জাতিসংঘে অর্থসচিব: উন্নয়নশীল হতে থাকা দেশগুলোর অর্থসংস্থানে প্রবেশ সহজ করুন

উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোর টেকসই উত্তরণ ও এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থানে প্রবেশাধিকার অবারিত ও সহজ করার ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2019, 02:56 PM
Updated : 14 Nov 2019, 02:56 PM

স্থানীয় সময় বুধবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণকালীন অর্থসংস্থানে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ দলের সভায় একথা বলেন তিনি।

জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ, ভূ-বেষ্টিত স্বল্পোন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর উচ্চ প্রতিনিধির কার্যালয় এবং উন্নয়ন নীতি কমিটি (সিডিপি) আয়োজিত দুইদিনব্যাপী এ সভার সমাপনীতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বক্তব্য দেন।

এসময় রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ অভিমুখে বাংলাদেশের ‘অদম্য অগ্রযাত্রা’-র নানা তথ্য-চিত্র তুলে ধরেন তিনি। উঠে আসে প্রথমবারের মতো এলডিসি থেকে বিপুল মার্জিন নিয়ে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন; দারিদ্র্য ও অতি-দারিদ্র্য হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হার হ্রাস, বয়স্ক শিক্ষাসহ শিক্ষার হার বৃদ্ধি, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, জিডিপি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি; জিডিপিতে শিল্প, কৃষি ও সেবা খাতের অবদান, ব্যস্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা; বাজেটের মূলভাগে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ-বিষয়ক কর্মসূচি অন্তর্ভূক্তি, দেশব্যাপী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ২৮টি আইটি পার্ক স্থাপনের মাধ্যমে ১০ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, লিঙ্গ সমতা অর্জন, নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন এবং ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ এর উন্নয়ন এজেন্ডার মতো বিষয়গুলো। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য যে ‘উদার ও অনুকূল পরিবেশ’ বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে তাও তুলে ধরেন তিনি।

অর্থ সচিব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সফলতার সাথে এমডিজি বাস্তবায়ন করেছে, আর এসডিজি বাস্তবায়নেও শেখ হাসিনা সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।“

তবে টেকসই উত্তরণ নিশ্চিত ও সফলভাবে এসডিজি বাস্তবায়ন- উভয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে তা উল্লেখ করে তিনি।

জলবায়ু পরিবর্তন ও সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সমস্যাকে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য একটি বড় হুমকি বলে মন্তব্য করেন অর্থ সচিব। বাংলাদেশের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বার্ষিক অতিরিক্ত ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থসংস্থান প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন অর্থ সচিব।

উত্তরণকালীন সময়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পদক্ষেপসমূহ (আইএসএমএস), প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন সহযোগিতা (ওডিএ) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রাখার জন্য উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সভায় আরও অংশ নেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত মাসুদ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতা, অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা বিভিন্ন বিষয় সংক্ষেপে তুলে ধরেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এর ফলে শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, সার্বিকভাবে নিরাপত্তা, পরিবেশ ও সামাজিক বিন্যাসে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

আজকের এই বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের সভায় ‘জলবায়ু অর্থায়নে অধিক প্রবেশাধিকার’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনার আওতায় বাংলাদেশের পাশাপাশি ভুটান ও সলোমন আইল্যান্ড উত্তরণকালীন অর্থসংস্থান বিষয়ক কেস স্টাডি তুলে ধরেন।

প্যানেল আলোচনার মডারেটর ছিলেন বাংলাদেশের সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ এর পরিচালক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

এসভার উদ্বোধনী পর্বে ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার বক্তব্য দেন জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়াবলী বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল লিউ জেনমিন, জাতিসংঘে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সুসান এক্কি, জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ, ভূ-বেষ্টিত স্বল্পোন্নত দেশ ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রসমূহের উচ্চ প্রতিনিধির কার্যালয়ের পরিচালক হেইদি ফক্স এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের টেকসই উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক মিশেল গাইলেজ্- ম্যাকডোননোফ।

উন্নয়ন দেশ অভিমূখে উত্তরণ বিষয়ক খসড়া রিপোর্ট উপস্থাপন করেন সিডিপি এর সেক্রেটারি রোনান্ড মোলেরাস ও ফাইনান্সিং ফর সাসটেইন্যাবল ডেভলপমেন্ট অফিসের চিফ পলিসি অ্যানালিস্ট সারি স্পাইজেল।

প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash@bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন!