারা হাই কমিশনের আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ পান৷ তাছাড়া সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও তারা গান করেন৷ সর্বশেষ ‘রাইটার্স ফেস্টিভ্যালে’ তারা গান পরিবেশন করেছেন৷

নীল সাগর শাহীন বলেন, “প্রবাসে যারা সঙ্গীত ভালোবাসে তাদের নিয়ে মাইগ্রেন্ট ব্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে৷ এখানে কেউ প্রফেশনাল সঙ্গীতশিল্পী নন, তবুও সবাই সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসার টানেই একই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে বাংলা গান গাই, এটা আমাদের অন্যরকম ভালোলাগার অনুভূতি দেয়৷”

দলটির প্রধান ভোকাল ও মাইগ্রেন্ট ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠা সদস্য সোহেল রানা বলেন, “বিদেশের মাটিতে বাংলা গান পরিবেশন করতে পেরে সত্যিই আমি খুব আনন্দিত। ভিন্ন ভাষাভাষীর দর্শকদের সামনে যখন বাংলা ভাষার গান পরিবেশন করি তখন নিজের ভেতরটা আনন্দে ভরে যায়৷ সবাইকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে দেখো আমাদের বাংলা ভাষার সঙ্গীতও কোন অংশে কম নয়৷”

‘মাইগ্রেন্ট ব্যান্ডের’ বর্তমান লাইনআপ হলো- ভোকাল: সোহেল রানা, তৌহিদা রহমান টিনা, বজলুর রহমান, তোর্সা দাশ, আলমাস উদ্দিন, আকাশ আলীম, জুলফিকার আলী, তুষার আহমেদ, নীল সাগর, এস কে শাহীন, জমির উদ্দিন, রুবেল মাহমুদম ও জাকির মির্জা।

বাদ্যযন্ত্রে রয়েছেন- কিবোর্ড: নীল সাগর শাহীন, অক্টাপ্যাড: উজ্জ্বল কুমার ও এম ডি তারেক, বাঁশি: রবিউল ইসলাম, তবলা: প্রিন্স সেবক ও সজীব সাহা, হারমোনিয়াম: বজলুর রহমান ও মনির হোসেন, গিটার: আলমগীর হোসেন ও শহিদুল ইসলাম ও মুন্না মাসুদ, কিটার: জমির উদ্দিন, ঢোল: মোশারফ হোসাইন ও সজীব সাহা, কোরিওগ্রাফার: শরীফ মজুমদার, স্টুডিও কো অর্ডিনেটর ও সম্পাদনায়: মঞ্জুরুল ইসলাম।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!